নিউজ ওয়েভ ইন্ডিয়া: ২৩-তম খাল-বিল-চুনোমাছ-পিঠেপুলি ও প্রাণী পালন উৎসব পালন করা হল পূর্বস্থলী-১ নম্বর ব্লকের বাঁশদহ বিলে। প্রাণী সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী স্বপন দেবনাথের উদ্যোগে প্রতি বছরই ২৫ ও ২৬ ডিসেম্বর দু-দিনের এই উৎসব পালন করা হয়। উৎসবের দু-দিনই উপস্থিত বিশিষ্ট অতিথিদের বরণ করে নেওয়া হয় উত্তরীয় দিয়ে। উপহার হিসেবে দেওয়া হয় শাপলা ফুল ও কচুরি পানা থেকে নির্মিত ফুলদানি। প্রথম দিন উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মৎস্যমন্ত্রী বিপ্লব রায় চৌধুরী, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস, বিধায়ক অপূর্ব চৌধুরী, শম্পা ধারা,পূর্ব বর্ধমানের জেলা শাসক পূর্ণেন্দু মাঝি, কালনার মহকুমা শাসক শুভম আগরওয়াল,স্টেট বায়োডায়র্ভাসিটি বোর্ডের চেয়ারম্যান ডক্টর হিমাদ্রি শেখর দেবনাথ,পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের সভাধিপতি শ্যামাপ্রসন্ন লোহার, গার্গী নাহা, নদীয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি তারান্নুম সুলতানা মীর,জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি আধিকারিক রামশঙ্কর মণ্ডল সহ আরও অনেকে। দ্বিতীয় দিন উৎসবে যোগ দেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু, সাংসদ সুনীল মণ্ডল, কালনা পৌরসভার ভাইস চেয়ারম্যান তপন পোড়েল সহ আরও অনেকে।
অনুষ্ঠানে রাজ্যের মৎস্যমন্ত্রী বিপ্লব রায় চৌধুরী বলেন, “একসময় এই জলাশয় পড়েই ছিল। সবার চেষ্টায় এখন এটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছে। সেইসঙ্গে এই জলায়শকে জাতীয় স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।” এদিনের অনুষ্ঠান থেকেই রাজ্য মৎস্য দপ্তরের আর্থিক সহায়তায় পূর্বস্থলী এক নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির শ্রীরামপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীন একটি ইটের সোলিং রাস্তা নির্মাণের শিলান্য়াস করেন মৎস্যমন্ত্রী।
এছাড়া আগামিদিনে এই বিলকে কেন্দ্র করে ইকো ট্যুরিজম পার্ক গড়ে তোলার পরিকল্পনাও রয়েছে রাজ্য সরকারের। এক সময় এখানে ৪২ রকমের চুনো মাছ পাওয়া যেত। হারিয়ে যেতে বসা চুনো মাছকে ফিরিয়ে আনতে প্রাণী সম্পদ উন্নয়ন দপ্তরের সঙ্গে মৎস্য দপ্তরের যৌথ উদ্যোগে সেখানে মৎস্য প্রজনন ও গবেষণা কেন্দ্র গড়ে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে। এই বিলকে কেন্দ্র করে অনেক স্থানীয় মানুষই তাদের দৈনন্দিন রুটি রুজির বন্দ্যোবস্ত করতে পেরেছেন। কমবেশি ৪০০ পরিবার এই বিলে মাছ ধরার সঙ্গে যুক্ত।
এবার বর্ষার সময় বাঁশদহ বিলের উপর নির্ভরশীল ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্যজীবী পরিবারদের এক হাজার টাকা করে দেওয়ার কথা অনুষ্ঠানে ঘোষণা করেন প্রাণী সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। বলেন, “বর্ষার সময় জলাশয়ে পাট পচানোর জন্য অনেক মাছের ক্ষতি হয় যার প্রভাব পড়ে মৎস্যজীবীদের রুটি রুজিতে। স্থানীয় মৎস্য সমবায় সমিতির মাধ্যমে তাদের এক হাজার টাকা করে দেওয়া হবে।”
জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাঝি মন্ত্রী স্বপন দেবনাথের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে সবাইকে সচেতনতা বৃদ্ধির আবেদন জানান। পরিবেশকে দূষণের হাত থেকে রক্ষা খড়ের নাড়া পোড়ে বন্ধেরও আহ্বান জানান তিনি।
এদিনের অনুষ্ঠানে একটি স্যুভেনির প্রকাশ করা হয়। সেই স্যুভেনিরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ে লেখা কবিতা ও অন্যান্য মন্ত্রীদের শুভেচ্ছা বার্তা এবং বাঁশদহ বিল সম্পর্কিত তথ্য প্রকাশ করা হয়।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় দিনে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, “চৈতন্যদেব কোনওদিন বিভাজনের রাজনীতি করেননি। বাংলায় যদি চৈতন্যদেবের পরে কেউ থাকেন তাহলে তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।”
বাঁশদহ বিলের ধারে একটি চিলড্রেন পার্ক গড়ে তোলার কথা ঘোষণা করেন মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। থাকবে শিশুদের অঙ্কন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। পার্ক গড়ে তোলার জন্য সাংসদ তহবিল থেকে ১৫ লাখ টাকা দেবেন বলে ঘোষণা করেন স্থানীয় সাংসদ সুনীল মণ্ডল। উৎসবের দ্বিতীয় দিন সকালে স্থানীয় শিশুদের নিয়ে অঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। প্রতিযোগিতা শেষে সবার হাতে ক্রিসমাসের উপহার হিসেবে তুলে দেওয়া হয় ছোটোদের গল্পের বই। পরে সেখান থেকে শিশুদের সঙ্গে পদযাত্রা করেন মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। এরপর যে জায়গায় অঙ্কন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে সেই জায়গা ঘুরে দেখিয়ে ফিতে কাটা হয় সেখানে। দিনের শেষে বাঁশদহ বিলে আয়োজন করা হয় বাইচ ও ডিঙি প্রতিযোগিতা।