Share it

সুদীপ্ত চক্রবর্তী: প্রকৃতির অমূল্য সম্পদ জীববৈচিত্র্য। পৃথিবীর প্রতিটি প্রাণী ও উদ্ভিদ এক অনন্য বাস্তুতন্ত্রের অংশ। এই সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্য রক্ষায় প্রতি বছর ২২ মে পালিত হয় আন্তর্জাতিক জীববৈচিত্র্য দিবস। জীববৈচিত্র্য শুধু প্রকৃতির সৌন্দর্য নয়, এটি আমাদের খাদ্য, ওষুধ ও বেঁচে থাকার ভিত্তি। প্রতিটি প্রজাতি বাস্তুতন্ত্রের এক অপরিহার্য সূত্র। অবাধ শিল্পায়ন, বন ধ্বংস ও দূষণের ফলে আজ হুমকির মুখে বিশ্বের ১০ লক্ষ প্রজাতি। প্রতি ঘণ্টায় বিলুপ্ত হচ্ছে ৩ প্রজাতি! ভারসাম্য লঙ্ঘিত হচ্ছে প্রকৃতির। মিষ্টি জলের সঙ্কুলান, কৃষিজমির ক্রমবন্ধ্যাত্ব, বনভূমি ও সবুজখণ্ডের হ্রাস, এমনকি বাতাস, মাটি ও জলের দূষণ বৃদ্ধি ক্রমশ স্তব্ধ করে দিচ্ছে প্রবহমানতাকে। ফলে ভয়ঙ্কর অস্তিত্ব সংকটে পড়তে চলেছে মানবসভ্যতা।

বৃহস্পতিবার ২২ মে বিশ্বজুড়ে পালিত হল আন্তর্জাতিক জীববৈচিত্র্য দিবস। এবছর আন্তর্জাতিক জীববৈচিত্র্য দিবসের মূল ভাবনা, “প্রকৃতির সাথে সমন্বয় ও সুস্থায়ী উন্নয়ন”। এই বিশেষ দিনটি উদযাপনে বিশ্ব বাংলা কনভেনশন সেন্টারে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল পশ্চিমবঙ্গ জীববৈচিত্র্য পর্ষদ। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের পরিবেশ দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, “দেশে মোট ৪৭টি জীববৈচিত্র্য হেরিটেজ সাইট রয়েছে। তার মধ্যে ১০টি রয়েছে বাংলায়। সেগুলিকে আরও বেশি করে প্রচারের আলোয় নিয়ে আসতে হবে। সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে হবে জীববৈচিত্র্য সম্পর্কে। স্কুলগুলিতে আরও বেশি করে প্রজাপতি বাগান তৈরি করতে হবে।”

ওই দিন পশ্চিমবঙ্গ জীববৈচিত্র্য পর্ষদের চেয়ারম্যান হিমাদ্রিশেখর দেবনাথ জীববৈচিত্র্য রক্ষায় কী কী উদ্যোগ নিয়েছে পর্ষদ তা জানান। পর্ষদ চেয়ারম্যান বলেন, “বাংলায় খুব তাড়াতাড়ি আরও তিনটি হেরিটেজ সাইট ঘোষণা হবে। এছাড়াও আমরা ৮৪টি স্কুলে প্রজাপতি বাগান তৈরি করেছি। স্কুলে কিচেন গার্ডেন হয়েছে। মৎস্যদপ্তরের সঙ্গে অভয় পুকুর তৈরি হয়েছে। যেখানে হারিয়ে যাওয়া মাছের প্রজাতির চাষ হচ্ছে। এছাড়াও ওষুধ তৈরি হয় এমন গাছেরও সংরক্ষণ হচ্ছে। একটা সময় প্রায় পাঁচ হাজার প্রজাতির চাল পাওয়া যেত। তার সংখ্যা এখন কমে ৩০০ থেকে ৪০০-তে এসে দাঁড়িয়েছে। শুধু চাল নয় বেগুন, পেঁয়াজ সহ একাধিক সবজির নানা প্রজাতিও বিলুপ্ত হওয়ার পথে। শীঘ্রই বিভিন্ন প্রজাতির চালের একটি বিক্রয়কেন্দ্র শহরে খোলা হবে।”

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত মুখ্যসচিব রোশনি সেন, দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র সহ অন্যান্য আধিকারিকরা। ছিলেন বিশিষ্ট সাহিত্যিক স্বপ্নময় চক্রবর্তী। তিনি নিজের অভিজ্ঞতার কথা ভাগ করে নেন আমন্ত্রিত অতিথিদের সঙ্গে। তিনি পরিবেশের বিষয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির কথা বলেন। দর্শকাসনে বিশিষ্টদের পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন জেলার ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষক-শিক্ষিকারাও। অনুষ্ঠানে রাজ্যের ১০টি হেরিটেজ সাইট সম্পর্কে নির্মিত একটি তথ্যচিত্র দেখানো হয়।

Share it