রুনা খামারু: ধানের পর পশ্চিমবঙ্গের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ অর্থকরী ফসল হল আলু। কিন্তু আলুবীজের জন্য অন্য রাজ্যের উপর সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করতে হয় এই রাজ্যকে। আলুবীজের ক্ষেত্রে এই প্রতিবন্ধকতা দূর করতে সচেষ্ট রাজ্য সরকার। কারণ, বাংলায় আলুবীজ আসে মূলত পঞ্জাব থেকে আর এই বীজ (Potato Seed) যে সবসময় গুণমানের হয় এমন নয়, তার উপর রয়েছে পরিবহনের খরচ। কৃষকদের এই সমস্যা সমাধানের জন্য পেরুর ইন্টারন্যাশনাল পটাটো সেন্টার বা সিআইপি-র সঙ্গে মউ স্বাক্ষর করে এপিক্যাল রুটেড কাটিং (এআরসি) পদ্ধতি বা প্রযুক্তিতে আলুর বীজ তৈরির নতুন উদ্যোগ নিয়েছে রাজ্য সরকার। রাজ্যের গবেষণা কেন্দ্রগুলিতে রূপায়িত হচ্ছে এই প্রযুক্তি। আর সেই কাজের অগ্রগতি খতিয়ে দেখতে সম্প্রতি রাজ্যে আসে সিআইপি-র প্রতিনিধি দল। পশ্চিম মেদিনীপুরের আনন্দপুর ও নদীয়ার কৃষ্ণনগরে রাজ্য সরকারের যে ফার্মে এআরসি (Apical Rooted Cutting) প্রযুক্তিতে আলুবীজ উৎপাদনের কাজ চলছে তা ঘুরে দেখেন তাঁরা।
টিস্যু কালচারে তৈরি আলুগাছকে সরাসরি মাটিতে বপন না করে মাটি ছাড়াই কোকোপিটের উপর গাছের ডগা কেটে কেটে বসিয়ে সেই গাছ পরিবর্ধন করা হয় আরও কয়েকটি প্রজন্ম ধরে। তারপর মাটিতে বসানোর উপযুক্ত হলে তবেই বীজ তৈরির জন্য মাটিতে বসানো হয় এআরসি। এতে বীজের গুণমান বজায় থাকে। যা বাজার চলতি বীজের তুলনায় অনেক বেশি ভালো মানের বলেই দাবি কৃষি বিশেষজ্ঞদের। সেইসঙ্গে রাজ্যের জেলাগুলিতে কৃষক সংগঠনগুলির মাধ্যমেও এই বীজ উৎপাদন করা হচ্ছে।
সিআইপি-র সিনিয়ার সায়েনটিস্ট কল্পনা শর্মা মেদিনীপুরের ফার্ম পরিদর্শন শেষে বলেন, “আমরা এআরসি প্রযুক্তিতে আলুবীজ তৈরির কাজ ঘুরে দেখলাম। এখানে খুব ভলো কাজ হচ্ছে। ৮ থেকে ১০ লাখ এআরসি বীজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল মেদিনীপুরে, কৃষক ও প্রোজেক্ট পার্টনারদের নিয়ে এখানে সেই লক্ষ্যমাত্রা ইতিমধ্যেই পূরণ হয়েছে।”
পশ্চিম মেদিনীপুরের ইকনমিক বোটানিস্ট-থ্রি ডক্টর হিমাদ্রি শেখর দাস বলেন, “সিআইপি-র সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের যে মউ স্বাক্ষর হয়েছে সেই অনুযায়ী তাদের কাছ থেকে প্রযুক্তি নিয়ে সিআইপি-র সঙ্গে যৌথ প্রচেষ্টায় মেদিনীপুরে প্রাথমিকভাবে পাঁচ লক্ষ এআরসি চারা তৈরির লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছিল। সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করার পর আমরা প্রায় দশ লাখের কাছাকাছি এআরসি বীজ উৎপাদনে এগিয়ে গেছি। এবং পরবর্তীতে সিআইপি-র চাহিদা মতো দার্জিলিং, কালিম্পং ও মোহিতনগরে তাদের যে কাজ চলছে সেখানকার কাজে যে এআরসি প্রয়োজন হবে তা আমরা এখান থেকে সরবরাহ করতে সক্ষম হব।”
নদীয়ার ইকনমিক বোটানিস্ট-নাইন শ্রী সায়ন্তন দে বলেন, “২০৩০ সালের মধ্যে রাজ্যকে আলুবীজে স্বয়ম্ভর করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। সেজন্য ৬০ লক্ষ মতো এআরসি তৈরি করতে হবে। এবছর ১৮ লক্ষ এআরসি লাগানো হয়েছে এরাজ্যের বিভিন্ন জেলায়। ইন্টারন্যাশনাল পটাটো সেন্টার বা সিআইপি-র সঙ্গে যৌথভাবে এই কাজ হচ্ছে। রাজ্যে তিনটি ল্যাবরেটরিতে টিস্যু কালচার পদ্ধতিতে এবং একাধিক গ্রিন হাউজে এআরসি করা হয়। এভাবে আমরা যে লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছি তাতে স্থির বিশ্বাস যে ২০৩০ সালের মধ্যে রাজ্য আলুবীজে স্বনির্ভর হবে।”
রাজ্যের কৃষি অধিকর্তা ও এআরসি প্রকল্পের প্রধান শ্রী প্রবীর হাজরা বলেন, “২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে আমাদের রাজ্যে এআরসি প্রকল্প শুরু হয়। গত বছর চার লক্ষ এআরসি চারা থেকে ২৮ লক্ষ মিনি টিউবার তৈরি করা হয়। এবছর ১৫ লক্ষ এবং আগামী বছর ৬০ লক্ষ এআরসি চারা তৈরির লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। এইভাবে ২০৩০ সালের মধ্যে আলুবীজে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের জন্য এআরসি চারা ও মিনি টিউবার তৈরি করা হবে।”