জয় ভট্টাচার্য: গ্রাসরুট থেকেই প্রতিভাবানদের তুলে আনতে হবে। সেখানে দুর্নীতি করে চেনাদের সুযোগ দিয়ে প্রতিভাবানদের বাদ দিলে চলবে না। ফুটবলের উন্নতির জন্য এটাই একমাত্র পথ। বক্তা ভারতীয় ক্লাব ফুটবলের অন্যতম সফল কোচ বিমল ঘোষ।
বয়স এখন প্রায় ষাটের ঘরে। কিন্তু, তবুও তিনি থেমে নেই। প্রতিদিন সকালেই ট্রাকস্যুট পরে মুখে বাঁশি নিয়ে উপস্থিত হন বান্দ্রার উইং স্পোর্টস ক্লাবের মাঠে। তিনি বিমল ঘোষ। ভারতীয় ক্লাব ফুটবলে অন্যতম সফল কোচ বিমলবাবু। তাঁর হাতেই তৈরি হয়েছেন একঝাঁক ফুটবলার। তাঁরা কেউ এখন খেলছেন জাতীয় দলে। আবার কেউ কেউ তাঁর মতোই যুক্ত হয়েছেন ফুটবল কোচিং-এ।
ভারতীয় ফুটবলের উন্নতি কী করে সম্ভব জানতে চাওয়া হলেই বিমলবাবু বলেন, “আমি মনে করি প্রতিভা আমাদের দেশে কম নেই। কিন্তু, গোড়াতেই রয়েছে গলদ। যে গ্রাসরুট থেকে প্লেয়ার তুলে আনতে হবে, সেই জেলাস্তর, মহকুমা বা স্কুল টুর্নামেন্ট সেখানে মুখ চিনে খেলোয়াড় নিলে হবে না। যাঁরা যোগ্য, তাঁরাই সুযোগ পাবে। কিন্তু, আমাদের দেশে সেটা হয় না। আর এখানে বিদেশি দলগুলোর থেকে পিছিয়ে পড়ছি আমরা। প্রতিভাবান ফুটবলাররা কর্তাদের এই দুর্নীতির শিকার হয়ে ফুটবল থেকে সরে যাচ্ছে। এটা চলতে থাকলে ভারতীয় ফুটবল আগামী একশো বছরেও উন্নতি করতে পারবে না।”
কথা প্রসঙ্গে অভিজ্ঞ কোচ আরও বলেন, “1994 সালে যখন আমি পাকাপাকি ভাবে এয়ার ইন্ডিয়ার কোচ হই, তখন আমিই প্রথম এয়ার ইন্ডিয়া দলকে 5-4-1 : ছকে খেলাই। এবং সাফল্য পাই। আজ সেই একই ছকে খেলছে চেলসি। ওরা আজ এই এক ব্যবহার করে এতদূর এগিয়ে গেল। অথচ আমরা পিছিয়ে গেলাম। এর কারণ, পরিকাঠামোর উন্নতি যেমন করতে হবে, তাঁর পাশাপাশি ফুটবল নিয়ে AIFF এবং কর্তাদের সবাইকে আরও চিন্তা ভাবনা করতে হবে।”
তাঁর শিষ্য খালিদ জামিল, নৌশাদ মুসা, স্টিভেন ডায়াস, সুমন দত্ত, অ্যান্থনি ফার্নান্ডেজ ও পরেশ শ্রীভালকার আজ কোচের পদে রয়েছেন। ছাত্রদের এই নতুন ভুমিকায় দেখে কেমন লাগছে প্রশ্ন করা মাত্রই বিমল বাবু বলেন, “খুব ভালো। ওঁরা প্রত্যেকেই এয়ার ইন্ডিয়ায় আমার প্রশিক্ষণে খেলেছে। আমি ওঁদের সবাইকার সাফল্য কামনা করি।”
অতীতে ভারতীয় দলে বাঙালি ফুটবলারদের আধিপত্য বেশি থাকলেও এখন তা আর নেই। এর কারণ জানতে চাইলে, এই প্রবীন কোচ বলেন, “এটা সত্যিই দুঃখজনক। বাঙালি ছেলেরা কেন পিছিয়ে পড়ছে জান, বেশি পয়সার জন্য প্লেয়ার খেপ খেলছে। এই খেপ খেলা বন্ধ করতে হবে। বাঙালি প্লেয়ারদের মাথায় রাখতে হবে খেপ খেলা বন্ধ করে আরও বেশি অনুশীলন করতে হবে। তাহলে বাঙালি প্লেয়াররা আবার ভারতীয় দলে বেশি মাত্রায় সুযোগ পাবে।”
2020 সালের IFA শিল্ড জয় করেছিল রিয়েল কাশ্মীর দল। আর সেই দলের সহকারী কোচের ভূমিকায় ছিলেন কল্যাণীর সুমন দত্ত। নতুন ভুমিকায় প্রথমেই সফল তিনি। ভবিষ্যতে তাঁর কী পরিকল্পনা রয়েছে, জানতে চাইলে সুমনের অকপট স্বীকারোক্তি, বাংলার বিভিন্ন জেলা থেকে প্রতিভাবান ফুটবলার বাছাই করে তাঁদের অনুশীলন করানো। যাতে তাঁরা অচিরেই হারিয়ে না যায়। যেহেতু আমিও জেলা থেকে উঠে এসে ভারতের বিভিন্ন ক্লাবে খেলেছি, তাই আমি জানি জেলার মাঠে প্রতিভার অভাব নেই। সহকারী কোচ হিসেবে প্রথমেই সফল। কী বলবে সেই সম্বন্ধে? একদা ময়দানের এই প্রাক্তন ফুটবলারটি প্রথমেই কৃতজ্ঞতা জানান রিয়েল কাশ্মীর দলের বর্তমান কোচ ও কর্তাদের। সুমন বলেন, “আমাকে এই সুযোগ দেওয়ার জন্য তাঁদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ থাকব সারাজীবন। পাশাপাশি খেলোয়াড় হিসেবে আমি বিশেষ করে কৃতজ্ঞ থাকবো বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য ও বিশ্বজিৎ দাসের কাছে। এরপরই তাঁর প্রাক্তন কোচ বিমল ঘোষের বক্তব্যকে সমর্থন করে সমর্থন করে সুমন বলেন, একদম ঠিক কথা বলেছেন বিমল স্যার।”