Share it

সুদীপ্ত চক্রবর্তী, কলকাতা: শেষ হল দেড় মাস ব্যাপী সাত পর্বের লোকসভা নির্বাচন। শনিবার গোটা দেশের ৫৭টি আসনের মধ্যে বাংলার ৯টি কেন্দ্রে নির্বাচন সম্পন্ন হল। গোটা দেশে যেখানে ভোটদানের হার ৬১.৬৩ শতাংশ। সেখানে শুধুমাত্র এ রাজ্যে ভোট পড়েছে মোট ৭৩.৩৬ শতাংশ। কয়েকটি বিক্ষিপ্ত অশান্তি ছাড়া ভোটপর্ব মোটের ওপর শান্তিপূর্ণ ছিল বলে দাবি নির্বাচন কমিশনের। নির্বাচন শান্তিপূর্ণ বলে দাবি শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসেরও। তাদের দাবি, দু-একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা দিয়ে সামগ্রিক নির্বাচনকে বিচার করা উচিত নয়। বাংলায় সপ্তম দফা নির্বাচনে দমদম, বারাসত, বসিরহাট, জয়নগর, মথুরাপুর, ডায়মন্ড হারবার, যাদবপুর, কলকাতা দক্ষিণ ও কলকাতা উত্তর কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ এবং বরাহনগরে বিধানসভা উপ নির্বাচন হয়েছে।

চলতি লোকসভা নির্বাচনে বিভিন্ন দফায় ভোটের সময় বিক্ষিপ্ত অশান্তির অভিযোগ উঠে এসেছিল এ রাজ্য থেকে। শান্তিপূর্ণ ভোট করানো উদ্দেশ্যে শেষ দফা নির্বাচনে রাজ্যে ৯৬৭ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী এবং ২৯৫৮টি কুইক রেসপন্স টিম মোতায়েন করা হয়েছিল কমিশনের তরফে। তা সত্ত্বেও রক্তপাত আটকানো সম্ভব হয়নি। দেশের অন্যান্য রাজ্যে মোটামুটি ভাবে শান্তিপূর্ণ ভোট হলেও দফায় দফায় সংঘর্ষের জেরে উত্তপ্ত হয়ে উঠল দমদম, কলকাতা উত্তর, দক্ষিণ, যাদবপুর, ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্র সহ ন’টি কেন্দ্রের একাধিক বুথ।

বাংলার সপ্তম দফায় দুপুর ১টা পর্যন্ত মোট ১৮৯৯টি অভিযোগ জমা পড়েছে কমিশনে। প্রার্থী এবং পার্টি কর্মীদের মারধর ও হেনস্থা, বুথ এজেন্টকে বসতে না দেওয়া, ভুয়ো ভোটার, ভোটারদের বাধা দেওয়া, ভোটারদের প্রভাবিত করার চেষ্টার মতো একাধিক অভিযোগকে ঘিরে পয়লা জুন সকাল থেকেই উত্তপ্ত ছিল বসিরহাট, ভাঙড়, ক্যানিং, বারুইপুর এবং অন্যান্য অঞ্চল। দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলতলিতে দুষ্কৃতীরা ভোটকেন্দ্রে ঢুকে একটি ইভিএম দখল করে পাশের একটি পুকুরে ফেলে দেয় বলে অভিযোগ। অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, এই ঘটনায় সেক্টর অফিসার এফআইআর দায়ের করেছেন।

ভোটে অশান্তির অভিযোগকে বিশেষ আমল দিতে নারাজ তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী ও রাজ্যের মন্ত্রী শশী পাঁজা। তিনি সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, “বিরোধীরা এমন অভিযোগ করেই থাকে। এত বুথে ভোট হচ্ছে। কোথাও দু’একটা বুথে কিছু হয়ে থাকলে সেটা (ভোটের) সামগ্রিক চিত্র নয়।”

চলতি লোকসভা ভোটে আগে থেকেই নজরে ছিল সন্দেশখালি। ভোটের আগে শুক্রবার রাত থেকেই উত্তপ্ত ছিল ওই এলাকা। বসিরহাটের বিজেপি প্রার্থী রেখা পাত্র বলেন, “তৃণমূল এখানে অশান্তির চেষ্টা করছে। তবে এই ভোট বাংলার মা-বোনের সম্মানের, যারা দিনের পর দিন অত্যাচার সহ্য করেছেন। সন্দেশখালিতে পদ্ম ফুটবেই।” একইসঙ্গে তিনি বলেন, “২০১১ সালের পর থেকে ভয়ে ভোট দিতে পারিনি। এইবার দিলাম।” যদিও বসিরহাটে তৃণমূলের প্রার্থী হাজি নুরুল ইসলাম তৃণমূলের বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁদের পাল্টা দাবি, বিজেপি ‘অশান্তি ছড়াচ্ছে’।

অন্যদিকে ভবানীপুরে ভোট দেন ডায়মন্ড হারবার কেন্দ্রের প্রার্থী ও তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। লোকসভা ভোটে নিজের জয় নিয়ে নিশ্চিত অভিষেক। ভোটদানের পর সংবাদ মাধ্যমকে তিনি বলেন, “তিন মাস ধরে রাস্তায় ঘুরেছি, বুঝতে পেরেছি মানুষের মোহভঙ্গ হয়েছে।” তাঁর মতে, “উৎসবের মেজাজে ভোট হচ্ছে। আজ গরম তুলনামূলক কম। আমি আশাবাদী, বিপুল সংখ্যক মানুষ ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। বিগত পাঁচ বছর ধরে বাংলার প্রতি যে ভাবে বঞ্চনা হয়েছে, তার জবাব মানুষ দেবেন। প্রতিফলন ৪ তারিখ দেখতে পাবেন।” তাঁর দাবি, শেষ দফার ভোটে বাংলার ন’টি কেন্দ্রের মধ্যে সবকটাই তৃণমূলের দখলে থাকবে। শনিবার দুপুরের পরে ভোট দিতে আসেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সংবাদমাধ্যমকে তিনি কিছু না বললেও দুই আঙুল দেখিয়ে জয়ের বিষয়ে আত্মবিশ্বাস প্রকাশ করেন।

Share it