রুণা খামারু: পাটের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য ঘোষণা করল জুট কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া। গত মরশুমের তুলনায় এবার পাটের (গ্রেড থ্রি) ন্যূনতম সহায়ক মূল্য ক্যুইন্টাল প্রতি ৩১৫ টাকা করে বাড়ানো হয়েছে। অর্থাৎ ২০২৫-২৬ আর্থিক বছরে চাষিরা সরাসরি কেন্দ্রের কাছে ক্যুইন্টাল প্রতি ৫,৬৫০ টাকা দরে কাঁচা পাট বিক্রি করতে পারবেন। কেন্দ্রীয় সরকারের অধীন জুট কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়ার (JCI) বিভিন্ন কেন্দ্রে বিক্রি করা যাবে কাঁচা পাট। নতুন দাম লাগু করা হবে চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে। বর্ধিত এই দামে আগেই অনুমোদন দিয়েছিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন অর্থনৈতিক বিষয়ক মন্ত্রিসভা। মঙ্গলবার বিকেলে কলকাতা প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক বৈঠক করে তা ঘোষণা করল জুট কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া।
এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন JCI-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর শ্রী অজয় কুমার জোলি, ডিরেক্টর (ফাইনান্স) শ্রী কৌশিক রক্ষিত, জেনারেল ম্যানেজার (অপারেশন) শ্রী কল্যাণ কুমার মজুমদার, জুট কমিশনার শ্রী মলয় চন্দন চক্রবর্তী, চিফ ম্যানেজার (অপারেশন ও মার্কেটিং) শ্রী অনিন্দ্য মজুমদার।
JCI-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর শ্রী অজয় কুমার জোলি বলেন, “গত বছর ক্যুইন্টাল প্রতি এই গ্রেড-থ্রি কাঁচা পাটের দাম ছিল ৫,৬৩৫ টাকা। এবার তা আরও বাড়িয়ে ৫,৬৫০ টাকা করা হয়েছে। চাষিরা যদি বাজারে ভালো দাম না পান অর্থাৎ এর থেকেও কম দাম পান তাহলে এই তাঁরা নতুন দাম পেতে JCI-এর পাট ক্রয়কেন্দ্রগুলিতে পাট দিয়ে যেতে পারেন। এছাড়া কৃষক স্বার্থে মূল্য সহায়তা কার্যক্রম চালিয়ে যাবে জেসিআই।”
জুট কমিশনার শ্রী মলয় চন্দন চক্রবর্তী বলেন, “উচ্চগুণমান সম্পন্ন পাটের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য আরও বেশি। তাই চাষিরা চেষ্টা করুন আরও ভালো মানের পাট উৎপাদন করতে। JCI-এর ১১০টি কেন্দ্র রয়েছে বাংলায়। কৃষকদের সুবিধার্থে আগেই ‘পাটমিত্র’ নামে একটি অ্যাপ চালু করা হয়েছে। সেই অ্যাপের মাধ্যমে চাষিরা কাঁচাপাট বিক্রি করার জন্য নিকটবর্তী JCI সেন্টার খুঁজে নিতে পারবেন। সেখানেই দেখতে পারবেন পাটের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য, এছাড়া কৃষকদের সুবিধার্থে পাট চাষ সংক্রান্ত বিভিন্ন উপদেশের পাশাপাশি সেখানে থাকছে আহবাওয়ার পূর্বাভাসও। পাট বিক্রির তিন দিনের মধ্যেই অ্যাকাউন্টে টাকা পেয়ে যাবেন চাষিরা। পাট চাষে কৃষকদের আরও বেশি করে উৎসাহিত করতে সবসময় পাশে আছে জেসিআই।”
পাশাপাশি চিফ ম্যানেজার (অপারেশন ও মার্কেটিং) শ্রী অনিন্দ্য মজুমদার বলেন,“গতবারে পাটের ফলন খুবই ভালো হয়েছিল। এবারেও এখনও পর্যন্ত যা আবহাওয়া তাতে পাটের উৎপাদন গতবারের মতোই ভালো হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। জমি থেকে আলু তুলে নেওয়ার পর পাট বোনা হয়। এবং পাট বোনার সময় থেকে এখনও পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের পরিমাণ সন্তোষজনক। যাতে পাটের ফলন আরও ভালো হবে বলে আশা। এখনও পাটের বীজ বিক্রি হচ্ছে। পাট কাচার সময় জলের সমস্যা না হলে এবারপাটের উৎপাদন গতবারের তুলনায় বেশি হবে। এছাড়া কোনও চাষির কোনও রকম সমস্যা হলেও তা সরাসরি জানাতে পারেন।”
জেনারেল ম্যানেজার (অপারেশন) শ্রী কল্যাণ কুমার মজুমদার বলেন, “ন্যাশনাল স্কিল ডেভলপমেন্ট কাউন্সিলের মাধ্যমে জুট গ্রেডিংয়ের উপর এক বছরের একটি অ্যাপ্রেনটিস কোর্স শুরু হয়েছে। সেখানেও কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে। এছাড়া কাঁচামাল ব্যাঙ্কিংবা কেউ যদি পাটজাত দ্রব্য নিয়ে স্টার্টআপ গড়তে চান সেক্ষেত্রে তরুণ উদ্যোগপতিদের নানান সুযোগ-সুবিধের পাশাপাশি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়াহয়।
”উল্লেখ্য, গোটা দেশে ৪০ লক্ষ কৃষক পরিবারের জীবিকা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে পাটশিল্পের উপর নির্ভরশীল। প্রায় চার লক্ষ শ্রমিক পাট কলগুলিতে এবং পাটের বাণিজ্যে সরাসরি কর্মসংস্থান পান। গত বছর ১ লক্ষ ৭০ হাজার কৃষকের কাছ থেকে পাট সংগ্রহ করা হয়েছিল। পাট চাষিদের ৮২ শতাংশ পশ্চিমবঙ্গের আর বাকিটা অসমও বিহারের, যেখানে মোট পাট উৎপাদনের মাত্র ৯ শতাংশ উৎপাদন হয়।