ছবি সৌজন্য সৈকত কুমার বসু
Share it

সৈকত কুমার বসু, কলকাতা: আমাদের বন্য হাতির ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যাকে শিকার এবং মানব শোষণ থেকে রক্ষা করতে হবে। চীন এবং দক্ষিণ এশিয়া ও আফ্রিকার কিচ্ছু অংশ জুড়ে আবাসস্থল বিভাজন, হাতি -মানুষের দ্বন্দ্ব, শিকার এবং অবৈধ বন্যপ্রাণীর ব্যবসার কারণে এশিয়া ওর আফ্রিকা উভয় মহাদেশে হাতির প্রজাতির বিপন্ন হচ্ছে। হাতির জনসংখ্যা স্থির গতিতে হ্রাস পাচ্ছে এবং বর্তমানে এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন বিশেষ বাস্তুতন্ত্রের পকেট এবং বিচ্ছিন্ন কোণে সীমাবদ্ধ। হাতিদের বিলুপ্তির পথে তাদের যাত্রা থেকে বাঁচাতে একটি ব্যাপক আন্তর্জাতিক সংরক্ষণ নীতি ও বাস্তুবায়ন প্রয়োজন। সারা বিশ্বে হাতির দাঁত নিষিদ্ধ করা সত্ত্বেও, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া এবং সাব সাহারান আফ্রিকায় হাতির আবাসস্থল জুড়ে নিরলসভাবে চোরাচালান অব্যাহত রয়েছে।

হাতির দাঁতের তৈরি গৃহসজ্জা সামগ্রী- ছবি সৌজন্য সৈকত কুমার বসু
হাতির দাঁতের তৈরি গৃহসজ্জা সামগ্রী- ছবি সৌজন্য সৈকত কুমার বসু

এই প্রসঙ্গে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য বন্যপ্রাণী বা বন্য সম্পদ হিসেবে হাতি আমাদের দেশগুলির অন্যতম বৈশিষ্ট কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সাথেই লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে বিশ্বব্যাপী হাতির দেহাংশ পাচারের নাখ্যাতজনক ঘটনা ঘটে চলেছে যে ভাবেই হিতির চোরাশিকার ঘটেছে ভারতের বিভিন্ন বনাঞ্চলেএবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে এবং চিনার কিচ্ছু অঞ্চলে। আফ্রিকার কথা তো এর সাথে না যোগ করলেই নয় যা হাতির বাসস্থান যে সমস্ত মহাদেশে রয়েছে অর্থাৎ আফ্রিকা এবং এশিয়া জুড়ে হাতির নিধনযজ্ঞ, কিন্তু বিভিন্ন ভাবেই রয়েছে। এর প্রধান কারণ হিসেবে বলা যেতে পারে যে অত্যন্ত লোভ, এবং আগেও যেটা উল্লেখ করা হয়েছে যে চীন এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া-র যে সমস্ত অঞ্চলে বিপুল পরিমাণ বন্যপ্রাণীর কালো বাজারের ব্যবস্থা রয়েছে। এই কালো বাজার, বিশেষভাবেই ক্ষমতা সম্পন্ন রাজনৈতিকদের দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে এবং অসাধু ব্যবসায়ীদের সাথে যুক্ত। এই অসাধু যজ্ঞের ফলে উন্নত মানের অস্ত্র শস্ত্র পৌঁছেই যাচ্ছে প্রত্যন্ত আফ্রিকা এবং এশিয়ার অঞ্চলগুলির সাধারণ প্রান্তিক মানুষদের হাতে যারা জঙ্গলে বা জঙ্গলের আশেপাশেই বসবাস করেন- সমস্ত প্রান্তিক চাষি, এই সমস্ত প্রান্তিক শ্রমজীবি মানুষদের কাছে যাদের কাছে অর্থ সংগ্রহ করার উপায়ে অত্যন্ত সীমিত। এবং সারা বছর সংসার চালানটাই ও অর্থের যোগান দেওয়াটাই একটা কঠিন যুদ্ধ। এই বেঁচে থাকার যুদ্ধর সুযোগ নিচ্ছে চোরা চালানকারীরা এবং বিশেষভাবেই হাতির ক্ষেত্রে, হাতির সংরক্ষণের ক্ষেত্রে এই বিষয়টিতে নজর না দেওয়া আমাদের অত্যন্ত ভুল একটি পদক্ষেপ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। বিশ্বজুড়ে এবং ভারতেও, হাতির সংখ্যা যে ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে তার একটি বড় কারণ কিন্তু এই চোরাচালানকারীদের দৌরাত্ম্য এবং এদের বিপুল যোগাযোগ তৈরী রয়েছে, এবং আধুনিক বৈদ্যুতিক ও আধুনিক যন্ত্রাদি রয়েছে যা কিনা আমাদের বনবিভাগের সাধারণ কর্মচারীদের কাছেই, রেঞ্জারদের কাছে এই সমস্ত উন্নত মানের এই যন্ত্রাদি নেই – যেমন জিপিএস ট্র্যাকার, নাইট ভিশন ডিভাইস।

