Share it

রুনা খামারু, বিশেষ প্রতিনিধি: অগ্রহায়ন মাসে আমন ধান ওঠার পর পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় আলু বসানোর কাজও এখন প্রায় শেষের পথে। যেসব জমিতে ধান তোলার কাজ আগাম সম্পন্ন হয়েছিল সেইসব জমিতে ইতিমধ্যেই আলু বসানো তো হয়ে গেছেই, সেখানে আলুর গাছও বেরিয়ে গেছে। বাকি যেসব জমিতে ধান পুরুষ্ট হতে দেরি হয়েছে সেখানে এখনও জোরকদমে আলু বসানোর কাজ চলছে। তবে এবারে আলুর বীজ সংগ্রহ করতে গিয়ে বেশ সমস্যায় পড়তে হয়েছে বলে অভিযোগ শোনা যাচ্ছে চাষিদের মুখে মুখে।

রাজ্যে হুগলি ও বর্ধমানে আলু চাষ হয় সবচেয়ে বেশি। আর এইসব জেলার চাষিদের বক্তব্য, “এবারে আলু বীজের গ্রেডই ঠিক ছিল না। বীজের মাপ অনুযায়ী গ্রেড হয়। পঞ্জাব থেকে আসে বিভিন্ন গ্রেডের আলু বীজ। এবারে সেই গ্রেডেই ছিল গরমিল। অর্থাৎ চার সুতো বা ছয় সুতোর আলুর বীজের সঙ্গে ১০ সুতোর বীজ মিশেল দেওয়া হয়েছে। ফলে জমিতে আলু বসাতে বীজ প্রয়োজন হয়েছে বেশি পরিমাণে। কারণ ছোটো ছোটো গ্রেডের সঙ্গে বড় গ্রেডের বীজ মিশিয়ে দেওয়ায় জমিতে বসানোর জন্য আলু কাটতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে বীজ কুলোনো যাচ্ছে না। অর্থাৎ এক বিঘে জমিতে যে পরিমাণ আলু লাগে এবার তার চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণে বীজ লেগেছে। ফলে আলু চাষে খরচ আগের থেকে বেড়েছে।

চাষিদের আরও অভিযোগ, প্রতিবারের মতো এবারেও সারের সমস্যা তো ছিলই। এক বস্তা দশ ছাব্বিশ ছাব্বিশ সারের সরকারি দাম ১৪৭০ টাকা। কিন্তু সেই সার বাজার থেকে কিনতে হয়েছে ১৮০০ টাকা বা তারও বেশি দামে। ইউরিয়া ও দশ ছাব্বিশ মিলিয়ে এক বিঘা জমিতে আলু চাষ করতে প্রয়োজন হয় চার বস্তা সার।

আর এক বিঘেয় আলুর বীজ লাগে তিন থেকে চার বস্তা। এবারে জ্যোতি আলুর ৫০ কেজির এক বস্তা বীজের দাম ছিল প্রায় ২৫০০ টাকা, চন্দ্রমুখীর বীজের দাম প্রায় সাড়ে তিন হাজার টাকা বস্তা। আর এক বস্তা হেমাঙ্গিনী আলু বীজের দাম প্রায় তিন হাজার টাকা। চাষিদের কথায়, পঞ্জাবে এইসব বীজ ৯০০ থেকে ১২০০ টাকায় বিক্রি হয়। অথচ চাষিদের তার দ্বিগুণেরও বেশি দামে কিনতে হচ্ছে সেই বীজ। সেই অনুযায়ী চাষিদের হিসেব বলছে জমিতে বীজ আলু, সার, জল ও অন্যান্য খরচ মিলিয়ে এক বিঘা জমিতে আলু বসাতে খরচ হয় প্রায় ২০ হাজার টাকা। এবার আলুর ফলন ও চাহিদার উপর নির্ভর করে নতুন আলুর দাম। আলুর ফলন এবার কেমন হবে, চাষিরা লাভবান হবেন কি না তা বোঝা যাবে এবার আবহাওয়া কীরকম যাবে তার উপর।

ইতিমধ্যেই অনেক জমিতে আলু বসানো হয়ে গেছে এবং গাছ বেরিয়ে গেছে বহু এলাকায়, সেসব জায়গায় আলু গাছের স্বাস্থ্য তেমন একটা ভালো লক্ষ্য করা যায়নি। গাছ বেশ দুর্বল। এর কারণ হিসেবে আবহাওয়াকেই দূষছেন বিশেষজ্ঞরা। আলুর গাছ ভালো হয় ১৫ থেকে ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায়। কিন্তু এখন তাপমাত্রা তার থেকে বেশি। সুতরাং, আলু চাষের উপযুক্ত আবহাওয়া এখন না থাকায় গাছের স্বাস্থ্যও ভালো হয়নি। আর গাছ রুগ্ন হলে তাতে আলুর ফলনও ভালো না হওয়ারই সম্ভাবনা থেকে যায়। তবে কিছুদিনের মধ্যেই যদি শীত পড়ে যায় তাহলে তা গাছের স্বাস্থ্য ফেরানোর সহায়ক হবে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা।

Share it