যীশু চৌধুরী (প্রবীণ সাংবাদিক): একসময় সারা পৃথিবীতে বিভিন্ন দেশ দখল করেছিল ইউরোপের সাম্রাজ্যবাদীরা। তারা গর্ব করে বলত আমাদের কাঁধে কৃষ্ণাঙ্গ মানুষের বোঝা চেপেছে। আমরা সেই বোঝা বহন করছি। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে আফ্রিকা এবং এশিয়ার দেশগুলির ওপরেই ইউরোপ, আমেরিকার খাদ্য নিরাপত্তা অনেকটা নির্ভর করছে। অথচ তারা নিজেদেরকে উন্নত দেশ বলে দাবি করে থাকে। এক হিসেবে দেখতে গেলে উন্নয়নশীল দেশের সংখ্যা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। ফলে তথাকথিত উন্নত দেশগুলি খাদ্য নিয়ে যতটা নিরাপত্তার অভাব ততটা নিরাপত্তার অভাব বোধ করে না।
এক হিসেবে দেখতে গেলে খাদ্য এবং শিল্প এক অদ্ভুত সংঘাতের মধ্যে এসে দাঁড়িয়েছে। তবে পশ্চিমী উন্নত দেশগুলি খাদ্য নিরাপত্তার ভবিষ্যৎ কী হবে তা নিয়ে এখন থেকেই সমস্যায় পড়েছে। তারা প্রশ্ন তুলেছে ‘সবুজ বিপ্লব’টি পৃথিবীতে সকলের খিদে মেটাতে পারবে ? তারা অবশ্য বলছে, আমেরিকার ক্ষেত্রে ৭৬ শতাংশ বেশি খাদ্য সংগ্রহ করা দরকার। ইউরোপের ক্ষেত্রে এর পরিমাণ ৬১ শতাংশ। এশিয়ার চিনকে বাদ দিয়ে খাদ্য সংগ্রহ করা দরকার আরও ৭৫ শতাংশ বেশি। একা চিনের ক্ষেত্রে ঘাটতি মেটাতে হবে ৫৮ শতাংশ। ভারতের ক্ষেত্রে ঘাটতি ৮৯ শতাংশ।
এই বিপুল পরিমাণ ঘাটতি তেল-সমৃদ্ধ এবং শিল্পোন্নত দেশগুলির উপর বেশি চাপ ফেলবে। কারণ, খাদ্য যথেষ্ট সংগ্রহ করতে না পারলে কেবল তেল বা শিল্প উৎপাদন দিয়ে পেট ভরবে না। তাহলে কৃষি নির্ভর দেশগুলির থেকে তাদের ফসল কিনতে হবে অনেক বেশি। এক্ষেত্রে প্রশ্নটা উঠছে, আগামীদিনে তাহলে কে বেশি নিরাপদ ?
সেকারণেই নজর পড়ছে খাদ্য উৎপাদনের সঙ্গে ক্ষুধার্থ মানুষের সংখ্যার পার্থক্য় কতটা তা নিয়ে। এর পাশাপাশি হিসেব করা হচ্ছে কোন দেশের হাতে কতটা তেল আছে তা নিয়েও। এক্ষেত্রে ক্যালোরি একজন মানুষের পক্ষে কতটা দরকার সেই হিসেব নিয়ে খাদ্য উৎপাদনের হিসেব করা হচ্ছে। খাদ্যের মধ্যে আছে একদিকে যেমন কৃষি উৎপাদন, সেইসঙ্গে আছে প্রাণীজ প্রোটিন এবং বায়ো ফুয়েল। সেই হিসেবে দেখা যাচ্ছে সারা পৃথিবীতে এখন যতটা খাদ্য দরকার তার মাত্র ৫৫ শতাংশ উৎপাদন হয়। বাকি ৪৫ শতাংশ নিয়ে যাবতীয় সমস্যা। আগামীদিনে সকলের পেট ভরাবার জন্য ওই ৪৫ শতাংশই হয়ে দাঁড়াবে সবচেয়ে বড় মাথাব্যথার কারণ। এই বাকি খাদ্য কীভাবে উৎপাদন করা হবে, চিন্তার যাবতীয় কেন্দ্র এখন তাকে নিয়েই ঘুরছে।