Share it

নিউজ ওয়েভ ইন্ডিয়া : রাজ্যের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও উদ্যানপালন দপ্তর এবং বেঙ্গল চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের উদ্যোগে সম্প্রতি নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে একটি মেলার আয়োজন করা হয়। ‘হর্টি ফুড ফেস্টিভ্যাল ২০২৪’ শীর্ষক এই মেলায় বিভিন্ন জেলার কৃষি ও উদ্যানপালনজাত সামগ্রী, ঘরোয়া পরিবেশে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ দ্রব্যের শিল্প প্রদর্শনী এবং উদ্যানপালন সহ বাংলার হেরিটেজ বিষয়ক বই বিক্রির স্টল দেওয়া হয়। মেলা চলে ১৭ থেকে ১৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত, বেলা ১২টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত।

মেলায় প্রায় ৭৫টি স্টল দেওয়া হয়। সেগুলির মধ্যে ছিল কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে ন্যাশনাল সিডস কর্পোরেশন লিমিটেড, ভারতীয় টি বোর্ড, কৃষি ও গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়নের ব্যাঙ্ক, তেমনই আবার পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের বিশ্ববাংলা, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও জৈব প্রযুক্তি দপ্তর, পশ্চিমবঙ্গ সিডস কর্পোরেশন লিমিটেড, পশ্চিমবঙ্গ ক্রেতা সুরক্ষা দপ্তরের স্টলও ছিল। শুধু তাইই নয়, সরকারি ব্যবস্থাপনায় এই মেলায় জায়গা পায় প্যান সিডস প্রাইভেট লিমিটেড, ‘অর্চিভ’ (বায়ো কল্যাণ নার্সারি প্রাইভেট লিমিটেড, ট্যানধান পলিপ্লাস্ট প্রাইভেট লিমিটেডের মতো বেশ কিছু নিখাদ বেসরকারি কর্পোরেট বাণিজ্যিক সংস্থাও।

খাদ্য প্রক্রিয়াকরণের মধ্যে হাওড়া জেলার একটি ফুড প্রোডাকশনের তরফে ঘরোয়া পরিবেশে তৈরি চকলেট, কেক, বিভিন্ন ধরনের স্ন্যাকস ইত্যাদি। এছাড়া হাওড়া জেলার স্টলে প্রদর্শিত হওয় বনসাই সহ একাধিক উদ্যানপালন বিষয়ে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও তথ্য। মালদা জেলার স্টলে দেখা মেলে আমের বিভিন্ন সিরাপ, আচার ইত্যাদি। দক্ষিণ ২৪ পরগনা স্টলে সুন্দরবনের খাঁটি বনফুল মধু। বাঁকুড়ার গুড় পাওডার ও খাঁটি মধু, আম পানা সহ একাধিক খাদ্য দ্রব্যের সম্ভার নিয়ে হাজির ছিল বিভিন্ন জেলার একাধিক স্টল।

১৭ ফেব্রুয়ারি বেলা প্রায় সাড়ে ১২টা নাগাদ এই মেলার উদ্বোধন হয়। উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও উদ্যানপালন দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী শ্রী অরূপ রায়, পশ্চিমবঙ্গ পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী শ্রী প্রদীপ কুমার মজুমদার মহাশয়, পশ্চিমবঙ্গ খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও উদ্যানপালন দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত অতিরিক্ত মুখ্যসচিব ড. সুব্রত গুপ্ত, বেঙ্গল চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি শ্রী গৌতম রায় সব রাজ্য সরকারের আমলারা। এই দিন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর আগত দর্শকদের জন্য হাওড়া জেলার উদ্যানপালন দপ্তরের উপ অধিকর্তা ড. সমরেন্দ্রনাথ খাঁড়া মহাশয়ের সঞ্চালনায় জনপ্রিয় দর্শক কুইজ অনুষ্ঠিত হয়। এই অনুষ্ঠানে যোগ দেন রাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি বিষয়ক পড়ুয়ারা। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে ছিল মেলায় আসা সবার জন্য কুইজের অনুষ্ঠান। উপস্থিত ছিলেন জেলা থেকে আগত অগণিত কৃষি কর্মীরা।

মেলার দ্বিতীয় দিন ১৮ ফেব্রুয়ারি বেলা ১২টা থেকে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে কৃষি ও উদ্যানপালন বিষয়ক মনোজ্ঞ আলোচনা ও সন্ধেয় কিছু সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান রাখা হয়। মেলার শেষদিন ভিড় ছিল চোখে পড়ার মত। এদিন হাওড়া জেলার উদ্যানপালন দপ্তরের উপ অধিকর্তা ড. সমরেন্দ্রনাথ খাঁড়া মহাশয়ের সঞ্চালনায় প্রায় বেলা ১টা থেকে শুরু হয় জেলার কিছু সফল কৃষকদের সাফল্যের কাহিনি তাঁদের কৃষিজ ফসল উৎপাদনের ডিজিট্যাল প্রদর্শনী।

এরপর নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী, বেলা প্রায় সাড়ে তিনটে থেকে পাঁচটা পর্যন্ত দপ্তরের বিভিন্ন কৃষি আধিকারিকরা তাঁদের কাজের অভিজ্ঞতা সবার সঙ্গে ভাগ করে নেন। এইদিন পশ্চিমবঙ্গ খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও উদ্যানপালন দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত অতিরিক্ত মুখ্যসচিব ড. সুব্রত গুপ্ত মহাশয়, ও পশ্চিমবঙ্গ খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও উদ্যানপালন দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক শ্রীযুক্ত দীপ্তেন্দু বেরা মহাশয় দপ্তরের একটি পত্রিকা প্রকাশ করে সেই পত্রিকা জেলার অন্যান্য আধিকারিকদের আরও সমৃদ্ধ করার আহ্বান জানান। তারপর একেবারে শেষ লগ্নে চলে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান। তিনদিন ব্যাপী হওয়া এই মেলায় প্রদর্শনী বিভাগের তৃতীয়, দ্বিতীয় ও প্রথম (চ্যাম্পিয়ান) জেলাগুলোকে পুরস্কৃত করা হয়।

মেলার সমাপ্তি ভাষণে পশ্চিমবঙ্গ খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও উদ্যানপালন দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত অতিরিক্ত মুখ্যসচিব ড. সুব্রত গুপ্ত বলেন, “কলকাতায় অনেক মেলা হয়, তার মধ্যে এটা অন্যতম। মেলা শেষ মানেই বাড়ি চলে গেলাম তাইই নয়, এখান থেকে নতুন করে আরও কিছু কাজ করা যেন শুরু হল। আমার অন্যান্য অফিসিয়ালদের আমি অনুরোধ করব যদি রাজ্যের অন্যান্য জায়গা যেখানে সেভাবে মেলা হয় না, সেখানেও ছোট করেও এই মেলার আয়োজন করা যায়। এরকম এতো বড় করেই যে করতে হবে তার কোনও মানে নেই।”

Share it