Sandhya Mukherjee
Share it

অরূপ পাল, সাংবাদিক: তাঁর গানের প্রজাপতি যুগ যুগ ধরে শ্রোতাদের হৃদয়ে রঙ ছড়াবে। তাঁর গান, চম্পা চামেলি আর গোলাপের বাগে কুঁড়ি হয়ে ফুটবে প্রতি ভোরে। এমনই জাদু গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠের। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় চিরকালের জন্য স্তব্ধ হল সেই সুললিত কণ্ঠ। কিন্তু, কোটি কোটি সন্ধ্যানুরাগীদের হৃদয়ে চিরকাল ঝিকিমিকিয়ে উঠবে তাঁর গানের তারারা।

এ শুধু গানের দিন, এ লগনো গান শোনাবার। না,আর তিনি গান শোনাবেন না। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জীবন যুদ্ধে হেরে গেলেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। মৃত্যু কালে তাঁর বয়স হয়েছিল বিরানব্বই বছর। দীর্ঘ দিন ধরে গান শুনিয়ে তিনি বাঙালির হৃদ মাঝারে জায়গা করে ছিলেন। বয়স বাড়ে বাড়ুক, তবু মনের বয়স বাড়তে দিও না। এই ক্যাচ লাইনটিকে পাথেয় করে প্রবাদ ‌প্রতিম শিল্পী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় গান শুনিয়েছেন আপামর বাঙালিকে। তাঁর গানের মূর্চ্ছনায় বাঙালি মজে ছিল।

বাবা নরেন্দ্র নাথ মুখোপাধ্যায় ও মা হেমপ্রভা দেবীর ছয় সন্তানের মধ্যে সবার ছোট সন্ধ্যা। খুব ছোট্ট বেলা থেকে গানের প্রতি ঝোঁক ছিল তাঁর। পন্ডিত সন্তোষ কুমার বসু ও অধ্যাপক চিন্ময় লাহিড়ীর কাছে তাঁর সঙ্গীত প্রশিক্ষণ শুরু। অল্প বয়সেই তাঁর গানে মুগ্ধ হয়েছিলেন উস্তাদ বড়ে গোলাম আলি খান। প্রকৃত অর্থে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের গুরু ছিলেন গোলাম আলি খান। তাঁর কাছে গান শিখতে শিখতেই উনিশশো পঞ্চাশ সালে তারানা চলচ্চিত্রে একটি হিন্দি গান গেয়েছিলেন সন্ধ্যা। সতেরোটি হিন্দি ছায়াছবির একজন নেপথ্য গায়িকা হিসেবে গান গেয়েছেন তিনি। বাহান্ন সালে তিনি মুম্বই থেকে কলকাতার বাড়িতে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কলকাতায় ফিরে তিনি বাংলা গান গাইবার সিদ্ধান্ত নেন।

যেমন ভাবা, তেমন কাজ। একটু পরিচিতি হতেই, তাঁর নাম দাবানালের মতো ছড়িয়ে পড়ে গোটা বিশ্ব জুড়ে। সন্ধ্যার সবচেয়ে জনপ্রিয় জুটি ছিল হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে। শুধু হেমন্ত নন, নচিকেতা ঘোষের সঙ্গেও বহু কাজ করেছেন বাংলার প্রবাদ প্রতিম শিল্পী। বাংলা দেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন, যুদ্ধের হাত থেকে বাঁচতে উদ্বাস্তুদের জন্য বাঙালি শিল্পীদের সঙ্গে গণআন্দোলনে নেমেছিলেন সন্ধ্যা। শুধু আন্দোলনে যোগ দেওয়া নয়, তাদের জন্য অর্থ সংগ্রহ করেছিলেন। তাঁর গাওয়া আমি তোমারে ভালবেসেছি, মধু মালতি ডাকে আয়, কি মিষ্টি, দেখো মিষ্টি এ সকাল, পথ ছাড়ো ওগো শ্যাম কিংবা হয়তো কিছুই নাহি পাব, তবু তোমায় আমি দূর হতে ভালবেসে যাব, আজও বাঙালির হৃদমাঝারে জায়গা করে রয়েছে।

প্রায় পাঁচ দশক ধরে গান গাওয়ার সুবাদে তিনি পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের পাশাপাশি বাংলার সেরা সম্মান ‘বঙ্গবিভূষণ’ পুরস্কার। বহু পুরস্কারে সম্মানিত হলেও, তাঁর ছিল না কোনও অহঙ্কার। তাই তাঁর মৃত্যুতে শোকের ছায়া গোটা বিশ্ব জুড়ে। প্রবাদ ‌প্রতিম শিল্পীর জন্য নিউজ ওয়েভ ইন্ডিয়ার তরফে শ্রদ্ধাঞ্জলি ও শত কোটি প্রণাম।‌

Share it