যীশু চৌধুরী (প্রবীণ সাংবাদিক) : প্রশ্ন উঠছে, আবার কি গান্ধিজির অর্থনৈতিক পথেই ফিরতে হবে ? গান্ধিজি মূলত গ্রামীণ অর্থনীতির উপরেই নির্দিষ্টভাবে জোর দিতে বলেছিলেন। তবে ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু এই মতবাদ পুরোপুরি মানতে চাননি। তিনি বৃহৎ শিল্পের পক্ষেই মত জানিয়েছিলেন। এটা একদিক দিয়ে স্বাভাবিক কারণ বৃহৎ শিল্প ছাড়া এই বিপুল সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান সম্ভব নয়।
বৃহৎ শিল্প অবশ্য আমাদের শেষ পর্যন্ত কোনও ভালো ফল দেয়নি। কারণ, গত ২০ বছরের হিসেবেই আমরা দেখছি ভারতে ১০ থেকে ১২ কোটি লোকের কাজ দরকার। কিন্তু তার মধ্যে কাজ পেয়েছেন মাত্র ৩০ লক্ষ লোক। আর বৃহৎ শিল্পপতি এবং ধনীদের সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে ১১২ গুণ। অন্যদিকে, এই শিল্পপতিদের প্রবর্তন করা উন্নয়নের নামে ভারতে প্রায় ৬ কোটি লোককে বাড়ি ঘর ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে এবং সর্বস্বান্ত হতে হয়েছে। এখন করোনা-পরিস্থিতি। সে কারণে প্রশ্নটা উঠছে আরও বেশি করে। করোনার জন্য দেখা যাচ্ছে আরও বেশি মানুষ গৃহহারা হয়ে রাস্তায় খোলা আকাশের নিচে বাস করতে বাধ্য হচ্ছেন। ভারতের অবস্থা পৃথিবীর অন্য দেশের মতোই। টমাস স্পিকেটি তাঁর ‘ক্যাপিটাল ইন দ্য টোয়েন্টি ফাস্ট সেঞ্চুরি’ বইতে বলেছেন, ধনি এবং দরিদ্রদের মধ্যে পার্থক্য ক্রমেই বেড়ে চলেছে। কমার কোনও লক্ষণ নেই। ১৯২৪ সালে রবীন্দ্রনাথ যখন জাপান সফর করছিলেন তখন একটি চিঠিতে লিখেছিলেন, “দরিদ্রের প্রতি অবিচার দিন দিন বাড়তে বাড়তে চূড়ান্তে এসে পৌঁছেছে। তাই সর্বত্রই অশান্তি…দুই শ্রেণিতে যত দিন এই বিভাগ থাকবে ততদিন শান্তির আশা নেই।”
গান্ধিজিও নতুন ভারতকে এই গ্রামের মধ্যেই দেখতে চেয়েছিলেন। অবশ্য সেটা কেমন হবে তার কোনও পরীক্ষা নিরীক্ষা হয়নি। করোনার এই পরিস্থিরি ফলে আগামীদিনে পৃথিবীতে ভয়াবহ বিপর্যয় আসছে এখনই সেটা বুঝে গেছেন অনেকেই। তাহলে এই বিপর্যয় রোখার জন্য কী করতে হবে ? শিল্প এবং কলকারখানার ক্ষেত্রে এখনই বড় কোনও রদবদল সম্ভব হবে না। সেটা ধরে নেওয়াই যায়। তাই ঝোঁক বাড়ছে কৃষিক্ষেত্রে। কিন্তু কৃষিক্ষেত্র কি আমাদের সবটুকু সামাল দিতে পারবে ? তবু দুর্ভিক্ষ ও অনাহার যথাসম্ভব কমিয়ে আনার কথা ভেবে কৃষিক্ষেত্রে ব্যাপক সংস্কারে একটা চেষ্টা করতেই হবে। কী হবে সেই রূপরেখা ? কতখানি করা সম্ভব, তার চেয়েও বড় কথা কৃষিক্ষেত্রে এই সংস্কার কতজন মানবেন ?
এমনিতেই অনেকে বলতে শুরু করেছেন করোনার জেরে সারা পৃথিবী জুড়ে যে ধস নেমেছে তা সামলাতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সমাজতন্ত্রের রাস্তা ধরতেই হবে। এর জন্যে কোনও বিপ্লবের ডাক দেওয়ার দরকার নেই। বরং বদলে যেতে পারে আমেরিকা, রাশিয়া, চিন প্রভৃতি বড় দেশগুলির বর্তমান সমাজ কাঠামো এবং আর্থিক নীতি নিয়ম। বিভিন্ন মহল থেকে কৃষিক্ষেত্রে যে নতুন রূপরেখার কথা বলা হচ্ছে তাতে তেমনই আভাস পাওয়া যাচ্ছে। আমাদের দেশেও তার ব্যতিক্রম হওয়ার কথা নয়।