Share it

নিউজ ওয়েভ ইন্ডিয়া: নির্দিষ্ট সময়ের চার বছর পর নতুন করে জনগণনা হতে চলেছে সারা দেশে। সেইসঙ্গেএবার জাতি গণনার কথাও ভাবা হয়েছে। এই জাতি গণনা করার জন্যে বেশ কিছুদিন ধরেই দাবি জানাচ্ছিলেন কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতা-নেতৃরা। কিন্তু শাসকদল ভারতীয় জনতা পার্টি সেই গণনার নীতিতে রাজি হচ্ছিলেন না।

কার্যত ২০২১ সালেই জনগণনা হয়ে যাওয়ার কথা। এতদিনে জানা যেত ভারতের জনসাধারণের প্রকৃত সংখ্যা কত এবং তাঁরা নানাভাবে কীভাবে বিভক্ত। অর্থাৎ নারীপুরুষের নির্দিষ্ট সংখ্যা এবং বিভিন্ন সম্প্রদায়ের বিশেষ করে ধর্মসম্প্রদায়ের পরিস্থিতি কোথায় দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু যেভাবেই হোক সেই গণনা হয়নি। না হওয়ার পিছনে বেশ কয়েকটি কারণকে নির্দিষ্ট করেছেন বিরোধীরা। তবু প্রকৃত দাবি রক্ষা করাহয়নি। অর্থাৎ জনগণনা ঠিক সময় করা হয়নি।

ভারতীয় জনতা পার্টি শাসক দল বটে তবে কেন্দ্রের একমাত্র তারাই ক্ষমতায় নেই। অর্থাৎ এককভাবে তারা সংখ্যা গরিষ্ঠ নয়। ২০২৪ সালে তারা লোকসভা নির্বাচনে তাদের সেই একক গরিষ্ঠতা হাত ছাড়া হয়ে গেছে। সেকারণে তারা নীতিশ কুমারের দল এবং চন্দ্রবাবু নাইডুর দল এই দুইয়ের এমপি-দের সাহায্য নিয়ে আপাতত গরিষ্ঠতা লাভ করেছে। ফলে তাদের আপত্তি থাকলেও ওই দুই সহায়ক দলের জাতিগণনায় কোনও আপত্তি নেই। বরং তা তারা সমর্থনই করে। তাই এভাবে জাতিগণনার ক্ষেত্রে বিজেপি-কে স্বীকৃতি দিতে হয়েছে। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ জাতিগণনার ঘোরতর বিরোধী ছিল। কারণ তারা মনে করে এই জাতি গণনার ফলহিসেবে পরিস্থিতি যা দাঁড়াবে তাতে তাদের ঘোষিত নীতি, অর্থাৎ সব হিন্দু এক হও,সেই নীতিতে ব্যাঘাত ঘটবে। পরে অবশ্য বিজেপি-ক এই নতুন পরিস্থিতির জন্যে শাসন ক্ষমতা ধরে রাখতে সংঘ জাতি গণনার পক্ষে নিম রাজি হয়েছে।

নিম রাজি হলেও একই সঙ্গে মুসলমানদের পক্ষেও জাতি গণনার কথা জানানো হয়েছে। অর্থাৎ মুসলমানরাও যাতে এক পতাকার তলায় জড় হতে না পারেন তার জন্যে তাদেরও মধ্যে যে নানা বিভাগ রয়েছে সেটিকে প্রকট করে দেওয়ার কথা ভাবা হয়েছে।

এতে অবশ্য ন্যায় সংগত কোনও আপত্তি থাকার কথা নয়। কারণ হিন্দুদের যদি জাতি গণনা হয় তবে মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টান, জৈন প্রভৃতি সম্প্রদায়েরও জাতিগণনা বলে যদি কিছু থাকে তবে সেটাও করা দরকার। কিন্তু যে হিন্দুদের জাতিগণনা নিয়ে এত তর্ক বিতর্ক হচ্ছে তাতে প্রকৃতই কী কোনও সমাধান হবে। কারণ রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ মূলত বর্ণ বিন্দুদের একটি সংগঠন। মোটামোটি যা আভাসতাতে জানা গেছে বর্ণ হিন্দুদের চেয়ে অবর্ণ হিন্দুরাই সংখ্যায় বেশি। এই গরিষ্ঠতার সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখেই মায়াবতী ডিএসপি এবং অন্যান্য এইধরনের দলগুলি রাজনীতির ক্ষমতা দখলের চেষ্টা চালিয়ে আসছে। ফলে বর্ণ হিন্দুরাই যদি ধরে নেওয়া যায় ঐক্যবদ্ধ তবু বাকিদের থেকে তারা সংখ্যালঘু এটা মোটামুটি অনুমান। জাতিগণনা হলে তা আরও পরিষ্কার হয়ে যাবে। তখন বর্ণ হিন্দুদের সংগঠন হিসেবে যেসবদল ও মঞ্চ কাজ করে তাদের কিছুটা পিছুপা হতেই হবে।

তাছাড়া বর্ণ হিন্দুরাও কখনওই কোনও একটি মঞ্চ বা দলের পতাকার নীচে আসতে রাজি হননি। উত্তর ও পশ্চিম ভারতের বর্ণ হিন্দুরা তাতে রাজি হলেও পূর্ব ও দক্ষিণ ভারতের বর্ণ হিন্দুরা তেমন কোনও নির্দিষ্ট পরিচয়ে থাকতে রাজি নন। তাঁরা নিজেদেরকে ভারতীয় ভাবতে বেশি পছন্দ করেন। অবর্ণ হিন্দুরাও সেটাই করে থাকেন। ফলে যতই জাতি গণনাকরা হোক তার ফল বেরনোর পরেও আগামীদিনে ভারতের রাজনীতিতে বড় কোনও পরিবর্তন আসবে, এমন না ভাবাই ভালো। হিন্দু, মুসলমান যে কোনও ধর্মের মানুষইযারা ভারতের নাগরিক, তারা নিজেদেরকে বিশুদ্ধ ভারতীয় ভাবতেই পছন্দ করেন।

এই বর্ণ বা অ-বর্ণ কোনওটিই তাই আমাদের দেশে পাকাপোক্ত কোনও হিসেব নয়। এটি সাময়িক মাত্র। তাই লোকগণনার সাথে জাতিগণনা হলেও সবকিছুরই প্রকৃতচেহারা যে উঠে আসবে সেটাই সবচেয়ে বড় কথা। এর চেয়ে অন্য কোনও প্রত্যাশা এদেশে সাধারণ মানুষের নেই। সেটা সব রাজনৈতিক দল এবং মঞ্চেরই পরিষ্কার করে বুঝে নেওয়া দরকার আছে।

Share it