Share it

রুনা খামারু : শুরু হয়ে গেল তিন দিন ব্যাপি ‘বেঙ্গল ফুড অ্যান্ড ফ্রুট ফেস্টিভ্যাল’। রাজ্যের উদ্যানপালন এবং খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প দপ্তরের উদ্যোগে এবং ইন্ডিয়ান চেম্বার অফ কমার্সের সহযোগিতায় শুক্রবার সাড়ম্বরে উৎসবের সূচনা হয় নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে। এখানেই রবিবার পর্যন্ত চলবে এই উৎসব।

প্রদীপ জ্বালিয়ে এদিন উৎসবের শুভ সূচনা করেন উদ্যানপালন এবং খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প দপ্তরের মাননীয় মন্ত্রী শ্রী অরূপ রায়; কৃষিমন্ত্রী শ্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়; বিচারবিভাগ, শ্রম ও আইন দপ্তরের মন্ত্রী শ্রী মলয় ঘটক; এবং রাজ্যের জলসম্পদ ও মৎস্যমন্ত্রী শ্রী বিপ্লব রায়চৌধুরী।
নতুন ধরনের সবজি চাষ ও কৃষকদের সহায়তা প্রদান নিয়ে অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা দর্শকদের সঙ্গে ভাগ করে নেন অনুষ্ঠানে উপস্থিত মন্ত্রী ও আধিকারিকরা। এরপর বিভিন্ন জেলার স্টল ঘুরে দেখেন তাঁরা। পাশাপাশি, কোথায় কী ধরনের সবজি চাষ হচ্ছে এবং তা থেকে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে কী কী তৈরি হচ্ছে তা নিয়ে খোঁজখবরও নেন।

এছাড়া রোগীদের জন্য হাসপাতালগুলিতে প্রাকৃতিকভাবে পাকানো ফল সরবরাহের কথা ভাবনাচিন্তা করা হচ্ছে বলে জানান উদ্যানপালন ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প দপ্তরের মাননীয় মন্ত্রী শ্রী অরূপ রায়। তাঁর কথায়, “সরকারি হাসপাতালে রোগীদের জলখাবারে যে কলা দেওয়া হয় তা কার্বাইডে পাকানো, যা মোটেই স্বাস্থ্যকর নয়। তাই হাসপাতালে সরবরাহের জন্য যদি জেলায় জেলায় ফল পাকানোর বিশেষ রাইপেনিং চেম্বার বানানো যায় তাহলে একদিকে সেটা যেমন কেমিক্যাল ফ্রি হবে তেমনই চাষিদেরও এক্ষেত্রে সুবিধে হবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের আগে কৃষকরা ঘরে আম, লিচুর মতো ফল সময় থাকতে তুলে নিয়ে ওই কোনওরকম রাসায়নিক ছাড়াই যদি ওই বিশেষ চেম্বারে ফল পাকিয়ে তা বাজারে বিক্রি করতে পারেন তাতে তাঁদেরই সুবিধে হবে। কমবে ঝড়-বৃষ্টিতে ক্ষতির পরিমাণ।” পাশাপাশি খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার খুব সম্ভাবনা রয়েছে রাজ্যে, এমনটাও জানান মন্ত্রী।

কৃষিমন্ত্রী শ্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আমরা ক্ষমতায় আসার আগে কৃষকরা আত্মহত্যা করতেন। আত্মহত্যা যাতে আর না করতে হয় তাই তাঁদের জীবনযাত্রা ঠিক রাখতে আমাদের সরকার রাজ্যের কৃষকদের জন্য বীমার ব্যবস্থা করেছে, বছরে দুবার করে কৃষকদের মোট ১০,০০০ টাকা দেওয়া হয়। ছোটো কৃষকরা বছরে পান ৮,০০০ টাকা। আমাদের রাজ্যে কৃষকদের পেনশনের ব্যবস্থা আছে। ৬০ বছর বয়সের মধ্যে কোনও কৃষকের মৃত্যু হলে তার পরিবারকে ২ লাখ টাকা দেওয়া হয়। এরাজ্যের কৃষকদের চাষের জমির খাজনা দিতে হয় না। চাষের জমি বিক্রির ক্ষেত্রে দিতে হয় না মিউটেশন ফি। কৃষিকে উন্নত পর্যায়ে নিয়ে গিয়ে কৃষকদের পাশে থাকতে সবসময় চেষ্টা করেন মুখ্যমন্ত্রী।”

