Dakshineshwar Temple
Share it

রুনা চক্রবর্তী, নিউজ ওয়েভ ইন্ডিয়া: প্রাচীন জনপদ হুগলির মহানাদে কারুকার্যখচিত মনোরম ব্রহ্মময়ী মন্দির। দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পরেও স্বমহিমায় বিরাজমান মা ব্রহ্মময়ী কালী মন্দির। আজ থেকে প্রায় 250 বছর আগে নিয়োগীরা মহানাদে এসে বসবাস শুরু করেন। তারা ম্যাগনন ম্যাকাঞ্জি কোম্পানিকে চিনি সরবরাহ করতেন। সেই সময়ে কৃষ্ণচন্দ্র নিয়োগী স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে বাংলা ১২৩৬ সালে (ইংরেজি 1830) এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন।

84 ফুট উঁচু ত্রিতল এই নবরত্ন মন্দির টি কৃষ্ণচন্দ্র নিয়োগীর এক অসাধারণ কীর্তি। মন্দিরের মূল বেদী থেকে 64 ফুট উঁচুতে অর্থাৎ তন্ত্রমতে 64 যোগিনী স্তর পার হয়ে মন্দিরের সর্বোচ্চ তলের মধ্যভাগে শ্বেতবর্ণের হংসেশ্বর শিবলিঙ্গের অবস্থান। একতলায় মা ব্রহ্মময়ী কালী। মন্দিরের চারকোণে চারটি কালো পাথরের শিবলিঙ্গ প্রতিষ্ঠিত আছে। মন্দিরের অভ্যন্তরে পঞ্চমুণ্ড আসনের উপর বেদীতে শবরূপী মহাদেবের উপর কালো পাথরের খড়গমুণ্ডধারিণী ব্রহ্মময়ী মা অধিষ্ঠিতা।

বেদীমূলে সিংহাসনে নারায়ণ শিলা এবং শ্রী শ্রী ঠাকুর রামকৃষ্ণ ও মাতা শ্রী শ্রী সারদা দেবীর চিত্র বর্তমান। মন্দিরের প্রথম তলে সমতল ছাদের চারকোণে চারটি চূড়া। দ্বিতল স্তম্ভের কেন্দ্রস্থলে একটি সর্ববৃহৎ চূড়া আছে। মূল মন্দিরের তিনটি প্রবেশপথ তন্ত্রমতে ঈড়া, পিঙ্গলা ও সুষুম্না। একতলা থেকে তিনতলার সর্বোচ্চ চূড়ায় ওঠার সিঁড়ি আছে। কেবলমাত্র বছরে একবার শিবরাত্রির দিন মন্দিরের উপরে দর্শনার্থীদের যেতে দেওয়া হয়।

জানা গেছে, মন্দিরের গঠন ও পূজা পদ্ধতি সবই তন্ত্রমতে। মন্দিরের সম্মুখভাগের দেওয়ালে পরী ও শ্রীকৃষ্ণের কালিয়া দমনের নিদর্শন রয়েছে। শোনা যায়, পরীরা তান্ত্রিকদের কাজের প্রধান সহযোগী। মন্দিরের গায়ে আর্চের গঠন হিন্দু ও মুসলিম ধর্ম সমন্বয়ের প্রতীক। আরও জানা গেছে, বাংলার মন্দির গঠনরীতি অনুযায়ী এই মন্দিরটি ‘কোঠা’ দেউল পর্যায়ভুক্ত। জনশ্রুতি আছে ব্রহ্মময়ী মন্দির প্রতিষ্ঠার 27 বছর পরে এই মন্দিরের আদলে দক্ষিণেশ্বরের মন্দির স্থাপিত হয়। রানী রাসমনির জামাই মথুরবাবুকে এই মন্দির সম্পর্কে জানার জন্য এখানে আসতে বলেন। কথিত আছে, মথুরবাবু নিজে বা তাঁর নিজস্ব লোক পাঠিয়ে এই মন্দির সম্বন্ধে জ্ঞাতব্য বিষয়গুলি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে জানার পর এই মন্দির এর অনুকরণে ১৮৫৭-১৮৫৮ সালে দক্ষিণেশ্বরের মন্দির স্থাপন করেন।

Share it