রুনা খামারু, কলকাতা : বিশেষভাবে সক্ষমদের জন্য আলিপুর চিড়িয়াখানায় চালু করা হল ব্রেইলের সুবিধা। দেশের কোনও চিড়িয়াখানায় প্রথম এই ধরনের পরিষেবা চালু হল রবিবার থেকে। ১৪ জুলাই আন্তর্জাতিক শিম্পাঞ্জি দিবস উদযাপন ও রাজ্য বনমহোৎসব পালনের জন্য চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে এদিন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের বনমন্ত্রী মাননীয় শ্রীমতি বীরবাহা হাঁসদা। বন দপ্তরের অতিরিক্ত মুখ্য সচিব শ্রী মনোজ কুমার আগরওয়াল, চিফ কনজ়ারভেটর অফ ফরেস্ট (হেড অফ ফরেস্ট ফোর্স) শ্রী নীরজ সিঙ্ঘল, ওয়েস্ট বেঙ্গল জ়ু অথরিটির মেম্বার সেক্রেটারি শ্রী সৌরভ চৌধুরী সহ অন্যান্য বিশিষ্টরা। ওই অনুষ্ঠানেই দৃষ্টিশক্তিতে বিশেষভাবে সক্ষমদের উপস্থিতিতে ২০টি ব্রেইল বোর্ডের উদ্বোধন করেন মাননীয় মন্ত্রী।
ইন্টারন্যাশনাল আই ফাউন্ডেশন নামে এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ওই ব্রেইল বোর্ডগুলি দান করে আলিপুর চিড়িয়াখানায়। সংস্থার CEO শ্রী মলয় রঞ্জন রায় ও এগজ়িকিউটিভ মেম্বার শ্রী প্রবীর নাথ বলেন, “দৃষ্টিহীনরাও চিড়িয়াখানায় আসেন। কিন্তু চিড়িয়াখানার কোন খাঁচার সামনে কোন প্রাণী রয়েছে তা তাঁরা বুঝতে পারেন না। সেজন্য সঙ্গে করে এমন কাউকে নিয়ে আসতে হয় যিনি পশুপাখিদের নানান তথ্য তাঁদের বুঝিয়ে বলতে পারবেন। এবার থেকে আর এমন কারও সাহায্য নিতে হবে না। তাঁরা নিজেরাই পশুপাখিদের সমস্ত তথ্য পড়ে নিতে পারবেন ব্রেইল বোর্ডের সাহায্যে। আমাদের দেশে আর কোনও চিড়িয়াখানায় এই ধরনের সুবিধে এখনও পর্যন্ত নেই। প্রথমবার চালু হল আলিপুর চিড়িয়াখানায়।”
চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের এধরনের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন মাননীয় বনমন্ত্রী শ্রীমতি বীরবাহা হাঁসদা। বিশেষভাবে সক্ষমদের উপস্থিতিতে বিভিন্ন এনক্লোজ়ারের সামনে ব্রেইল ব্যাজের উদ্বোধন করেন তিনি। অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বলেন, “আমি অনুরোধ করব বাকি এনক্লোজ়ারগুলিতেও যাতে ব্রেইল সুবিধা দেওয়া যায়। যাঁরা এখানে আসবেন তাঁরা যেন সবরকম সুবিধা পান। সবদিক থেকে যাঁরা সক্ষম তাঁরা এবার তাঁদের যন্ত্রণা থেকে বেরিয়ে আসুক, আমাদের মতো করেই বাঁচুক, তাঁরাও দুনিয়া দেখুক। আসুন আমরা সবাইকেই ভালোভাবে বাঁচার সুযোগ করে দিই।”
অনুষ্ঠানে আলিপুর চিড়িয়াখানার অধিকর্তা শ্রী শুভঙ্কর সেনগুপ্ত বলেন, “ইন্টারন্যাশনাল আই ব্যাঙ্কের সহযোগিতায় আপাতত বিশেষ বিশেষ বন্যপ্রাণীর খাঁচার সামনে ২০টি ব্রেইল বোর্ড লাগানো হয়েছে। ভিজ্যুয়ালি চ্যালেঞ্জড যাঁরা আছেন তাঁরা এখন পশুপাখিদের নানান তথ্য ব্রেইলের মাধ্যমে নিজেরাই পড়ে নিতে পারবেন। এছাড়া প্রতি বছর ১৪ জুলাই দিনটিতে রাজ্য বনমহোৎসব পালন করা হয়ে থাকে চিড়িয়াখানাতেও। তার মূল পর্বটি এদিন পালন করা হয়েছে ইডেন গার্ডেন্সে। বাকি অংশ পালন করা হল চিড়িয়াখানায়।”
শিম্পাঞ্জি দিবস উপলক্ষে রবিবার চিড়িয়াখানায় আগতদের নিয়ে শিম্পাঞ্জির এনক্লোজ়ারের সামনে একটি গেম সেশনের আয়োজন করে আলিপুর চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি বনমহোৎসব উপলক্ষে এদিন চিড়িয়াখানা চত্বরে বৃক্ষ রোপন কর্মসূচিও নেওয়া হয়। সেখানে মহুল ও বকুল গাছের চারা রোপন করে সবাইকে আরও বেশি করে গাছ লাগানোর বার্তা দেন মাননীয় বনমন্ত্রী। চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে গাছের চারাও বিতরণ করা হয় এদিন। তার আগে চিড়িয়াখানা চত্বরে নেচার ইনফরমেশন সেন্টারের অনুষ্ঠানে চিড়িয়াখানায় শিম্পাঞ্জির দেখভাল যাঁরা করেন তাঁরা মন্ত্রীর উপস্থিতিতে তাঁদের অভিজ্ঞতার কথা ভাগ করে নেন সবার সঙ্গে। এরপর এনক্লোজ়ারের ভিতরে শিম্পাঞ্জির কর্মকাণ্ডের উপর একটি ভিডিও প্রদর্শন করে অনু্ষ্ঠান শেষ করা হয়।