নিউজ ওয়েভ ইন্ডিয়া: মতুয়া সম্প্রদায়কে নিয়ে আঞ্চলিক কমিটি গঠন করল অখিল ভারত হিন্দু মহাসভা। কমিটিতে রাখা হয়েছে ওই সম্প্রদায়ের ২৭ জনকে। কমিটির সভাপতি শুভ শিল এবং সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত করা হয়েছে তনুশ্রী বিশ্বাসকে। সেইসঙ্গে অন্যায়ভাবে NRC প্রয়োগের বিরোধিতাও করেছে অখিল ভারত হিন্দু মহাসভা (ABHM)। রবিবার হরিচাঁদ ঠাকুর ও গুরুচাঁদ ঠাকুরের আশীর্বাদধন্য পবিত্র ঠাকুর নগরে হিন্দু মহাসভার মতুয়া কর্মী সমর্থকদের নিয়ে পুজো করা হয়। এরপর কমিটি গঠন করে অখিল ভারত হিন্দু মহাসভা রাজ্য সভাপতি ডক্টর চন্দ্রচূড় গোস্বামী ঘোষণা করেন, “২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত কেন্দ্রে লড়াই করা এবং মতুয়া সহ সমস্ত সনাতনী মানুষদের নিঃশর্ত নাগরিকত্বের দাবিতে জনআন্দোলনের পথে নামা হবে খুব শিগগিরই।”
তিনি বলেন, “আমাদের স্থির বিশ্বাস আমরা যতটা স্পষ্ট করে NRC এর বিষয়ে আমাদের অবস্থান স্পষ্ট করছি, আমরা চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি এই মুহূর্তে ভারতের অন্য কোনও রাজনৈতিক দল ভোট ব্যাঙ্কের স্বার্থে নিজেদের অবস্থান ততটা স্পষ্ট করে বলতে পারবে না। আবারও বলছি বুকের শেষ রক্তবিন্দু থাকতে আমরা অখিল ভারত হিন্দু মহাসভা মতুয়া সহ সনাতনীদের সাথে এই দ্বিচারিতা কোনও মূল্যেই করতে দেব না। অখিল ভারত হিন্দু মহাসভা আগামী লোকসভা নির্বাচনে বাংলার ৪২টি কেন্দ্রেই অংশগ্রহণ করে এবং জনআন্দোলন গড়ে তোলার মাধ্যমে এই অন্যায়ের প্রতিকার করবে চিরতরে।”
তাহলে কোন কোন দাবি বা বিষয়গুলির উপর জন আন্দোলন করতে চলেছে মহাসভা? এনিয়ে চন্দ্রচূড় গোস্বামী জানান, মতুয়া সহ সমস্ত হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ এবং জৈন অর্থাৎ সমস্ত সনাতনী মানুষ যারা জন্মসূত্রে ভারতীয় তারা শুধু বাংলাদেশ কেন পৃথিবীর যে কোনও প্রান্তেই থাকুন না কেন, তারা যদি ভারতের নাগরিকত্ব নিতে চান তাহলে রাষ্ট্রকে তাদের নিঃশর্ত নাগরিকত্ব দিতে হবে। এরজন্য কোনও দিনক্ষণ, তারিখ বা নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেওয়া যাবে না। যারা দেশ ভাগের বলী হয়েছেন তাঁদের যদি NRC এর লাইনে দাঁড় করানোর মত অন্যায় করা হয় তাহলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকেও NRC এর লাইনে দাঁড়িয়ে নিজেদের নাগরিকত্বের প্রমাণ দিতে হবে।
তাঁর কথায়, “মতুয়া সহ কোনও সনাতনী মানুষদের ওপর বিন্দুমাত্র অন্যায় হলে অখিল ভারত হিন্দু মহাসভার সহযোদ্ধারা দেশে বিক্ষোভের আগুন জ্বালিয়ে দেবে।” এনিয়ে দলের অবস্থান আরও স্পষ্ট করে তিনি বলন, “যে সমস্ত সনাতনী খ্রিস্টান এবং সনাতনী মুসলমান বংশ পরম্পরায় এই ভারতকে তাঁদের নিজের মায়ের মত শ্রদ্ধা করে এসেছে এবং যাঁরা মনে প্রাণে “বসুধৈব কুটম্বকম” অর্থাৎ “World Is A Family” বা “ঠাকুরের যত মত, তত পথ” বিশ্বাস করেন, দেশভাগের পরেও যাঁদের শিকড়ের সংযোগ এই ভারতের সঙ্গে তাঁদের সঙ্গে আমাদের কোনও সংঘাত নেই। তাঁদের আমরা বুকে করে