পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমির তরফে রবীন্দ্র-স্মৃতি পুরস্কার (সাহিত্য) প্রদান করা হয় বাংলা সাহিত্যের বিশিষ্ট কবি শ্রী সুবোধ সরকারকে।
Share it

রুণা খামারু: পশ্চিমবঙ্গ দিবস উপলক্ষ্যে ১৫ এপ্রিল রবীন্দ্রসদনে সাড়ম্বরে পালিত হল শুভ নববর্ষ বরণ অনুষ্ঠান। পশ্চিমবঙ্গ তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগের উদ্যোগে এদিনের অনুষ্ঠানে রাজ্য সরকারের বিভিন্ন আকাদেমি পুরস্কার (Academy Award) প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে মন্ত্রী ও পদস্থ আধিকারিকদের উপস্থিতিতে একে একে বিশিষ্টদের হাতে তুলে দেওয়া হয় পুরস্কার। পশ্চিমবঙ্গ কাজী নজরুল ইসলাম আকাদেমি-র পক্ষ থেকে নজরুল-স্মৃতি পুরস্কার তুলে দেওয়া হয় স্বনামধন্য নজরুলগীতি শিল্পী শ্রী রামানুজ দাশগুপ্তর হাতে। শিশু কিশোর আকাদেমির তরফে বিদ্যাসাগর-স্মৃতি পুরস্কার (শিশুসাহিত্য) তুলে দেওয়া হয় বিশিষ্ট লেখক শ্রী অশোককুমার মিত্রর হাতে। বাংলা শিশু-কিশোর সাহিত্যে তাঁর অবদান সর্বজনবিদিত। তাঁর সৃষ্টি একদিকে যেমন শিশু-কিশোরদের মন জয় করেছে তেমনই সমৃদ্ধ করেছে বাংলা শিল্প সাহিত্যের ভান্ডার। পাশাপাশি উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী
পুরস্কারে সম্মানিত করা হয়েছে দীর্ঘদিনের শিশু-কিশোর সাহিত্যিক শ্রী শিবশঙ্কর ভট্টাচার্যকে।

পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমির তরফে রবীন্দ্র-স্মৃতি পুরস্কার (সাহিত্য) প্রদান করা হয় বাংলা সাহিত্যের বিশিষ্ট কবি শ্রী সুবোধ সরকারকে। রবীন্দ্র-স্মৃতি পুরস্কার (বিজ্ঞান) প্রদান করা হয় বিশিষ্ট জ্যোতির্বিজ্ঞানী শ্রী সুজন সেনগুপ্তকে। বাংলা ব্যতিত অন্য ভাষায় রবীন্দ্র-স্মৃতি পুরস্কার প্রদান করা হয় বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী শ্রী রণবীর সমাদ্দার-কে। বাংলা ব্যতিত অন্য ভাষায় সমাজবিজ্ঞান বিষয়ক রচনায় অসামান্য কৃতিত্বের অধিকারী তিনি। বিশিষ্ট কথাকার শ্রী সন্মাত্রানন্দ পেয়েছেন বঙ্কিম-স্মৃতি পুরস্কার (কথাসাহিত্য)। তাঁর উপন্যাসে উচ্চারিত হয় ইতিহাস ও ইতিহাস সংলগ্ন প্রবাদ ও লোককথা। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ শ্রী আনন্দগোপাল ঘোষ পেয়েছেন বিদ্যাসাগর-স্মৃতি পুরস্কার (গদ্যসাহিত্য)। সাহিত্য ও ইতিহাসচর্চার ক্ষেত্রে তাঁর অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এই পুরস্কার। কাব্য সাহিত্যের একনিষ্ঠ সাধক হিসেবে পরিচিত শ্রী রাহুল পুরকায়স্থ। তাঁকে প্রদান করা হয় মাইকেল মধুসূদন দত্ত-স্মৃতি পুরস্কার (কাব্যসাহিত্য)। বাংলা কথা সাহিত্যে বর্তমান সময়ের বিশিষ্ট স্রষ্টা শ্রী সুকান্ত গঙ্গোপাধ্যায়। কথাসাহিত্যে সামগ্রিক অবদানের জন্য তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হয় বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়-স্মৃতি পুরস্কার (কথাসাহিত্য)।

পশ্চিমবঙ্গ নৃত্য আকাদেমির তরফে উদয় শঙ্কর পুরস্কার (নৃত্য) প্রদান করা হয় স্বনামধন্য নৃত্যশিল্পী ও নৃত্যগুরু শ্রীমতি পলি গুহ-কে। ভারতনাট্যম, ওডিশি ও উত্তর ভারতীয় শাস্ত্রীয় নৃত্যশৈলীতে সমানভাবে পারদর্শী তিনি। জীবনব্যাপী নরলস নৃত্যসাধনাল ও এক্ষেত্রে তাঁর অসমান্য অবদানের কৃতিস্বরূপ তাঁকে এই সম্মানজ্ঞাপন করা হয়।

পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সংগীত আকাদেমির তরফে আলাউদ্দিন পুরস্কার (যন্ত্রসংগীত) প্রদান করা হয় বিশিষ্ট সন্তুরবাদন শিল্পী পণ্ডিত তরুণ ভট্টাচার্য-কে। ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতে স্বনামধন্য শিল্পী ডালিয়া রাউত-কে প্রদান করা হয় গিরিজাশঙ্কর পুরস্কার (উচ্চাঙ্গসংগীত)। শাস্ত্রীয় সংগীতকে জনসাধারণের কাছে জনপ্রিয় করার স্বীকৃতিস্বরূপ তাঁকে এই সম্মাননা জ্ঞাপন করা হয়। শাস্ত্রীয় তালবাদ্যের একজন বিশিষ্ট শিল্পী পণ্ডিত কুমার বোস। তাঁর সৃজনশীল তালবাদ্য মুগ্ধ করেছে দেশ বিদেশের অগণিত মানুষকে।

এরই স্বীকৃতিস্বরূপ তাঁকে প্রদান করা হয় জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষ পুরস্কার (কণ্ঠ ও যন্ত্রসংগীতে সৃজনশীল প্রতিভা)। বাংলার ঐতিহ্যবাহী কীর্তন ও ভক্তিগীতিতে
জনশিল্পীদের মধ্যে অন্যতম শ্রীমতী সরস্বতী দেবী। তাঁর নিজস্ব গায়কী ও সুমধুর কণ্ঠের কীর্তন গান মুগ্ধ করেছে অগণিত বাংলা ভাষাপ্রেমী মানুষকে। তারই স্বীকৃতিস্বরূপ শ্রীমতি সরস্বতী দেবীকে প্রাদন করা হয় পান্নালাল ভট্টাচার্য পুরস্কার (ভক্তিগীতি)।

রাজ্য চারুকলা পর্ষদের তরফে অবনীন্দ্র পুরস্কার তুলে ধরা হয় বাংলার চিত্রকলাচর্চায় নিমগ্ন শিল্পী শ্রী স্বপ্নেশ চৌধুরী-কে। নিরন্তর পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে অব্যাহত রয়েছে শ্রী চৌধুরীর চিত্রকলাচর্চা। পাশাপাশি শিল্পকলাচর্চায় বহুদিন ধরে নিজেকে নিমগ্ন রেখেছেন ডা. দেবাশিস ভট্টাচার্য। চিত্রকলাচর্চায় অসামান্য অবদানের জন্য তাঁকে প্রদান করা হয় বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায় পুরস্কার। ভাস্কর সৃষ্টিতে অবদানের জন্য রামকিঙ্কর বেইজ পুরস্কার প্রদান করা হয় দিলীপ কুমার সাহা-কে। তাঁর বহু শিল্পকর্ম সংগৃহীত রয়েছে দেশবিদেশের বিভিন্ন সংগ্রহশালায়।

পশ্চিমবঙ্গ যাত্রা আকাদেমির তরফে বীণী দাশগুপ্ত-স্মৃতি পুরস্কার প্রদান করা হয় প্রবীণ যাত্রা শিল্পী শ্রীমতি শর্মিলা পাল-কে। তাঁর অভিনয়শৈলী মুগ্ধ করেছে বাংলার অগণিত যাত্রাপ্রেমী দর্শকদের। লোকসংস্কৃতি ও আদাবাসী সংস্কৃতি কেন্দ্রের তরফে লালন পুরস্কারে সম্মানিত করা হয় বাংলার স্বনামধন্য ও প্রবীণ মুখানৃত্য শিল্পী শ্রী শচীন্দ্রনাথ সরকার-কে। কাঠের মুখোশ তৈরি ও মুখানৃত্য পরিবেশনে সমান পারদর্শী তিনি। বাংলার লোকসংস্কৃতিতে নিরলস
সাধনা ও অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এই সম্মান জানানো হয় তাঁকে। পাশাপাশি পণ্ডিত রঘুনাথ মুর্মু পুরস্কার প্রদান করা হয় সাঁওতালি সাহিত্যের বিশিষ্ট লেখক শ্রী গৌরচন্দ্র মুর্মু-কে। সাঁওতার সমাজের উন্নয়নের পাশাপাশি সাঁওতালি ভাষায় সংস্কৃতিচর্চায় তাঁর অবদান অনস্বীকার্য।

এছাড়া ঠাকুর পঞ্চানন বর্মা পুরস্কার প্রদান করা হয় উত্তরবঙ্গের লোকসংস্কৃতির আঙিনার প্রবীণ লোকশিল্পী শ্রীমতি আকুলবালা সরকার-কে। দীর্ঘদিন ধরে উত্তরবঙ্গের খন পালাগান, খোজগর, জলমাঙা গান, বিয়ের গান পরিবেশন করে আসছেন তিনি। বাংলার বিভিন্ন ধারার লোকসংস্কৃতির মধ্যে বর্ণময় ও জনপ্রিয় আঙ্গিক হল বনবিবির পালা। এই আঙ্গিকের একনিষ্ঠ শিল্পী ও পরিচালনার মধ্যে বিশেষভাবে উঠে আসে শ্রীমতি অনুজা অধিকারী মণ্ডলের নাম। বহু জায়গায় বনবিবির পালা পরিবেশন করে ভূয়সী প্রশংসা পেয়েছেন তিনি। তারই স্বীকৃতিস্বরূপ সুধী প্রধান পুরস্কার প্রদান করা হয় তাঁকে।

Share it