নিউজ ওয়েভ ইন্ডিয়া: বিশ্বের সবচেয়ে বেশি আফিম ও হেরোইন আফগানিস্তানে উৎপাদন হয়। বিশ্বের প্রায় ৮০-৯০ শতাংশ আফিম রফতানি হয় আফগানিস্তান থেকেই। গত কয়েক বছরে আফগানিস্তানে হেরোইনের উৎপাদন বেশ বেড়েছে। এই মাদকই তালেবান-অর্থভাণ্ডারের প্রধান উৎস। তারা এখন প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে, ইসলামিক এমিরেটস অফ আফগানিস্তানকে ‘মাদকমুক্ত’ করে তুলবে। কিন্তু, এই লাভজনক ব্যবসা থেকে কি আদৌ নিজেদের মুক্ত করতে পারবে তালিবানরা? এ নিয়ে যথেষ্ট সন্দীহান আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা।
তালেবানের তরফে প্রথম সংবাদ সম্মেলনে, আফিমের উর্বর ক্ষেত্র হিসেবে পরিচিত আফগানিস্তানকে নতুন সরকার অন্যান্য ফসলের রাজ্যে পরিণত করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। অন্য ফসল চাষে উৎসাহিত করতে ‘আন্তর্জাতিক সহযোগিতা’ চেয়েছে তালিবান। কিন্তু, ১০ বছর ধরে ন্যাটো জোট, বেসরকারি সংস্থা ও রাষ্ট্রসংঘের কর্মীদের সঙ্গে যাঁরা কাজ করেছেন, তাঁদের কাছে তালিবানের ‘আন্তর্জাতিক সহযোগিতার’ আহ্বান এক ফাঁকা আওয়াজ ছাড়া কিছু না। কারণ, তাঁরা আফগানিস্তানের পপি চাষের ওপর নির্ভরতা কমাতে যে চেষ্টা করে গেছেন, তা ব্যর্থ হয়েছে তালিবানের কারণেই।
আফগানিস্তানে গত ১৭ বছরে আমেরিকা মাদক বাণিজ্যের বিরুদ্ধে ৮৬০ কোটি ডলার ব্যয় করেছে। এর মধ্যে ছিল কৃষকদের গম ও জাফরান উৎপাদনে উৎসাহিত করা। পরিবহণ খাতে বিনিয়োগ, শষ্যের ওপর কীটনাশক প্রয়োগ ও পরিশোধন। কিন্তু, তালিবান নিয়ন্ত্রিত যেসব অঞ্চলে পপি বেশি চাষ হয়, সেসব এলাকায় যুক্তরাষ্ট্রের নেওয়া প্রতিটি পদক্ষেপ তালিবান যোদ্ধাদের প্রতিরোধের মুখে ব্যর্থ হয়েছে। মার্কিন ও আফগান সরকারের হিসাবে, তালিবান এই খাত থেকে শত শত মিলিয়ন ডলার আয় করেছে। সমীক্ষায় দেখা গেছে, তালেবাননিয়ন্ত্রিত এলাকার স্থানীয় ওয়ারলর্ডস ও যোদ্ধারা কৃষকদের পপি চাষ করতে বেশি চাপ দিতেন। গত চার বছরে গড়ে প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে পপি চাষ হয়েছে। রাষ্ট্রসংঘের হিসেবে গত ২০ বছরে আফগানিস্তানে আফিম উৎপাদন ব্যাপক বেড়েছে। দেশটির ৩৪টি প্রদেশের ১২টি ছাড়া সব কটিতে আফিম চাষ হয়।
এই মাদক তালিবানের তহবিল গঠনের বড় উৎস। এখন তালিবানের হাতে মাদকের বিশাল মজুত। কিন্তু, নতুন সরকারের মাদকনীতি বিশ্বে হেরোইনের বাজারে ব্যাপক দাম বাড়বে। পশ্চিমী দুনিয়ার পাশাপাশি রাশিয়া, ইরান, পাকিস্তান ও চিনে এর প্রভাব পড়বে। এগুলো মাদক পাচারের বড় বড় রুট এবং এসব দেশে আফগান মাদকের বিশাল বাজার রয়েছে।
পাচারকারীরা সম্প্রতি পপির মতো আফগানিস্তানে আরেকটি মাদকের সন্ধান পেয়েছে। এর নাম ইফিড্রা। মেথামফেটামিন তৈরিতে এটি অন্যতম উপাদান, যা ‘ক্রিস্টাল মেথ’ নামে পরিচিত। ২০০০ সালের আগে আফগানিস্তান থেকে উৎখাত হওয়ার আগে পর্যন্ত সেখানে মাদক উৎপাদন নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু, ‘সিডস অব টেরর: হাউ হেরোইন ইজ ব্যাংকরোলিং দ্য তালিবান অ্যান্ড আল-কায়েদা’ বইয়ের মার্কিন লেখক গ্রেচেন পিটার্স বলেছেন, পপি চাষের ওপর তালেবানের আগেকার নিষেধাজ্ঞা ছিল কৌশলগত।
গ্রেচেন পিটার্স তার ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, তারা ব্যাপক আন্তর্জাতিক চাপে রয়েছে। এটি তাদের একটি চাল, তাদের কাছে মাদকের প্রচুর মজুত রয়েছে। এবার এই মাদকের দাম ১০ গুণ বাড়ার ফলে তারা ব্যাপক অর্থ বাগিয়েছে। তারা এই মাদক বাণিজ্য থেকে নিজেদের মুক্ত করতে পারবে না। কারণ, এর সঙ্গে তারা আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে। তাছাড়া এই মাদক চাষ থেকে জীবিকা নির্বাহ করেন গরিব চাষিরা। তাঁদের কথা উল্লেখ করে পিটার্স বলেন, ‘আফগানিস্তান আফিম ছাড়া টিকতে পারবে না। এটি আফগানিস্তানকে শেষ করার পাশাপাশি দেশটির অনেক মানুষকে বাঁচিয়েও রাখবে।’