রুনা খামারু: গরলগাছা সায়েন্স ক্লাবের উদ্যোগে উদ্বোধন হল ৪৩-তম বিজ্ঞান, কৃষি ও গ্রামীণ শিল্প মেলা। গরলগাছা হাইস্কুল মাঠে বুধবার বিকেলে ফিতে কেটে এই মেলার উদ্বোধন করেন গরলগাছা হাইস্কুলের প্রাক্তন ছাত্র ও রাজ্য উদ্যানপালন দপ্তরের প্রশাসনিক অধিকর্তা শ্রী দীপ্তেন্দু বেরা।
উপস্থিত ছিলেন দপ্তরের যুগ্ম অধিকর্তা ড. সমরেন্দ্র নাথ খাঁড়া, হুগলি জেলা উদ্যানপালন আধিকারিক ড. শুভদীপ নাথ, সহ উদ্যানপালন আধিকারিক শ্রী অর্কপ্রভ সরকার, জীব বৈচিত্র্য পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি ড. অশোক কান্তি সান্যাল, হুগলি জেলা পরিষদের শিক্ষা, সংস্কৃতি, তথ্য ও ক্রীড়া কর্মাধ্যক্ষ ড. সুবীর মুখোপাধ্যায়, ক্যালকাটা স্কুল অফ নার্সিংয়ের অধিকর্তা ড. বিশ্বজিৎ সাহা, গরলগাছা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক রবীন্দ্রনাথ সাধুখাঁ সহ গরলগাছা সায়েন্স ক্লাবের সদস্যরা। মেলা চলবে পয়লা জানুয়ারি পর্যন্ত, প্রতিদিন বিকেল ৩টে থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত।
অনুষ্ঠানে উদ্যানপালন দপ্তরের প্রশাসনিক অধিকর্তা শ্রী দীপ্তেন্দু বেরা বলেন, “আগামী প্রজন্ম আমাদের দেশ তথা জাতির ভবিষ্যৎ। সেই ভবিষ্যৎ যদি ঠিকঠাক গড়ে না ওঠে তাহলে দেশ এগোবে কী করে। এবং এই দেশ এগোনর ক্ষেত্রে, উন্নয়নের ক্ষেত্রে এবং সঠিকভাবে সমাজকে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের অবদান অনস্বীকার্য। এই যে বিজ্ঞান মেলা হচ্ছে ৪৩-বছরে আজকে পদার্পণ করেছে এই মেলা। সঠিকভাবে, সুস্থভাবে, সুন্দরভাবে যে বিজ্ঞান মেলা হচ্ছে এটাকে বাড়িয়ে নিয়ে যেতে হবে কারণ ছাত্র সমাজ, যুব সমাজ, কিশোর-কিশোরী যারা আছে তারা যাতে সঠিকভাবে বেড়ে উঠতে পারে এবং সেক্ষেত্রে শুধু মেলা নয়, বিজ্ঞান মঞ্চকে বলব সারা বছর যেন তাদের কর্মকাণ্ড থাকে। যাতে করে বিজ্ঞান মনস্কতা, বিজ্ঞান চর্চা যেন সঠিকভাবে শিশুদের মধ্যে প্রবাহিত হয় পরবর্তী প্রজন্মের ক্ষেত্রে এবং সঠিক চিন্তাভাবনা নিয়ে সমাজ যাতে সুন্দরভাবে গড়ে ওঠে।”
