রুনা খামারু : ঘাটতি মেটাতে ও কৃষকদের বিকল্প চাষে আগ্রহী করে তুলতে এবার বর্ষার পেঁয়াজ চাষে জোর দিল হুগলি জেলা উদ্যানপালন বিভাগ। তাই অসময়ের পেঁয়াজ চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করতে বুধবার কৃষকদের নিয়ে একটি প্রশিক্ষণ শিবিরের আয়োজন করা হয়। রাষ্ট্রীয় কৃষি বিকাশ যোজনা ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষের অর্থানুকূল্যে চুঁচুড়ায় সেন্টার অফ এক্সেলেন্স ফর ভেজিটেবল বা সবজি উৎকর্ষতা কেন্দ্রে আয়োজন করা হয় একটি প্রশিক্ষণ শিবিরের। উপস্থিত ছিলেন হুগলি জেলার অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) ডঃ অমিতেন্দু পাল, জেলা কৃষি কর্মাধ্যক্ষ শ্রী মদন মোহন কোলে ও জেলা উদ্যানপালন আধিকারিক ড. শুভদীপ নাথ সহ অন্যান্যরা।
পশ্চিমবঙ্গে সুখসাগর পেঁয়াজ ওঠে চৈত্র-বৈশাখ মাসে। সংরক্ষণ করে রেখে তা ভাদ্র মাস পর্যন্ত চালানো যায়। কিন্তু তারপরে যে পেঁয়াজটা দরকার হয় সেটা বাইরের রাজ্যের মূলত নাসিক থেকে আনতে হয়। এক্ষেত্রে বর্ষাকালীন পেঁয়াজ চাষে জোর দিলে বাইরের রাজ্যের উপর নির্ভরশীলতা কমবে বলে জানান জেলা উদ্যানপালন আধিকারিক ড. শুভদীপ নাথ। তাঁর কথায়, “এই প্রশিক্ষণ শিবিরে প্রযুক্তিগত পরামর্শ দেওয়া হল চাষীদের। এছাড়া রাজ্য দপ্তর থেকে বিনামূল্যে বীজের ব্যবস্থা করা হয়েছে। জেলার ১৪টি এফপিসি ও ৬টি ওয়াটার ইউজ়ার্স অ্যাসোসিয়েশন, সিঙ্গুর, চুঁচুড়া, মগরার অগ্রণী চাষীভাইদের নিয়েই এদিনের কর্মশালা হয়। পেঁয়াজের বীজের পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব উপায়ে রোগপোকা নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্লু স্টিকি ট্র্যাপ পেঁয়াজের চোষি পোকা নিয়ন্ত্রণের জন্য দেওয়া হয়েছে। তার সঙ্গে ৫০ এমএল করে ১০ হাজার পিপিএম-এর করে নিম তেল দেওয়া হল চাষিদের। রাজ্য থেকে আমরা ৫০০ কেজি বীজ পাব। এই বীজ দিয়ে ৫০০ বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করা যাবে যাবে। ফলে হুগলি জেলা পেঁয়াজে অনেকটাই স্বনির্ভর হতে পারবে।”
বর্ষাকালীন পেঁয়াজ চাষের বীজ কোথা থেকে আসছে বা শীতকালীন পেঁয়াজের সঙ্গে এই পেঁয়াজ চাষের পার্থক্য কেমন, এ প্রসঙ্গে আধিকারিক ড. শুভদীপ নাথ বলেন, “নাসিকেরই এগ্রিফাউন্ড ডার্ক রেড বীজ চাষ করার জন্য দেওয়া হচ্ছে কৃষকদের। এটা বর্ষা ও শীত উভয় সময়ে চাষ করা যাবে। কিন্তু সংরক্ষণ করা যাবে না সুখসাগর পেঁয়াজের মতো। বর্ষার পেঁয়াজটা যখন উঠবে তখন চাষি ভাইরা ভালোরকম দাম পাবেন কারণ, ওই সময় পেঁয়াজের চাহিদা থাকে বলেই বাইরের রাজ্য থেকে আমদানি করতে হয়। এখানকার কৃষকরা নিজের ফসল দিয়ে ওই সময় বাজারটা ধরতে পারলে পাইকারি বাজারে ভালো দাম পাবেন। তাই অন্য ফসলের পরিবর্তে পেঁয়াজ চাষে জোর দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে চাষিদের। বর্ষাকালীন পেঁয়াজটা ডাঙা জমিতে সবজি চাষের মতো করে চাষ করতে হবে। আর রোগপোকা দমন নিয়ে একটু সচেতন থাকতে হবে।”
জেলা কৃষি কর্মাধ্যক্ষ শ্রী মদন মোহন কোলে বলেন, “এটা অভিনব উদ্যোগ তবে নতুন নয়। আমাদের এখানে আগেও বর্ষাকালীন পেঁয়াজ চাষের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। মাঝে কয়েক বছর বিভিন্ন কারণে সেটা থমকে থাকলেও এবারে রাজ্যে ব্যাপক হারে জোর দেওয়া হচ্ছে বর্ষাকালীন পেঁয়াজ চাষে। খাদ্যের জোগান বজায় রাখতে এবং পেঁয়াজে রাজ্যকে স্বনির্ভর করতে মুখ্যমন্ত্রী বাংলাজুড়ে যে উদ্যোগ নিয়েছেন তাতে আমাদের হুগলি জেলাও উপকৃত হবে। আমাদের জেলায় বর্ষাকালীন পেঁয়াজ চাষের প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে জেলা উদ্যানপালন দপ্তরের সুপারিশ অনুযায়ী রাজ্যের কাছে বর্ষার পেঁয়াজ চাষের যে কোটা চাওয়া হয়েছিল তা মেনে সরকার ৫০০ কেজি পেঁয়াজ দানার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। জেলার বিভিন্ন ব্লকের ১৪টি এফপিসি-র অধীন পেঁয়াজ চাষিদের সঙ্গে নিয়ে বর্ষাকালীন পেঁয়াজ চাষের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আগামী দিনে রাজ্য সরকার আরও অ্যালটমেন্ট দেবে বলে আমরা আশাবাদী। এই পেঁয়াজটা চাষ করলে চাহিদা যখন বেশি থাকবে তখন নিজেদের চাষের পেঁয়াজ জোগান দিয়ে চাষিরা লাভ করতে পারবেন। আর কৃষকদের এই চাষে আরও উৎসাহীত করতে জেলার পক্ষ থেকে সবসময়ই চেষ্টা থাকবে।”