নিউজ ওয়েভ ইন্ডিয়া: “ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা/যমের দুয়ারে পড়ল কাঁটা/যমুনা দেয় যমকে ফোঁটা/আমি দিই আমার ভাইকে ফোঁটা।” ভাতৃ দ্বিতীয়ার দিন এই শ্লোক বাঙালির ঘরে ঘরে শুনতে পাওয়া যায়। সঙ্গে শাঁখ, উলুধ্বনি আর চন্দন ও দইয়ের ফোঁটা তো আছেই। থাকে ধান-দূর্ব্বা সহ আশীর্বাদও।
ভাই ফোঁটা বরাবরই বাঙালির কাছে একটা বিশেষ আবেগের দিন। ভালোবাসার দিন। ভাই বা ভাতৃস্থানীয় প্রিয় মানুষটির সঙ্গে স্পেশালভাবে উদযাপনের দিন। কিন্তু, স্বভাবতই মনে প্রশ্ন জাগে ভাতৃ দ্বিতীয়ার বা ভাই ফোঁটার উৎস কী ? কোথা থেকে কেনই বা এই রীতির প্রচলন ?
দুরকম পৌরাণিক কাহিনি শুনতে পাওয়া যায় ভাই ফোঁটা নিয়ে। প্রথমটিতে জনশ্রুতি, বোন যমুনার হাত থেকে ফোঁটা নিয়ে অমরত্ব লাভ করেছিলেন যমরাজ। তখন থেকেই নাকি ভাই ফোঁটার প্রচলন। ‘যমুনা দেয় যমকে ফোঁটা’, ভাই ফোঁটার এই শ্লোকেও সেই কাহিনিই উল্লেখ করা আছে।
অপর কাহিনিতে শোনা যায়, দৈত্য নরকাসুরকে বধ করার পর ভগবান শ্রী কৃষ্ণের কপালে ফোঁটা দিয়েছিলেন বোন সুভদ্রা। তখন থেকেই নাকি ভাই ফোঁটার প্রচলন। পঞ্জিকা মতে, কার্তিক মাসের শুক্লা দ্বিতীয়ায় পালন করা হয়। এই দিনে বোনেরা সেজেগুজে ভাইয়ের কপালে চন্দন, দই ও হলুদের ফোঁটা কপালে পরিয়ে দীর্ঘায়ু কামনা করেন। কেউ কেউ মুখে মধু ও মিষ্টিও দেন। চিরকাল যেন ভাই-বোনের সম্পর্ক মধুর থাকে, এই আশায়। এরপর চলে মিষ্টি মুখ ও পরস্পরকে উপহার দেওয়ার পর্ব। ইদানিং ভালো রেস্তোরাঁয় স্বপরিবারে ভুরিভোজ খাওয়ারও হুজুগ দেখা যাচ্ছে।
ওপার বাংলায় রীতি অনুযায়ী, ভাই ফোঁটা হয় প্রতিপদেই অর্থাৎ কালীপুজোর পরেরদিনই। কিন্তু, এপার বাংলার বাসিন্দাদের মধ্যে বহুল প্রচলিত রীতি হল ভাতৃ দ্বিতীয়ায় ভাইকে ফোঁটা দেওয়া। দেশের বিভিন্ন জায়গায় ভাই ফোঁটাকে বিভিন্ন রকম নামে ডাকা হয়। নেপাল, দার্জিলিং এলাকায় একে বলা হয় ভাই টিকা। হিন্দিভাষীরা বলে থাকেন ভাই দুজ। মহারাষ্ট্র, গোয়া, কর্নাটকে আবার এই উৎসবকে ভাই বিজ বলা হয়। তবে যে নামেই নামকরণ করা হোক না কেন, উদ্দেশ্য একটাই, ভাইয়ের দীর্ঘায়ু ও মঙ্গল কামনা।