মেলা মানেই মিলন ক্ষেত্র। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিভিন্ন ভাষাভাষির মানুষ পুণ্য অর্জনের জন্য এসে জড় হন গঙ্গাসাগর মেলায়। অনেক যোগ বিয়োগের ঘটনাবলীর সাক্ষী থাকে এই মেলা প্রান্তর।
পুণ্য হয় কি না সেটা অবশ্য বিশ্বাসের বিষয়। তবে নাম ধাম পরিচয় না জানা অনেক মানুষই যে বন্ধু রূপে ভগবান রূপে দেখা দিতে পারে কারও কারও কাছে সেরকম ঘটনা অনেকই ঘটে চলেছে। এবারে কোভিড পরিস্থিতিতে গঙ্গাসাগর মেলায় ভিড় আগের থেকে অনেকটাই কম। তাই মেলা প্রান্তরে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ নজর চলে গেল পাজামা পাঞ্জামি পরিহিত দাড়িওয়ালা শুভ্রকেশী এক প্রৌঢ়ের দিকে।
আরে ! কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবয়বের সঙ্গে তাঁর যে হুবহু মিল মনে হল। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এখানে এলেন কোথা থেকে। ভালো করে দেখতেই বোঝা গেল রবীন্দ্রনাথের মতো অবিকল দর্শন এই ব্যক্তিটি সেখানে ঘোরাঘুরি করছেন সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্দেশে।
এগিয়ে গেলাম তাঁর কাছে। হেঁসে বললাম রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে অদ্ভূত মিল আপনার চেহারায়। তাই চোখ আটকে গিয়েছিল আপনার দিকে। কথা শুনে হেঁসে ফেললেন ‘গঙ্গাসাগরের রবীন্দ্রনাথ’। পরিচয় দিয়ে জানালেন তাঁর নাম সোমনাথ ভদ্র। কর্মসূত্রে ছিলেন বিএসএনএল-এ। এক বছর আগেই তিনি অবসর নিয়েছেন। এতদিন কর্মসূত্রে প্রতি বছর আসতেন গঙ্গাসাগর মেলায়। এবার এসেছেন ভালোবাসার টানে।
কলকাতার হেদুয়ায় জন্ম ও বড় হয়ে ওঠা। হেদুয়াতেই থাকেন এখনও। মেলা শেষে ফিরবেন নিজের বাসস্থানে। প্রশ্ন করেই ফেললাম আপনাকে তো একেবারে কবিগুরুর মতো দেখতে কবে থেকে এমন দর্শনধারী হলেন ? সোমনাথ বাবুর কথায়, “ছেলেবেলা থেকেই কেউ কেউ আমাকে বলত রবীন্দ্রনাথের মতো দেখতে। আমার রবীন্দ্র সংগীতের প্রতি ভালোলাগা থেকে রবীন্দ্র সদনের বিভিন্ন অনুষ্ঠান, রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতায়াত শুরু। বছর ছয়েক আগে গোলপার্ক রামকষ্ণ মিশনের সুপর্ণা মহারাজ আমাকে দাড়ি আর না কাটার পরামর্শ দেন। তাঁর সেই পরামর্শ আমি আর ফেলতে পারিনি। সেই থেকে দাড়ি রেখেই দিয়েছি। অনেকেই এখন বলেন অবিকল রবি ঠাকুর।”
তাতে কেমন অনুভূতি হয় ? তিনি বলে চললেন, “রাস্তাঘাটে অনেকেই বলে ওঠেন আরে আপনাকে তো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতো দেখতে। একবার তো লোকাল ট্রেনে কেউ আমার ছবি তুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছেড়ে দিয়েছিল। ভাইরাল হয়েছিল সেই ছবি। কোনও অনুষ্ঠানে গেলেও ভালোবেসে ছেঁকে ধরেন অনেকে। তাঁদের আবদারে আবার রবীন্দ্র সংগীত গাইতেও হয়। ভালোই লাগে। আনন্দ পাই। আমি তো ইচ্ছে করে কবিগুরু সাজিনি। আমার গড়নটাই এমন।”
আরও বললেন, “রবীন্দ্র ভারতী সোসাইটি-র লাইফ টাইম সদস্য পদ পেয়েছি আগেই। কেউ কখনও কোথাও অভিযোগ করেননি আমার নামে। তারা আমাকে সার্টিফিকেটও দিয়েছে। বহু স্বনামধন্য রবীন্দ্র সংগীত শিল্পীরও স্নেহ পেয়েছি। গগনেন্দ্র মঞ্চে আমার ছবি তুলে তা প্রদর্শনও করেছেন স্বাগতালক্ষ্মী দাশগুপ্ত।”
এই নিয়ে টানা ২৪ বছর গঙ্গাসাগর মেলায় আসছেন সোমনাথ ভদ্র। এবারের মেলাতেও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও সরকারি তরফে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে ‘সাগর মেলার রবি ঠাকুরকে’।