শ্রীধর মিত্র : অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচন দোরগোড়ায়। তার আগেই কেন্দ্রীয় বাহিনী পৌঁছবে পশ্চিমবঙ্গে (West Bengal)। মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে ১০০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় সশস্ত্র বাহিনী (Central Force) আসছে বলে সূত্র মারফৎ জানা গেছে। আবার ওই মাসের মাঝামাঝি আরও ৫০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী আসবে। সম্ভবত স্বাধীনতার পরে এই প্রথম নির্বাচন ঘোষণার আগেই বঙ্গে এসে সাধারণ মানুষকে আশ্বস্ত করতে সাহায্য-সহযোগিতা করবে বলে মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতর মারফৎ জানা যাচ্ছে।
কেন্দ্রীয় নির্বাচনী আধিকারিকদের ফুল বেঞ্চ আসছে ৩ মার্চ। তার আগেই বাংলায় এসে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। সংশ্লিষ্ট মহলের আশঙ্কা এর ফলে মানুষের মধ্যে ভীতির সঞ্চার না হয় ভোটের সময়। তবে সবটাই নির্ভর করছে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের (Election Commission of India) উপর। তাদের ফুল বেঞ্চ সর্বস্তরের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে ভোটের চূড়ান্ত দিন ঘোষণা করবে বলে সূত্র মারফৎ জানা গেছে। একদিকে যেমন অনেক আগে থেকে কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠানো হবে অন্যদিকে এখনও পর্যন্ত বঙ্গের জন্যে ৯২০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় সশন্ত্র বাহিনীর জন্য লিখিতভাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে আবেদন করেছে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন। যেটা জম্মু-কাশ্মীরের থেকে অনেকটাই বেশি। ৩০০ কোম্পানির ফারাক ! স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি বাংলার পরিস্থিতি এতোই খারাপ !
বঙ্গের আইন-শৃঙ্খলা অবস্থা জম্মু-কাশ্মীরের থেকেও খারাপ বলে ধারণা রাজনৈতিক মহলের। বিরোধী রাজনৈতিক দলের অভিযোগ সন্দেশখালি, কোচবিহার, আমতা সহ অন্যান্য জায়গায় পুলিশ অপদার্থ ও শাসকদলের দলদাসে পরিনত হয়েছে। তবে শুধু নির্বাচনের সময় ছাড়াও স্ট্রং রুম পাহারার জন্য থাকবে ২২ কোম্পানি কেন্দ্রীয় সশস্ত্র বাহিনী। গত লোকসভা অর্থাৎ সপ্তদশ নির্বাচনে ২০১৯-এ বঙ্গে ৭৪৯ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী এসেছিল। ২০২১ বিধানসভা নির্বচন শান্তিপূর্ণ ও অবাধ করার জন্য ১০৮০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী এসেছিল বাংলায়। তা সত্ত্বেও রাজনৈতিক সংঘর্ষ, হানাহানি, দলের অন্তর্দ্বন্দ্ব, প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছিল। এবারে ইতিমধ্যেই জাতীয় নির্বাচন কমিশন বাংলার জন্য ৯২০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনীর জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে লিখিতভাবে জানিয়েছে। তাহলে এতো বাহিনী আসার পরেও সাধারণ গ্রাম বাংলার মানুষ অবাধ শান্তিপূর্ণ ও নিজের ভোট নিজে দিতে পারবেন তো ? রাজনৈতিক হানাহানি, দলীয় অন্তর্দ্বন্দ্ব বন্ধ হবে কি ? রাজনৈতিক সংঘর্ষে প্রাণহানি হবে নাতো ?
স্বাধীনতার পর এই প্রথম অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচনের (Lok Sabha Election 2024) প্রাক্কাল্যে ১৫০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী আসতে চলেছে। মার্চ মাসের শুরুতেই ১০০ কোম্পানি এবং ৭ তারিখের মধ্যেই আরও ৫০ কোম্পানি বাহিনী এসে পৌঁছবে। যা কখনও এই বাংলায় হয়নি। এখনও অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচনের নির্ঘণ্ট প্রকাশ হয়নি। বিরোধীরা বলছে বঙ্গে পুলিশ, শাসকদলের দলদাসে পরিনত হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বাহিনীকে যেন যথাযথ সদ্ব্যবহার করা হয়। কাশ্মীরও বঙ্গের থেকে শান্ত বলে তাদের দাবি।
এদিকে শাসক তৃণমূল কংগ্রেস জানিয়েছে, এটা নতুন কিছু নয়। এর আগেও লোকসভা-বিধানসভা নির্বাচনে হাজার কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোট পরিচালনা করা হয়েছে। এবং বিজেপি গোহারা হেরেছে। ইডি-সিবিআই পাঠিয়েও বিশেষ লাভ হয়নি। তাই এবার আগে ভাগেই কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হচ্ছে। এতে শাসকদলের আরও কনফিডেন্স বাড়বে। এখন দেখা যাক কী হয়।