সুদীপ্ত চক্রবর্তী, গঙ্গাসাগর: অযোধ্যায় রামমন্দিরের উদ্বোধন ঘিরে চারদিকে সাজ সাজ রব। সেই আবহেই অযোধ্যা মন্দির নিয়ে মুখ খুললেন পুরীর গোবর্ধন পীঠমের শঙ্করাচার্য স্বামী নিশ্চলানন্দ সরস্বতী মহারাজ। নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে ধর্মীয়’দাদাগিরি’র অভিযোগ এনেছেন তিনি। সেইসঙ্গে নাম না করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন পুরীর শঙ্করাচার্য। তাঁর কথায়—”মুঝসে যো টকরায়ে গা, চুরচুর হো জায়েগা!” অর্থাৎ “আমার সঙ্গে দ্বন্দ্বে যে বা যাঁরা জড়িয়েছেন, তাঁরা নিজেরাই ক্ষমতাচ্যুত হয়েছেন। অস্তিত্ব হারিয়েছেন।” ওয়াকিবহাল মহলের বক্তব্য, নাম না করলেও, এদিনের কটাক্ষ-বাণে শঙ্করাচার্য যে প্রধানমন্ত্রী তথা বিজেপিকেই বিঁধেছেন, তা স্পষ্ট।
শনিবার গঙ্গাসাগর মেলায় শিবিরে এক সাংবাদিক বৈঠক করেন শঙ্করাচার্য স্বামী নিশ্চলানন্দ সরস্বতী মহারাজ। সেখানেই নাম না করে প্রধানমন্ত্রীকে কটাক্ষ করেন তিনি। বলেন, “সব জায়গায় নিজেকে জাহির করাটা উন্মাদের লক্ষণ।” বলা বাহুল্য, সনাতন ধর্মের প্রধানের এই মন্তব্য পছন্দ হয়নি গেরুয়া শিবিরের। পালটা তোপ দেগেছে বিজেপি নেতৃত্ব। তাঁকে বিজেপি বিরোধী, এমনকী তাঁর গায়ে ‘কংগ্রেসপন্থী শঙ্করাচার্য’ তকমা লাগানোর প্রচারে নেমে পড়েছে পদ্মশিবিরের লোকজন। তবে তাতে নিজের অবস্থান থেকে একচুলও সরেননি স্বামী নিশ্চলানন্দ। জানিয়ে দিয়েছেন, মন্দিরের কাজ সম্পূর্ণ না করে রামলালার মূর্তি প্রতিষ্ঠা সম্পূর্ণ সনাতন ধর্মের অবমাননার সামিল। অব্রাহ্মণ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদী অযোধ্যার মন্দিরের গর্ভগৃহে ‘রামলালা’ প্রতিষ্ঠা করবেন! স্বামী নিশ্চলানন্দ সরস্বতীর মতে, “এটা প্রচার-সর্বস্ব রাজনীতি এবং গোটাটাই শাস্ত্রের অমর্যাদা”। তাই, তিনি বা চার শঙ্করাচার্যের কেউই ওই মূর্তি প্রতিষ্ঠার দিনে অযোধ্যায় উপস্থিত থাকবেন না।
তাঁর প্রভাব যে অপরিসীম তা নিয়েও যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী পুরীর শঙ্করাচার্য। কেন তাঁর প্রভাব অপরিসীম, এদিন সেই ব্যাখ্যাও দিয়েছেন স্বামী নিশ্চলানন্দ সরস্বতী। বলেছেন, “যাঁর কথায় লোভ, বিদ্বেষ, আর উদ্বেগ থাকে, সেই ব্যক্তির বাণীর কোনও প্রভাব পড়ে না। আমার বাণীতে এসব নেই বলেই আমার কথার প্রভাব আছে।” তাঁকে কংগ্রেসের লোক বলে প্রচারেও অসন্তুষ্ট স্বামী নিশ্চলানন্দ সরস্বতী। পালটা তিনি বলেন, “কংগ্রেসের লোক বলছে আমাকে! কিন্তু কংগ্রেসের সময়ও আমি জনসঙ্ঘের হয়ে কথা বলতাম না।” তাঁর স্পষ্ট বার্তা—”আমার সঙ্গে কোনও রাজনৈতিক দলের সম্পর্ক নেই। সেই কথা সোনিয়া, যোগী, মোদী সকলেই জানেন।”
এবারের গঙ্গাসাগর মেলা আয়োজন নিয়েও রাজ্য সরকারের ব্যবস্থাপনায় খুশি স্বামী নিশ্চলানন্দ সরস্বতী। তিনি বলেন, “মেলার আয়োজনে রাজ্য সরকারের বিবেকের পরিচয় মিলেছে। সীমার মধ্যে থেকে মেলার আয়োজন করে বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছে। অযাচিত হস্তক্ষেপ করে মেলার মর্যাদা নষ্ট করার কোনও চেষ্টা হয়নি।”