গরলগাছা হাইস্কুলের প্রাক্তন ছাত্র ও উদ্যানপালন দপ্তরের যুগ্ম অধিকর্তা ড. সমরেন্দ্র নাথ খাঁড়া অনুষ্ঠানে বলেন, “গরলগাছা হাইস্কুলের প্রাক্তনী যাঁরা রয়েছেন এখন তাঁদের অনেকেই সুপ্রতিষ্ঠিত। এবং এখন আধুনিকতার ছোঁয়ায় নতুন যে সমাজমাধ্যম ইত্যাদি এই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতেও নতুন প্রজন্ম ছোটো ছোটো শিক্ষা নেবে। সেজন্যই গরলগাছা সায়েন্স ক্লাব ৪৩ বছর ধরে এই মেলা করে আসছে। আগামীদিনেও আমরা আশাবাদী যে নতুন প্রজন্ম নতুন নতুন শিক্ষা নেবে। আর আবহাওয়া পরিবর্তনজনিত কারণে যা প্রয়োজন সেটাও কিন্তু আমাদের পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিভিন্ন দপ্তর যেমন চেষ্টা করছে বিজ্ঞান ক্লাবও সেটা করছে এবং কৃষক সমাজও এর ফলপ্রসূ দিক পেয়ে যাবে।”
হুগলি জেলা উদ্যানপালন দপ্তরের তরফে এই মেলা প্রাঙ্গণে একটি প্রদর্শনী স্টল দেওয়া হয়েছে। সায়েন্স মেলার উদ্বোধন ও পতাকা উত্তোলনের পর ফিতে কেটে এই স্টলের উদ্বোধন করেন রাজ্য উদ্যানপালন দপ্তরের অধিকর্তা শ্রী দীপ্তেন্দু বেরা। স্টলের মূল আকর্ষণ জেলার উদ্যানজাত ফসলের প্রদর্শনী। এছাড়া বিজ্ঞান সচেতনতার লক্ষ্যে মেলা প্রাঙ্গণে দেওয়া হয়েছে আরও একাধিক স্টল। সেগুলির মধ্যে স্কুল পড়ুয়াদের মডেল প্রদর্শনী স্টল বেশ আকর্ষণীয়। বিজ্ঞানের বিভিন্ন মডেল ডেমো সহ প্রদর্শনীর মাধ্যমে স্কুল পড়ুয়াদের জনসচেতনামূলক উদ্যোগ নজর কাড়ে সবচেয়ে বেশি।
হুগলি জেলা পরিষদের শিক্ষা, সংস্কৃতি, তথ্য ও ক্রীড়া কর্মাধ্যক্ষ এবং গরলগাছা হাইস্কুলেরই প্রাক্তনী ড. সুবীর মুখোপাধ্যায় এদিন বলেন, “এই ক্লাবের উদ্যোগে ৪৩ বছরের মেলা সেজে উঠছে ক্রমশ। এলাকাবাসীদের বিজ্ঞান মনস্ক ও বিজ্ঞান চেতনা বিকাশের লক্ষ্যে এবং ছোটো ছোটো ছেলেমেয়েদের বিভিন্ন মডেলের মাধ্যমে বিজ্ঞান ভাবনায় নিবেশিত করতে এই সায়েন্স ক্লাবের অবদান অনস্বীকার্য। এই মেলা এলাকার অন্যতম গর্বের এবং মেলাটি ধীরে ধীরে এলাকার শিক্ষা, সংস্কৃতি মনস্ক মানুষের কাছে প্রাণের মেলায় পরিণত হয়েছে।”
গরলগাছা সায়েন্স ক্লাবের সভাপতি শ্রী রাইচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বিভিন্ন স্কুলের ছেলেমেয়েরা এখানে আসে মডেল প্রদর্শনীর জন্য। এটাই এই মেলার মূল আকর্ষণ। এছাড়াও ক্যুইজ, ডিবেট সহ অনেক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয় এখানে। শিশু স্বাস্থ্য প্রদর্শনীতে চিকিৎসকরা এসে শিশুদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন, পুরস্কৃতও করা হয়। মানুষের মনে আলোড়ন ফেলায় গুরুত্ব বাড়ছে এই মেলার। অতীতে যে সাফল্য পেয়েছি এবারের মেলাতেও সেই সাফল্য পাব বলে আশা রাখি।”