এদিন অনু্ষ্ঠান মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন কৃষি দপ্তরের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি আইএএস শ্রী ওঙ্কার সিং মিনা; উদ্যানপালন এবং খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প দপ্তরের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি আইএএস জনাব খলিল আহমেদ এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরের ডব্লিউবিসিএস (এগজ়িকিউটিভ) শ্রীমতি মণিরূপা ভট্টাচার্য; স্পেশাল সেক্রেটারি শ্রীমতি স্বাতী বন্দ্যোপাধ্যায়; অ্যাডিশনাল সেক্রেটারি শ্রীমতি কস্তুরি সেনগুপ্ত; ইন্ডিয়ান চেম্বার অফ কমার্সের কৃষি ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ কমিটির চেয়ারম্যান শ্রী শ্রীকান্ত গোয়েঙ্কা; ইন্ডিয়ান চেম্বার অফ কমার্সের সিনিয়র ডিরেক্টর মাননীয় মধুপর্ণা ভৌমিক সহ বিশিষ্টরা। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আমেরিকা, জার্মানি, চিন ও ভুটানের প্রতিনিধিরাও।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে, কৃষকদের আরও উৎসাহিত করতে দপ্তরের সমস্ত স্তরের কর্মী ও আধিকারিকদের সরাসরি কৃষকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার আহ্বান জানান কৃষি দপ্তরের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি আইএএস শ্রী ওঙ্কার সিং মিনা। তিনি বলেন, “পশ্চিমবঙ্গের মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশনায় উদ্যানপালন ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ দপ্তরের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। যাঁরা খাদ্য প্রক্রিয়াকরণের কাজ করেন তাঁরা বিভিন্ন ফসলের আমদানির দিকটিও পরিচালনা করেন, তাই এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে আমরা যেন কৃষকদের সঙ্গে সরাসরি আরও আলোচনায় নিযুক্ত হই। এটি তাঁদের আরও সচেতন হতে সাহায্য করবে এবং এতে দপ্তরের কাজেরও অগ্রগতি হবে।”

ইন্ডিয়ান চেম্বার অফ কমার্সের কৃষি ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ কমিটির চেয়ারম্যান শ্রী শ্রীকান্ত গোয়েঙ্কা বলেন, “রাজ্যে প্রায় ৭১ লাখ কৃষক পরিবার রয়েছে, যার মধ্যে ৯৬ শতাংশই ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক। বিদেশী ফল এবং সবজি যেমন ড্রাগন ফল, অ্যাভোকাডো এবং সারা বছর ধরে উৎপাদিত পণ্যের উপর ফোকাস করে বাংলায় কৃষি ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণের বৈচিত্র্যকে উদযাপন করা হয় এই উৎসবের মাধ্যমে। রাজ্যে ব্রোকলি, মাশরুম চাষ এবং স্ট্রবেরি বাগানের যেভাবে অগ্রগতি হয়েছে তাতে আমরা গর্বিত, যা আমাদের কৃষকদের জন্য নতুন পথ খুলে দিচ্ছে। সরকারি আধিকারিক ও বিশেষজ্ঞদের নির্দেশনায়, উদ্যানপালন ও ফুলের চাষের প্রভুত উন্নতি হয়েছে। যা পশ্চিমবঙ্গকে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণের একটি শীর্ষস্থানীয় রাজ্যে পরিণত করেছে। এই উৎসব শুধু আমাদের ভালো কাজগুলি প্রদর্শনীর জন্য নয় বরং এই অঞ্চলে আরও বিনিয়োগ, প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন এবং রপ্তানি বৃদ্ধিকে উৎসাহিত করার একটি প্ল্যাটফর্ম। কৃষি ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণে বৃহত্তর সাফল্যের জন্য এই উৎসব অনুঘটক হিসেবে কাজ করবে বলে আশা রাখি।”

অনুষ্ঠানের একেবারে শেষ পর্বে আয়োজন করা হয় ক্যুইজ়ের। তাতে সবার অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো। এই উৎসবের বাকিদিনগুলিতেও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সেমিনার, প্রদর্শনী ও প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে বলে দপ্তর সূত্রে জানানো হয়েছে।

Share it