রুণা খামারু: মৌসুমি অক্ষরেখার অতি সক্রিয়তায় টানা বৃষ্টিতে জেরবার বাংলার কৃষকরা। মাঠে মাঠে এখন খারিফ মরশুম বা বর্ষার ধান রোয়ার সময়। কিন্তু তার আগেই লাগাতার বৃষ্টিতে বহু জায়গায় জলমগ্ন হয়ে পড়েছে ধানের বীজতলা। এই অবস্থায় ধানের চারা বাঁচিয়ে রাখাই এখন বাংলার কৃষকদের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। বর্তমান পরিস্থিতিতে কৃষি বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ:
কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে, জলমগ্ন পরিস্থিতিতে বীজতলায় কোনওরকম নাইট্রোজেন ঘটিত সার দেওয়া যাবে না। তাহলে চারাগাছ পচে যাবে। বীজতলা থেকে জল সরে যাওয়ার পরে সেখানে মিইয়ে, হলুদ হয়ে যাওয়া চারাগাছ দেখা যায়। জল সরে গেলেও আট থেকে দশ দিন পর্যন্ত নাইট্রোজেন ঘটিত কোনও সার দেওয়া যাবে না।
কী কী করণীয়
যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বীজতলা থেকে জল বার করে দিতে হবে।
জলে কমে গেলে ছত্রাকনাশক কর্বান্ডাজিম বা ম্যানকোজেব জাতীয় অথবা দুটোর মিশ্রণ অনুমোদিত মাত্রায় স্প্রে করতে হবে।
নীচু জমিতে চারা রোয়ার ক্ষেত্রে চারার বয়স অন্তত ২৫ থেকে ৩০ দিনের হতে হয়। এখন যেহেতু বীজতলার জমা জল থেকে চার তুলে বসানো হবে, তাই চারার বয়স বাড়িয়ে ৩৫ থেকে ৪০ দিন করলে ভালো হয়।
বীজতলা জলমগ্ন হওয়ার কারণে চারাগাছের পাশকাঠি ছাড়ার ক্ষমতা যেহেতু কমে যাবে তাই জমিতে চারা বসানোর সময় গুছিতে পাঁচ-ছয়টা করে চারা রাখতে হবে। এমনিতে গুছিতে দুই-তিনটি করে চারা রাখা হয়।
রোয়ার পর ফের বৃষ্টিতে ধান জমি ডুবে গেলে জল সরে যাওয়ার পর বিঘা প্রতি চার থেকে পাঁচ কেজি পটাশ ছড়িয়ে দেওয়া যেতে পারে। এতে গাছ সবল হবে এবং ধসা লাগার প্রবণতা কমবে।
পাশাপাশি ছত্রাক ঘটিত রোগ এড়াতে ব্রডস্পেকট্রাম ফাঞ্জিসাইট স্প্রে করলে গাছ ভালো থাকবে।
জমি থেকে জল সরে যাওয়ার অনন্ত দশ দিন পর নাইট্রোজেন ঘটিত সার দেওয়া যাবে।
অতি বৃষ্টিতেও যেটুকু চারা আছে সেটাকেই জমিতে বসিয়ে দিয়ে পরে আবার সেগুলো রুয়ে দেওয়া যাবে। যাকে বলা হয় ডাবল ট্রান্সপ্লান্টিং।
এখনও সময় থাকতে উঁচু জমিতে জৈব সার দিয়ে বীজতলা বানিয়ে চারা তৈরি করে নেওয়া যেতে পারে। যাকে বলা হয় কনটিজেন্সি প্ল্যানিং। সেক্ষেত্রে জলদি ও মধ্য মেয়াদি ভ্যারাইটির ধান বীজ নিলে ভালো হয়।
দেশি জাত বা দীর্ঘ মেয়াদি ভ্যারাইটির গাছ বেশি টেকসই হয়। অন্যদিকে হাইব্রিড, স্বল্প ও মধ্য মেয়াদি ভ্যারাইটির গাছ ততটা টেকসই হয় না। তাই আবহাওয়ার পূর্বাভাস ও ফসল বসাতে কতটা দেরি হচ্ছে সেকথা মাথায় রেখে ভ্যারাইটি নির্বাচনে জোর দিতে হবে।