Share it

যীশু চৌধুরী (প্রবীণ সাংবাদিক) : পুরনো চিন্তা থেকে সরে আসার জন্য মানুষের চেষ্টা প্রতিনিয়তই। পুরনো চিন্তা থেকে সরলে নতুন চিন্তার কথা উঠতেই পারে। কিন্তু নতুন চিন্তা মানে কি অন্যের অন্ধ অনুকরণ ? একটু ভেবে দেখলে, মোটেই তা নয়। কিন্তু আমরা সব জেনেও অন্যের অনুকরণ করেই চলি। আমাদের দেশ মূলত কৃষি প্রধান। কৃষিতে সংস্কার দরকার আছে এটা আমরা আগেও বুঝেছিলাম। তবে এই সংস্কার করতে গিয়ে পশ্চিমি শিল্পোন্নত দেশগুলির হাবভাব আমরা অনুকরণ করে এসেছি। ফলে কৃষির ঐতিহ্য আমাদের অনেকটাই নষ্ট হয়েছে। কিন্তু নতুন কৃষি ব্যবস্থা গড়ে তোলা যায়নি।

শিল্পোন্নোত দেশে কৃষি থাকে দ্বিতীয় পর্যায়ে। আমরা কৃষি প্রধান দেশ হয়ে তাকে সেই দ্বিতীয় পর্যায়েই নামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছি। অথচ আমাদের দেশে যথেষ্ট ভারী শিল্প গড়ে ওঠেনি। তাহলে অবস্থা দাঁড়িয়েছে ত্রিশঙ্কুর মতো।

বিশেষ করে এসব কথা মনে হচ্ছে করোনা পরিস্থিতির জন্য। গত প্রায় দেড় বছর ধরে আমাদের সব কিছু বন্ধ হয়ে গেছে। রুদ্ধ হয়ে গেছে আমাদের কোটি কোটি শ্রমের সুযোগ। অথচ পেটের খিদে তো মানতেই হবে। এই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তার জেরও থাকবে বহুদিন ধরে। তাই নানা মহল থেকে দাবি উঠছে যেমন করে হোক আমাদের কৃষিকে সুস্থিত এবং উন্নয়নমুখী করে তুলতেই হবে।

কর্পোরেট অর্থনীতির পাল্লায় পড়ে আমাদের দেশে কৃষিতে ছোটো, মাঝারি, প্রান্তিক চাষি এবং ক্ষেত মজুরদের অস্তিত্ব প্রায় বিলুপ্ত হওয়ার পথে। এই প্রবণতা দেখা দিচ্ছিল পশ্চিমি কর্পোরেট ভাবনার এবং রাশিয়া ও চিনের বেপথু অর্থনীতির জন্যই। কিন্তু আমাদের চাষের ক্ষেত্রে পূর্ববর্তী সবরকম শর্ত ফিরিয়ে আনতে হবে। আগামী দিনে যদি দুর্ভিক্ষ সামাল দিতে হয় তবে কয়েকটি ব্যাপারের দিকে আমাদের নজর দিতেই হবে। সেগুলি হল –
১) কৃষিতে যাবতীয় ক্ষতিকর রাসায়নিক ব্যবহার নিষিদ্ধ করতে হবে।
২) সবরকম চাষির প্রয়োজনীয় এবং নিরাপদ জীবনযাত্রা অব্যাহত রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।
৩) চাষে বীজতলা থেকে শুরু করে মান্ডিতে বিক্রি পর্যন্ত সবস্তরেই রীতিমতো নজরদারি চালাতে হবে এবং কারও দূরভিসন্ধীমূলক কাজকর্ম ক্ষতির কারণ যেন না হয়, সেটা দেখতে হবে।
৪) কৃষি সংক্রান্ত যাবতীয় প্রযুক্তি আশেপাশেই মজুত রাখতে হবে।
৫) চাষিদের পরিবারের শিক্ষা, বস্ত্র, খাওয়াদাওয়া, স্বাস্থ্য এবং আশ্রয় যাতে ঠিক থাকে তার গ্যারান্টি রাখতেই হবে।
এইসবগুলি বিষয়ের উপর বিস্তারিত আলোচনা পরে করা যাবে।

লক্ষ্য রাখা দরকার আমাদের ভারী শিল্পের প্রকল্পগুলি যেন রুদ্ধ না হয়ে যায়। যেন কর্পোরেট কর্তারা তাকে বিকেন্দ্রীত করার চেষ্টা না করে। কৃষির পাশাপাশি শিল্পকে কেবল মুনাফার যন্ত্র হিসেবে না ব্যবহার করে সাধারণ মানুষের অস্তিত্ব এবং নিরাপত্তা বজায় রাখার ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে। মনে করতে হবে শিল্প বহু মানুষকে অন্ন জোগাচ্ছে, মানুষের জীবনযাত্রা সহজ করে তুলছে। সেইসঙ্গে দেশের অর্থনীতি ও মানুষের স্বাচ্ছন্দ্যের দিকেও নজর রাখতে হবে। তবেই শিল্পের সার্থকতা। তাছাড়া দেশকে যেমন কৃষি বাঁচিয়ে রাখবে তেমনই শিল্প দেশ এবং দেশের মানুষকে প্রতিনিয়ত এগিয়ে নিয়ে যাবে। তবে সবকিছুই হতে হবে সুষ্ঠু, পরিচ্ছন্ন এবং সৎ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে।

আরও পড়ুন : করোনা আবহে সংকটে অর্থনীতি : তবে কি গান্ধিজির পথেই…!

Share it