হাতির দাঁতের তৈরি গৃহসজ্জা সামগ্রী- ছবি সৌজন্য সৈকত কুমার বসু
হাতির দাঁতের তৈরি গৃহসজ্জা সামগ্রী- ছবি সৌজন্য সৈকত কুমার বসু

তার ফলে যেটা হচ্ছে, এরা গভীর জঙ্গলে কম সুযোগে পৌঁছেই যাচ্ছে ও এদের ইচ্ছা মতন গ্রামের দরিদ্র এই প্রান্তিক মানুষ অসৎ ব্যবহার করে এই হাতি শিকার এর কাজের নিযুক্ত করছে এই হাতির দাঁত, হাতির হাড়, হাতির শরীরের চামড়ার ওপর বিভিন্ন অঙ্গবিশেষ, এবং সমস্ত কিছু বিদেশে পাচার হচ্ছেই। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক দেশগুলিতে – যেগুলি আমাদের ভারতের তিনটি সীমারেখার কাছে- অর্থাৎ নেপাল, তিব্বত একদিকে, বর্মা একদিকে এবং বাংলাদেশ একদিকে। এদের প্রত্যেকটা যাত্রাপথ কিন্তু দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার অথবা চীনের বন্যপ্রাণীর যে সমস্থ কালোবাজার রয়েছে সেখানে, কারণ এগুলো বিপুল পরিমাণে, বিপুল টাকায় হাতবদল হছে এবং বিপুল অর্থ হাতির নিধন যজ্ঞের এক অন্যতম কারিগর হয়ে উঠেছে এবং হাতির নিধন যজ্ঞের অর্থ এই কালোবাজারির মাধ্যমে, হুন্ডির মাধ্যমে, বিশ্বের সন্ত্রাসবাদীদের মধ্যে, একটি বিশেষ অংশের মধ্যে সন্ত্রাসবাদীদের কাজ সক্রিয়ভাবেই চালিয়ে যাওয়ার জন্যে তাদেরকে অস্ত্র হিসেবে এই হস্তিনিধন যজ্ঞের অর্থ দেওয়া হচ্ছে। শুধুমাত্র হাতিই নয়, গন্ডার, লেপার্ড, বাঘ ও বিশিষ্ট মেগাফাওনা বলতে যা বুঝি, তাদের সবার ক্ষেত্রই এই ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটে চলেছে।

হাতির দাঁতের তৈরি গৃহসজ্জা সামগ্রী- ছবি সৌজন্য সৈকত কুমার বসু
হাতির দাঁতের তৈরি গৃহসজ্জা সামগ্রী- ছবি সৌজন্য সৈকত কুমার বসু

চীন সরকার এগুলোর দিকে তাকিয়েও দেখেছেন না এবং আন্তর্জাতিক যে সমস্ত বন্যপ্রাণীর সংরক্ষণ সংগঠনগুলি রয়েছে তাদের নাম আলাদা করে না বললেও অতি সহজেই বলা যায় যে চীন সরকার বিরাগভাজন হতে চায় না। এবং তার ফলে এই ধরনের পদক্ষেপ যেখানে কিনা চীন সরকারকে বাধ্য করা উচিত এই কালো বাজারগুলিকে বন্ধ করা ও প্রশ্রয় না দেওয়া, তারা কোনও পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। এবং এর ফলে আমাদের শুধুমাত্র হাতি নয়, অন্য বন্যপ্রাণী যথা পঙ্গোলিন, ভাল্লুক, বাঘ, লেওপার্ড -এরা সবাই এই ভয়ঙ্কর কালো বাজারের শিকার হচ্ছে এবং কালো বাজারীদের খিদে এদের ক্রমাগত গ্রাস করছে ও বন্যপ্রাণীদের দ্বারা মেটানো হচ্ছে। এইরকম ভাবেই বিশেষ করে হাতির মতো একটি নিরীহ দুর্লভ বন্য জীব আমরা শীঘ্রই হারিয়ে ফেলব।

Share it