Share it

রুনা খামারু: বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে মঙ্গলবার সূচনা হল সপ্তম রিজিওনাল সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি কংগ্রেসের। বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাজ্য বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও বায়োটেকনোলজি দপ্তরের যৌথ উদ্যোগে দু’দিনের এই আঞ্চলিক সায়েন্স কংগ্রেসের আয়োজন হয়। ২৮ ফেব্রুয়ারি এবং ১ মার্চ ৩২-তম রাজ্য সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি কংগ্রেস আয়োজিত হতে চলেছে। তারই সুর বেঁধে দিল বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় সহ অন্যান্য কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত আঞ্চলিক সায়েন্স কংগ্রেস।

বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ উদ্যোগে এবার রাজ্যের ছ’টি রিজিয়নে আয়োজিত হচ্ছে এই সপ্তম আঞ্চলিক কংগ্রেস। হাওড়া, নদীয়া, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা নিয়ে গঠিত পঞ্চম রিজিয়নের সপ্তম সায়েন্স কংগ্রেস আয়োজিত হয় নদীয়া জেলার মোহনপুরে অবস্থিত বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৯৯৪ সালে প্রথমবার রাজ্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এবং আঞ্চলিক বিজ্ঞান কংগ্রেসের ভাবনা প্রথমবার বাস্তবায়িত হয় ২০১৬-১৭ সালে।

মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের কনভোকেশন হলে পঞ্চম রিজিয়নের সায়েন্স কংগ্রেসের শুভ সূচনা হয় প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে। সূচনা করেন রাজ্যের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী শ্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস, পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী শ্রী প্রদীপ কুমার মজুমদার, দিল্লি আইসিএআর-এর ডিডিজি (এডুকেশন) ডক্টর আর সি আগরওয়াল, বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডক্টর অশোক কুমার পাত্র সহ অন্যান্যরা। যুবক-যুবতিদের বিজ্ঞান সম্পর্কে আরও আগ্রহী করে তুলে সেই সংক্রান্ত ভাবনার মত বিনিময়ের জন্যই মূলত এই কংগ্রেসের আয়োজন। এই বছর সায়েন্স কংগ্রেসের থিম “সুস্থায়ী উন্নয়নে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI) এবং মেশিন লার্নিংয়ের (ML) মতো উদীয়মান প্রযুক্তির প্রয়োগ”। তাই অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিশিষ্টদের আলোচনায় এই বিষয়গুলিই উঠে আসে বিশেষভাবে।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে উদীয়মান গবেষকদের উদ্দেশে রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী শ্রী প্রদীপ কুমার মজুমদার বলেন, “ষাটের দশকে আমাদের দেশে কৃষি উৎপাদনের যা পরিস্থিতি ছিল ভারত এখন তার তিন গুণেরও বেশি উৎপাদন করে। বিজ্ঞানের অগ্রগতির ফলেই সেটা সম্ভব হয়েছে। সুতরাং বিজ্ঞান আমাদের কাছে অপরিহার্য। এবং বিজ্ঞানিক উন্নয়ন আমাদের যেকোনও চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে সাহায্য করে। এখনও আমাদের কাছে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ রয়েছে। কৃষকরা চাষ করতে গিয়ে ঠিক কী ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন সেগুলিকে সনাক্তের পাশাপাশি মানুষের প্রয়োজন কী সেটা বুঝতে হবে এবং তাদের জীবন কীভাবে সহজতর করে তোলা যায় তার সমাধান সূত্র বার করতে হবে।”

রাজ্যের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী শ্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস বলেন, “আমাদের ৭০ ভাগের বেশি মানুষ গ্রামের বাসিন্দা তাদের কাছে বিজ্ঞানের আলোচনা পৌঁছে দিতে হবে। গাছ কেন গোলাকার হয়, এমন একটা কমন বিষয়ের মূলেও রয়েছে বিজ্ঞান। এসবই এই সেমিনারের আলোচনার বিষয়বস্তু। বিজ্ঞান আমাদের এগিয়ে নিয়ে যায় এবং আমাদেরও বিজ্ঞানের সঙ্গে এগিয়ে যেতে হবে। এরকম বিজ্ঞান ভিত্তিক সেমিনার খুবই দরকার। এখানকার আলোচনায় কৃষকদের জন্য ভালো ও উপযুক্ত বিষয় উঠে আসবে বলেই আশাবাদী।”

বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ের উপর তরুণ গবেষক, বৈজ্ঞানিক ও শিক্ষাবিদদের গবেষণাপত্র প্রেজ়েন্ট করার আহ্বান জানানো হয় এই কংগ্রেসে। এক্ষেত্রে আঞ্চলিক কংগ্রেসে নির্বাচিত লেখকদের রাজ্যস্তরে আয়োজিত সায়েন্স কংগ্রেসে পেপার প্রেজ়েন্ট করার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হবে। এছাড়া প্রথিতযশা বৈজ্ঞানিক এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে পথপ্রদর্শক স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু, প্রফেসর প্রশান্ত চন্দ্র মহালানোবিস ও স্যার সি ভি রমনের সম্মানে বিজ্ঞানের জনপ্রিয় টপিকগুলির উপর তিনটি মেমোরিয়াল লেকচারের জন্যও সময় রাখা হয়। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাগানে উৎপাদিত বিভিন্ন শস্য, ফল ও ফুলের প্রদর্শনী করা হয় দু’দিনের এই কংগ্রেসে।

রাজ্য বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং বায়োটেকনোলজি দপ্তরের আঞ্চলিক নোডাল অফিসার এবং জয়েন্ট অর্গানাইজ়িং সেক্রেটারি শ্রীমতি সুব্রতা বি দত্ত বলেন, “পঞ্চম রিজিয়নের যে রিসার্চ স্কলাররা আছেন তাঁরা এখানে পেপার প্রেজ়েন্ট করেছেন। আর ছ’টা রিজিয়নের মধ্যে এই পঞ্চম রিজিয়নই সবচেয়ে বেশি গবেষণাপত্র পেয়েছে। এবার আমরা ৫০৪টি রিসার্চ পেপার পেয়েছি। সেগুলি দু’জন এক্সটারনাল ইভ্যালুয়েট করেছেন। প্রতিটি বিষয়ে ৩০ জনকে এখানে ওরালি পেপার প্রেজ়েন্ট করার সুযোগ দিতে পেরেছি আমরা। কোয়ালিটির দিকটিতে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে এবং এক্ষেত্রে কোনওরকম কমপ্রোমাইজ় করা হয়নি। আউটস্ট্যান্ডিং প্রেপার প্রেজ়েন্ট করার জন্য ১০,০০০ টাকা করে সাম্মানিক দেওয়া হচ্ছে।”

Share it