তেপান্তর বাবী, প্রতিনিধি: ৭০-এর দশক। শ্রীরামপুর স্টেশন। একটা মহুয়া গাছের সঙ্গে আচমকা সাক্ষাৎ। মহুয়া গাছ! এখানে কেন? এখানে এর থাকার কথাই তো নয়। ইট, কাঠ, কংক্রিটের জগতে একেবারেই বেমানান যেন…তোকে রাঙা মাটির দেশেই ভালো লাগে রে, এখানে বড্ড বেমানান তুই। কবি অরুণ চক্রবর্তীর মনে হঠাৎই রিনরিন করে বেজে উঠল কথাটা। জন্ম নিল আপামর বাঙালির প্রাণের চেয়েও প্রিয় গান ‘তু লাল পাহাড়ির দ্যাসে যা’। যে গানের সরল শব্দ, সুর, তাল, ছন্দ অর্ধ শতবর্ষ পেরিয়েও আজও মনের মণিকোঠায় অমলিন।
এবছর ৫০-এ পদার্পণ করেছে ‘লাল পাহাড়ি’ গান। ১৯৭৬ সালে আরও এক কিংবদন্তি শিল্পী ভি বালসারার হাত ধরে জন্ম নিয়েছিল যে গান, সেই গান আজ বহু শিল্পী, অজস্র গানের দল, ছন্দের অসংখ্য পরীক্ষা নিরীক্ষার পথ পেরিয়ে সমান সমাদৃত। লাল মাটি স্পর্শ মাখা ধামসা, মাদলের মাদকতাময় সুর আজও ঝঙ্কার তোলে হৃদয়ে।
কবি অরুণ চক্রবর্তী, সকলের প্রিয় অরুণ দা। যাঁর সঙ্গে দেখা হলেই একগাল হেসে আলতো করে নিজের পকেটে হাত ঢুকিয়ে বের করে আনেন লজেন্স। সেই লজেন্সটি স্নেহ মাখানো মমতায় তুলে দেন পরিচিতের হাতে। জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত এই কবি অবশ্য শ্রোতা বন্ধুদেরকেই এই গানটির জনপ্রিয়তার জন্য কৃতিত্ব দিতে বেশি পছন্দ করেন। বলেন, “সুদীর্ঘ ষাট বছরে একটিই কবিতা লিখতে পেরেছি, জীবনে দশটা কবিতা লিখতে চাই, একটা হয়েছে, আরও নটি বাকী, জীবনে দশটা কবিতাই. যথেষ্ট , হে আমার প্রিয়জনেরা, আমি ভালোবাসা প্রার্থনা করি, কবিতার জয় হোক, কবিদের জয় হোক মানুষের জয় হোক, জয় গুরু…।”
দীর্ঘদিন মাটির কাছে থাকা, সহজে বিশ্বাস রাখা, সহজ জীবনযাপন করা, মাটির মানুষ, মনের মানুষ অরুণ দাকে আমাদের অন্তরের শ্রদ্ধা ভালোবাসা ও প্রণাম জানাই।
লেখা পরিমার্জন- সুদীপ্ত চক্রবর্তী