Share it

শ্রীধর মিত্র : আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে কেন্দ্রের শাসক বিজেপি-কে ক্ষমতাচ্যুত করতে বিরোধী ২৬টি রাজনৈতিক দল জাতীয় কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস, সিপিএম, আম আদমি পার্টি, সিপিআই সহ অন্যান্য দলগুলি প্রথমে একযোগ হয়ে ধুমধাম করে বেশ কয়েকটি সভা করেছিল পাটনা, মুম্বই ও দিল্লিতে। মূল আহ্বায়ক বিহারের নীতিশ কুমার কলকাতায় এসে তৃণমূল কংগ্রেসের সুপ্রিমো তথা বঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে গিয়েছিলেন। এবং সমাজবাদী পার্টির অখিলেশ যাদবও কালীঘাটে এসে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সেরে গিয়েছিলেন আলোচনা। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী ও অন্যান্য কয়েকজন প্রদেশ নেতাদের আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে শাসক তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে রাজনৈতিক আসন রফা ও একসঙ্গে জোট বেঁধে বিজেপি-র বিরুদ্ধে বঙ্গে লড়াই না পসন্দ। অথচ জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম সারির নেতারা আগ্রহ দেখালেও দ্বন্দ্বে পড়েছেন। বঙ্গে ৪২টি লোকসভা আসনে বিগত ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে মুর্শিদাবাদের ও মালদা দক্ষিণের আসন দুটিতে কংগ্রেস জয় লাভ করেছিল মাত্র। তৃণমূল সুপ্রিমো ওই দুটি আসন ছাড়তে চাইলেও আরও (অনন্ত ৮-১০টি) আসনে লড়তে চায় তারা। তৃণমূল সুপ্রিমো আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন তাঁরা একাই ৪২টি আসনে লড়াই করবেন বিজেপি-র বিরুদ্ধে। সিপিএম-এর সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে আসন সমঝোতা করে লড়তে চায় কংগ্রেস।

উল্লেখ্য, সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনে (২০১৯) কংগ্রেস-সিপিএম সহ বামদল গুলি একটিও আসনে জয়লাভ করতে পারেনি। তাই যতদিন যাচ্ছে ‘ইন্ডিয়া জোটের’ আসন সমঝোতা নিয়ে দ্বন্দ্ব ও দাদাগিরি চলছেই। ইতিমধ্যেই দিল্লি, পাঞ্জাব ও উত্তরপ্রদেশে ক্ষমতাশীল রাজনৈতিক দলগুলি একলা চলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আবার রাজস্থান, কর্ণাটক, তেলাঙ্গানার মতো রাজ্য থেকে খসড়া প্রার্থী তালিকা পাঠিয়ে দিয়েছে হাইকমান্ডের কাছে। যে রাজ্যে ইন্ডিয়ার কোনও শরিক দলের সঙ্গে কংগ্রেস আসন সমঝোতা করতে চাইছে সেখানে নিজেরা তাদের ভাগের আসনগুলি পড়েছে, সেগুলির খসড়া প্রার্থী তালিকা তৈরি করে নির্বাচন কমিটি দিল্লিতে পাঠিয়ে দিয়েছে। চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা সর্বভারতীয় কংগ্রেস কমিটি ঘোষণা করবে। সেখানে বঙ্গের নির্বাচনী কমিটি এখনও দুসপ্তাহ কেটে গেলেও কোনও বৈঠকই করতে পারেনি। এদিকে আগামী মার্চ মাসের মাঝে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচনের সময়সূচি ঘোষণা করতে চলেছে।

বঙ্গে জাতীয় কংগ্রেস ও তৃণমূল কংগ্রেসের মধ্যে আসন সমঝোতা না হওয়ার একাধিক কারণ তৃণমূল সুপ্রিমো উল্লেখ করেছেন। ‘ইন্ডিয়া জোটে’ সিপিএম-এর ভূমিকা, বঙ্গে প্রদেশ সভাপতি সাংসদ অধীর চৌধুরীর তৃণমূল বিরোধী ভূমিকা এর জন্য দায়ী বলে তৃণমূল নেতৃত্বের অভিযোগ। আগেই তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বঙ্গের ৪২টি আসনে একলা চলার জন্য দলীয় কর্মী সমর্থকদের সবরকম প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। অখিল ভারতীয় কংগ্রেসের মনোভাব নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস অসন্তুষ্ট হলেও কংগ্রেসের হাইকমান্ড বরফ গলাতে শেষ চেষ্টা চালাবে বলে মনে করছে বঙ্গে প্রদেশ কংগ্রেস। দিল্লিতে এআইসিসি প্রবীণ নেতার কথায়, সপা, আপ, আরজেডি, এনসিপি (শরদ পাওয়ার), ডিএমকে, শিবসেনার উদ্ভব গোষ্ঠী ধাপে ধাপে আসন সমঝোতা হয়ে গেলেও বঙ্গের তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে দিল্লির নেতৃত্বরা। বঙ্গ কংগ্রেস ছটি লোকসভা আসন চাইছে যে কোনওভাবে। রাহুল গান্ধি সর্বভারতীয় সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গেরা একান্ত যদি আসন সমঝোতা না হয় তখনই উভয় দলই বিকল্প পথে হাঁটবে। তৃণমূল সুপ্রিমো আগেই বলেছিলেন নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশ পাওয়ার পর পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এখন শুধুই দেখার ‘ইন্ডিয়া জোটের’ কী অবস্থা হয়।

Share it