অরূপ পাল, সাংবাদিক: সুরের জগতে ফের ইন্দ্রপতন। লতা মঙ্গেশকর, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের পর এবার ঘুমের পাড়ি দিলেন বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী ও সুরকার বাপ্পি লাহিড়ি। বাপ্পি লাহিড়ীর নামটা আজকের প্রজন্মের কাছেও বেশ পরিচিত। তাঁর সুর ও গান আজও বাঙালি তো বটেই সারা ভারতবাসীর হৃদয় জুড়ে বিরাজ করছে।
সত্তর দশকের শেষে তাঁর উত্থান। একচেটিয়া আধিপত্ত রেখে বলিউডে সুরের মায়াজাল বুনেছিলেন তিনি। তাঁর সুর ও গানে আপামর ভারতবাসীকে কোমর দোলাতে দেখা যায় আজও। তাঁর সুরে গান গান করেননি এমন বিখ্যাত গায়কের সংখ্যা দূরবীন দিয়ে খুঁজলেও পাওয়া দুষ্কর। কিশোর, রফি, মান্না, লতা, আশা, বিজয় বেনেডিক্ট, শ্যারণ প্রভাকরদের পাশাপাশি রয়েছেন বহু অনামী গুণী শিল্পী।
বাঙালি হলেও তাঁর সুরে হিন্দি গানের জনপ্রিয়তা ছিল হিমালয়ের মতো। গান এবং সুর দিয়ে বাজিমাত করার জন্য কখন যে তিনি আসল নাম অলোকেশ থেকে বাপ্পি লাহিড়ি নামে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন, তা আজও অনেকের কাছেই অজানা। সত্যি কথা বলতে কী তাঁর সুর ও গানে আজ ও মজে রয়েছে গোটা ভারতবাসী। থাকবে আগামী প্রজন্মের পর প্রজন্ম। এটা নিশ্চিত। তাঁর মতো গায়ক ও সুরকার ভূ-ভারতে খুব কমই ছিলেন।
উনিশশো ছিয়াশি সালে তেত্রিশটি ছবিতে একশো আশিটি গান রেকর্ড করে গিনিজ বুক ওফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নাম লিখিয়েছিলেন তিনি। ‘বাপ্পি দা’র সুরে লতা মঙ্গেশকরের গাওয়া বাংলা গান ‘মঙ্গলদীপ জ্বেলে’ আজও সবার মুখে মুখে। এছাড়া কিশোর কুমারের ‘এ আমার গুরুদক্ষিণা’, ‘চিরদিনই তুমি যে আমার’ গানটিও সুপার হিট। এছাড়াও তাঁর নিজের গলায় ‘ওই শোনো’, ‘ইমন বলো বসন্ত বলো’, ‘আমার তুমি’ ভুলবে না কোনও বাঙালি সঙ্গীতপ্রেমীই। উত্তমকুমার অভিনীত শেষ ছবি ‘ওগো বধূ সুন্দরী’তে তাঁর সুরে সবকটি গানই সুপারহিট।
আবার হিন্দি বলিউডে তাঁর সুরে কিশোর কুমারের ‘লোগ কহেতে হ্যায় ম্যায় শরাবি হুঁ’, গানটির জনপ্রিয়তা আজও অম্লান সারা ভারতে। দেশে পাশ্চাত্য সংগীতকে জনপ্রিয় করার জনক যদি আরডি বর্মন হন, তাহলে বাপ্পি লাহিড়ি তার পরম্পরা। দেশের সঙ্গীত প্রেমীদের Disco গানের সঙ্গে প্রথম পরিচয় ঘটিয়েছিলেন তিনিই। আশি সালে Disco Dancer সিনেমায় তাঁর সুরে পর্দায় নেচে লিপ দিয়েই সুপারস্টার হয়েছিলেন মিঠুন চক্রবর্তী।
ডিস্কো ডান্সার, হিন্মত ওয়ালা, শরাবি, ডান্স ডান্স ,সত্যমেব জয়তের মতো একাধিক সুপার হিট ছবির সঙ্গীতের দায়িত্বভার সামলেছেন তিনি। নভেম্বর মাসে সারেগামাপার মঞ্চে হাজির হয়েছিলেন তিনি। শেষ বার তিনি প্রকাশ্যে আসেন সলমন খানের অনুষ্ঠানে।
সে ভাবে রাষ্ট্রীয় পুরস্কার না পেলেও পেয়েছেন ফিল্মফেয়ার পুরস্কার। পেয়েছেন ‘বঙ্গ বিভূষণ’ও। গলায় একাধিক সোনার চেন আর আঙুলে সোনার আঙটি তাঁকে স্টাইল আইকন বানিয়ে দিয়েছিল অচিরেই। মৃত্যুর আগের দিন পর্যন্ত তাঁর মুখে ছিল ভুবন ভোলানো হাসি। হাওয়ার গল্প আর পাখিদের গান শুনিয়ে আজ এই ফাল্গুনে দুটি চোখে স্বপ্ন এঁকে চলে গেলেন অমর সঙ্গী বাপ্পি লাহিড়ী। শুধু এটুকু বলতে পারি তোমায় পড়বে মনে, কাছে দূরে যেখানেই থাকো।