যীশু চৌধুরী (বিশিষ্ট সাংবাদিক): আফগানিস্তানের রাষ্ট্রনৈতিক নাম আফগান প্রজাতন্ত্র। দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ার এক গুরুত্বপূর্ণ ভৌগলিক অবস্থানে রয়েছে এই দেশ। এর আয়তন সাড়ে ছয় লক্ষ বর্গ কিলোমিটার। লোকসংখ্যা মোটামুটি এক কোটি আশি লাখ। রাজধানী শহরের নাম কাবুল। এই দেশে বেশ কয়েকটি প্রদেশ আছে তাদের আলাদা আলাদা রাজধানী শহরও আছে। এর সীমান্তে রয়েছে ইরান, রাশিয়া, পাকিস্তান ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ দেশ। কিছু দূরেই চিনের অবস্থান। চিনে মুসলিম প্রধান প্রদেশ চিনজিয়াং। এখানে উইগুর মুসলিমদের বাস। ফলে পুরো এলাকাটাই মুসলমান প্রধান। কাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান, আজারবাইজান প্রভৃতি দেশগুলিও আফগানিস্তান থেকে বেশি দূরে নয়।
#WATCH | Evacuated Indians from Kabul, Afghanistan chant 'Bharat Mata Ki Jai' after landing in Jamnagar, Gujarat. pic.twitter.com/IqvESz79IO
— ANI (@ANI) August 17, 2021
আফগানিস্তানের ইতিহাস অনেক পুরনো। এখানে প্রধান ভাষা পুস্তু। পুস্তু ভাষার অনেক শব্দ বাংলাতেও ঢুকে আছে। যেমন – ‘বাবা’। সেখানেও পিতাকে বাবা বলা হয় বাংলার মতোই। ভারতের অন্যান্য জায়গায় কিন্তু ‘বাবা’ বলা হয় না। এর একটা কারণ বাংলা থেকে বহু ব্যবসায়ী কাবুলে যেতেন মালপত্র নিয়ে। সেখানে তাঁরা হাটে বাজারে ঘুরে বেড়াতেন মালপত্র বিক্রির জন্যে। সম্রাট বাবর তাঁর আত্মজীবনী ‘বাবরনামা’য় লিখেছেন, এখানকার ব্যবসায়ে পূর্বীদের উল্লেখযোগ্যভাবে লক্ষ্য করা যায়। ভারতের পূর্বাঞ্চলে বসবাসকারীদের তিনি ওই নামে উল্লেখ করেছিলেন। আসলে তখনও ‘বাঙালি’ এই কথাটি জানা ছিল না।
#WATCH | Indian Air Force C-17 aircraft that took off from Kabul, Afghanistan with Indian officials, lands in Jamnagar, Gujarat. pic.twitter.com/1w3HFYef6b
— ANI (@ANI) August 17, 2021
বাবর ভারতে সাম্রাজ্য স্থাপন করার পরে আফগানিস্তানে গিয়ে থাকতে চেয়েছিলেন। তিনি ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন মৃত্যুর পর যেন তাঁকে কাবুল পাহাড়ের উপরে সমাহিত করা হয়। তাহলে সেখান থেকে তিনি আফগানিস্তান এবং ভারত দুটি দেশই দেখতে পাবেন। এর থেকে বোঝা যায় আফগানিস্তান এবং ভারতের ইতিহাস অনেকটাই একীভূত। আফগানরা অনেক সময়ই বিভিন্ন স্তরে ভারতের উপর নির্ভর করেছেন। এখনও, এই বিপদের দিনেও, ভারতের দিকেই তাকিয়ে আছে সেদেশের গণতান্ত্রিক এবং স্বাধীনতাকামী মানুষ।
“I stand squarely behind my decision … the developments of the past week reinforce that ending US military involvement in Afghanistan now was the right decision."
Joe Biden defends Afghanistan withdrawal even after Taliban takeover ⤵️ pic.twitter.com/TGr01oIUzj
— Al Jazeera English (@AJEnglish) August 17, 2021
চিনের আপত্তি সেখানেই। তারা আফগানিস্তানের বর্তমান সংকটে ভারতকে খুব একটা বড় ভূমিকায় দেখতে চায় না। রাশিয়াও ইদানিং আফগানিস্তান নিয়ে ভারতের সঙ্গে খুব একটা চর্চায় যাচ্ছে না। কাতারে কয়েকদিন পরেই আফগানিস্তান নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা। সেখানে ভারতকে প্রথমে ডাকাই হয়নি। পরে অবশ্য ভারতের মতামতকে গুরুত্ব দিতে চেয়েছে অন্য কয়েকটি প্রতিবেশী দেশ। তারা মনে করেছে মুসলিম প্রধান এই অঞ্চলে সত্যিকারের শান্তি স্থাপনের জন্যে আলোচনায় কেবল পাকিস্তানকে নয় ভারতকেও ডাকতে হবে। অন্যদিকে চিন এবং রাশিয়া তো আছেই। এবং অবশ্যই থাকছে আমেরিকা। কিন্তু এই শক্তি সমাবেশ আফগানিস্তানে কতটা সুস্থিতি ফেরাতে পারবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কারণ, পুরো ব্যাপারটি ঐতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে না দেখে কেবল তাৎক্ষণিক রাজনৈতিক অবস্থান গণ্য করা হচ্ছে। কী সেই ঐতিহাসিক তাৎপর্য তা নিয়েও আলোচনা হওয়া দরকার।
আরও পড়ুন: প্রথম পর্ব