দিদির বাড়ির পাশের গ্রামই আজও উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত। ফলে গ্রামে গিয়ে শুনতে হল এক গুচ্ছ অভাব অভিযোগ। সব শুনে গ্রামে আপাতত ১৩০ টি শৌচালয় নির্মাণের নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বোলপুরে এলে বরাবর মুখ্যমন্ত্রী রাত্রিবাস করেন সোনাঝুরি জঙ্গলের পাশে আমারকুঠি বনবাংলোতে। তার পাশের গ্রাম বল্লভপুরডাঙ্গা গ্রাম। ওই গ্রামে বনবাস করেন ১২০ পরিবার। অধিকাংশই আদিবাসী। কয়েকটি পরিবার রয়েছেন তফসিলি। বুধবার সকালে আমারকুঠি থেকে হেলিকপ্টারে কলকাতা ফেরার সময় হঠাৎ গাড়ি ঘুরিয়ে বল্লভপুরডাঙ্গা গ্রামে পৌঁছন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গ্রামে প্রথম সঞ্জয় দাস নামে যুবকের সঙ্গে কথা বলেন। এরপর গ্রামের আদিবাসী মহিলাদের সঙ্গে কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। দুয়ারে মুখ্যমন্ত্রীকে পেয়ে একগুচ্ছ অভাব অভিযোগ শোনান তাঁরা।
গ্রামের বাসিন্দা বাংলা অনার্স ছাত্রী তুলসি সোরেন বলেন, “আজও গ্রামের রাস্তা পাকা হয়নি। মাত্র সাতটি টিউবওয়েল রয়েছে গ্রামে। তাতেই গৃহস্থলীর কাজ থেকে, স্নান ও পানীয় হিসাবে ব্যবহার করা হয়। অন্যান্য জায়গায় সাব মার্সিবল বসানো হলেও আমাদের গ্রামে নেই। ফলে জলের সমস্যা রয়েছে। রাস্তায় নেই আলো। গ্রামে সরকারি বাড়ি, শৌচালয় নির্মাণ হলেও তা ব্যবহারের অযোগ্য। একটি আদিবাসী মন্দির গড়া হলেও সেখানে পুজো করার জন্য ঢোকা যায় না। সব নিম্নমানের নির্মাণ হওয়ায় ব্যবহার করা যায় না। শৌচালয়ে ঢোকা যায় না। ফলে সবাইকে উন্মুক্ত জায়গায় শৌচকর্ম সারতে হয়। স্নান করতে হয় জনসমক্ষে।” এসব কথা শুনে জেলাশাসক এবং অনুব্রত মণ্ডলকে ওই গ্রামে শৌচালয় নির্মাণের নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী।
তুলসী সোরেন আক্ষেপ করে বলেন, “আমরা যখন কলেজে যাই, তখন সবাই বলে তোরা তো দিদির বাড়ির পাশের গ্রামের লোক। তোদের গ্রামের উন্নয়ন হয় না, হতে পারে না। কিন্তু, বিশ্বাস করুন আজও আমাদের গ্রাম অবহেলিত। গ্রামের ছেলেমেয়েদের অনেকেই কমপক্ষে উচ্চমাধ্যমিক পাশ। কিন্তু, পড়াশোনা শেষে মা-বাবার সঙ্গে মাঠে কাজ করতে যেতে হয়। কোন কর্মসংস্থান নেই। কারও কারও BEd কিংবা DEd করার ইচ্ছে থাকলেও আর্থিক সঙ্গতি নেই। ফলে প্রত্যেকে দিনমজুরই করে সংসার চালান। ১০-১২টি আদিবাসী নৃত্যশিল্পীর দল রয়েছে। তাদের কোনও শিল্পী কার্ড নেই। দিদির বাড়ির পাশের গ্রামের লোক হয়েও আজও আমরা অবহেলিত। দিদিকে কাছে পেয়ে কিছু কথা বললাম। দেখা যাক কতটা পূরণ হয়।”
এদিন গ্রামে গিয়ে রান্নায় হাত লাগান মুখ্যমন্ত্রী। দোকানের সামনে মোড়ায় বসে চা খান। এরপর সেই দোকানে খুন্তি ধরে রান্না করতে শুরু করেন। এরপর হেলিপ্যাডের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। সেখানেও কিছু স্থানীয় মহিলার বিভিন্ন অভাব অভিযোগ শোনেন।