সৈকত কুমার বসু, কলকাতা: যোগ শব্দটির মধ্যেই নিহিত রয়েছে একতার বার্তা। একতা – নিজের সঙ্গে। নিজস্বতার সঙ্গে। নিজের মতো করেই, প্রকৃতির সঙ্গে। ভারতীয় সংস্কৃতির ইতিহাসে এর এক অনন্য নজির স্থাপনা হয় সভ্যতার বিকাশ লগ্ন থেকেই। অনাদির সঙ্গে এই যোগ সভ্যতার আদি থেকেই ভারতবর্ষকে বিশ্ব সভ্যতার মানচিত্রে এক অনন্য ঔজ্জ্বল্য প্রদান করেছে।

পুরোনো সময়ের পাণ্ডুলিপি, পটচিত্র, চর্মলিপি, শিলালিপি, ভূর্জপত্র প্রভৃতিতে ও আরও বিস্তৃত ও বিস্তারিত গবেষণায় বৈদিক যুগ থেকে ভারতীয় সভ্যতায় যোগের অভ্যাস প্রমাণিত ও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

প্রকৃতির সঙ্গে যোগের মাধ্যমে শুধুমাত্র বিভিন্ন রোগ থেকে আরোগ্য লাভই নয়, প্রাণপ্রাচুর্য্য ও জীবনীশক্তি রক্ষার প্রয়াস প্রাচীন সাধক, ঋষি, সন্তদের বরাবরই যোগচর্চায় উদ্বুদ্ধ করেছে। শুধুমাত্রই শরীরের বিভিন্ন ভঙ্গিমা পরিবর্তনের মাধ্যমে ও প্রতিনিয়ত বয়ে চলা শ্বাসপ্রশ্বাসের ছন্দ পরিমার্জনের দ্বারা নিজেকে সুস্থ সবল রাখার এই সহজিয়া পদ্ধতিতে আকৃষ্ট হন আপামর জনসাধারণ। যোগ যে শুধু দেহের রোগই সারায়, তা তো না। নিয়মিত যোগাভ্যাস করলে সুস্থ থাকে মন ও। আসন ও প্রাণায়াম এর এই অনবদ্য ক্ষমতার সত্যতা আজ বিভিন্ন দেশের গবেষণায় সুপ্রতিষ্ঠিত।

দূষণ জর্জরিত এই বিশ্বের স্বাস্থ্য রক্ষার চেয়ে সহজ ও নিরাপদ পন্থা আর দ্বিতীয়টি নেই। পৃথিবীব্যাপী মানুষের জীবন ও প্রাণ রক্ষার তাগিদে নিখরচায় এই সুস্থতার নিদান আজ বিশ্বের স্বীকৃতি পেয়েছে। ২০১৪ সালের ১১ই ডিসেম্বর এক আলোচনায় ভারতের একান্ত নিজস্ব যোগ অভ্যাসকে বিশ্বজনীন এর সম্মান প্রদান করা হয়েছে। সেই থেকে জুন মাসের ২১তারিখটি সারা বিশ্বে আন্তর্জাতিক যোগ দিবস হিসেবে পালন করা হয়ে আসছে। সারা বিশ্বে ভারতীয় সভ্যতা সংস্কৃতির মুলমন্ত্রটি আজ সর্বজন স্বীকৃতি পেয়েছে। আপামর জনসাধারণ আজ বুঝেছে যে বাহুলের জিম ক্লাব এর উঠতি ফ্যাশন নয়, শরীর ও মনের সর্বাঙ্গীন সুস্থতার চাবিকাঠিটি নিহিত আছে সম্যক একাত্মতার সুরে।