আগলে রাখবো। কিন্তু যারা অবৈধভাবে ভারতে এসে ভারতের ডেমোগ্রাফি পরিবর্তন করতে চাইছে বা আরব এবং ইউরোপের টাকা ব্যবহার করে লোভ বা ভয় দেখিয়ে সনাতনীদের ধর্মান্তরন ঘটানোর চেষ্টা করে দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতে চাইবে, এই ভারতের মাটিতে তাদের কোনও স্থান নেই। তাদের NRC এর লাইনে দাঁড়াতেই হবে। শুধু তাই নয় তাদের অবৈধ ভোটার কার্ড, আধার কার্ড, প্যান কার্ড ইত্যাদি কোন কোন কেন্দ্রীয় কর্মচারী, আধিকারিক বা চক্র বানিয়ে দিয়েছে তাদের রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।”
দলের তরফে ডক্টর চন্দ্রচূড় গোস্বামী আরও বলেন, বাংলার সাংসদ শান্তনু ঠাকুর এবং এইরকম আরও অনেক বিধায়ক, সাংসদ বা জনপ্রতিনিধি রয়েছেন যাঁরা মতুয়া অধ্যুষিত এলাকা থেকে নির্বাচিত। মতুয়াদের ভোটার কার্ড, আধার কার্ড থাকা সত্ত্বেও যদি তাদের নাগরিকত্ব না থাকে তাহলে আমাদের প্রশ্ন শান্তনু ঠাকুর মহাশয় বা অন্য জন প্রতিনিধিদের সাংসদ পদটি বা বিধায়ক পদ অবিলম্বে বাতিল করতে হবে। কারণ, কেন্দ্র সরকারের যুক্তিতে, ওনারা অবশ্যই অধিকাংশ সেই সমস্ত ভোটারদের ভোটে জিতেছেন যারা ভারতের নাগরিকই নয়। তাহলে আগামী ২০২৪ লোকসভা নির্বাচন ততদিন পর্যন্ত স্থগিত করে রাখা উচিত যতক্ষণ না কেন্দ্র সরকারের স্পষ্ট NRC সংক্রান্ত রুলবুক আসছে এবং কারা নাগরিক আর কারা নয় সেটা নির্ধারিত হচ্ছে। সেইসঙ্গে তিনি প্রশ্ন তোলেন, “বিজেপি সরকার এই রকম একটি স্পর্শকাতর বিষয়ে বিগত নয় বছর কাজ করার সময় পেলেন না, Eleventh Hours এ এখন মরার কালে হরির নামের মত বিষয়টি উত্থাপন করা কেন? শুধু মতুয়াদের ভয় দেখিয়ে ভোট ব্যাঙ্কের স্বার্থে রাজনীতি করা ?”
বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে সম্প্রতি রাজ্যের দুটি প্রধান দলের দ্বারস্থও হন ডক্টর চন্দ্রচূড়। এ প্রসঙ্গে তিনি জানান, অখিল ভারত হিন্দু মহাসভার পক্ষ থেকে পশ্চিমবঙ্গ দিবস উপলক্ষে ২৯ অগাস্ট নবান্ন সভাঘরের মিটিংয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে “পশ্চিমবঙ্গকে ও বাঙ্গালিদের কোনও মূল্যেই আর ভাগ হতে দেবনা” এবং “মতুয়া সহ সমস্ত সনাতনী মানুষদের জন্য চাই নিঃশর্ত নাগরিকত্ব” মূলত এই দুটি দাবি করা হয়েছে। আবার ২৯ নভেম্বর বিজেপির সভাতেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর কাছে বেশ কিছু দাবি জানাতে চাওয়া হয়েছিল। তাঁর অভিযোগ, “কিন্তু এক মুহূর্তের জন্য ওনার সঙ্গে দেখা না করতে দিয়ে অন্যায়ভাবে সরিয়ে দেওয়া হয় সেদিন। ফলে অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমাদের মহাভারত বা ধর্মযুদ্ধ শুরু করতে আমরা বাধ্য হলাম।” তিনি আরও বলেন, “আমাদের রুবি হাসপাতাল মোড়ের বিখ্যাত দুর্গাপুজোর এই বছরের থিমও ছিল “মতুয়া সহ সমস্ত সনাতনী মানুষদের জন্য চাই নিঃশর্ত নাগরিকত্ব”। আমরা কোনও মূল্যেই মতুয়াদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার ভয় দেখিয়ে কোনও রাজনৈতিক দলকে ভোটের নোংরা রাজনীতি করতে দেব না।”