সুদীপ্ত চক্রবর্তী: একসময় বাংলার পথে ঘাটে পুতুল বিক্রেতাদের দেখা মিলত। গ্রাম থেকে এসে শহরের অলিতে গলিতে নিঃঝুম দুপুরের নিস্তব্ধতা ভেঙে খান খান করে দিত পুতুল বিক্রেতাদের হাঁকডাক। কিংবদন্তি শিল্পী শ্যামল মিত্রের “পুতুল নেবে গো পুতুল” গানটিতেও আরও এক কিংবদন্তি অভিনেতা ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়কে পুতুল বিক্রেতার ভূমিকায় দেখা গেছে। সেইদিন আর নেই। পুতুলের স্থান নিয়েছে সোনালি চুলের বার্বি ডল, ইলেকট্রনিক খেলনা আর মোবাইল গেম। মাটি বা কাঠের পুতুল বিক্রি হতে দেখা যায় শুধু মেলাতেই। তাও ঘর সাজানোর সামগ্রী হিসেবে। এখনকার শৈশব পুতুল বর্জিত।
কিন্তু, গগনেন্দ্র প্রদর্শশালাতে বাংলার পুতুল বৈচিত্রের সম্ভার দেখলে তাক লেগে যেতে বাধ্য। বাংলার বেশ কয়েকটি জেলা থেকে তাঁদের তৈরি পুতুল নিয়ে হাজির হয়েছিলেন শিল্পীরা। প্রদর্শনী তো ছিলই, ছিল কর্মশালাও। সুতরাং এমন একটি আকর্ষণীয় প্রদর্শনীতে শিল্পপ্রেমী বাঙালিরা ভীড় জমাবেন না তা কি হয়! লোকসংস্কৃতি ও আদিবাসী সংস্কৃতি কেন্দ্র এবং তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগের যৌথ উদ্যোগে ১৪ থেকে ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিন দুপুর ২টো থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত আয়োজিত হয়েছিল এই প্রদর্শনী ও কর্মশালা।
দার্জিলিংয়ের কাঠের পুতুল, নদিয়ার মাটির পুতুল, বাঁকুড়ার ডোকরা যেমন ছিল তেমনই মেদিনীপুরের কাঠের পুতুল, দেওয়ালি পুতুল, গালার পুতুলও মন কেড়ে নিয়েছিল দর্শকদের। বিভিন্ন বয়সের মানুষের ঢল নেমেছিল সেখানে। বড়দের হাত ধরে পুতুল দেখতে হাজির হয়েছিল কচিকাচারা। ছিল স্কুল পড়ুয়ারাও। কেউ অবাক হয়ে দেখল পুতুল। আবার কেউ আবার মোবাইল বন্দি করল পুতুল তৈরির মুহূর্ত।
তবে এই চারদিনে বিক্রিবাট্টাও মন্দ হয়নি বলে জানিয়েছেন পুতুল শিল্পীরা। বাংলার পুতুল শুধুমাত্র শিল্পই নয়। এই শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে স্থানীয় ইতিহাস ও ঐতিহ্যময় ঘটনাবলিও। যা পরম্পরাগতভাবে পুতুল শিল্পীরা বয়ে চলেছেন আজও। তবে বর্তমান প্রজন্মের টেকনোলজি প্রেম ও কর্পোরেট দৌড়ে কতদিন এই শিল্প বেঁচে থাকবে তা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছেন খোদ শিল্পীরাই।