নিউজ ওয়েভ ইন্ডিয়া: ১৭০ বছর পরে দার্জিলিং জেলার সেনচাল অভয়ারণ্যে স্যাটির ট্র্যাগোপ্যান বা ক্রীমসন হর্নড ফেজ্যান্ট-এর খোঁজ পাওয়া গেল। জুওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া (ZSI)-এর অধিকর্তা শ্রীমতী ধৃতি বন্দ্যোপাধ্যায় একথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ১৭০ বছর পরে স্যাটির ট্র্যাগোপ্যানের মতো তিতিরের খোঁজ পাওয়া খুবই উৎসাহব্যাঞ্জক তথ্য। এতে বোঝা যায়, বন্যপ্রাণীদের উপযুক্ত সংরক্ষণ হচ্ছে এবং দেখাশোনাও ভালোই হচ্ছে।

পুরুষ স্যাটির ট্র্যাগোপ্যান (ট্র্যাগোপ্যান স্যাটাইরা) যেমন দেশের সুন্দর পাখিদের অন্যতম তেমনই এটি বিরলও বটে। দার্জিলিং জেলার নেওরাভ্যালি জাতীয় উদ্যানে এদের বেশি দেখা যায়। তবে, সিংগালিলা জাতীয় উদ্যানেও এই পাখি কিছু আছে। পুরুষ তিতির ৬৮ সিএম লম্বা, ঘায়ের রং উজ্জ্বল লাল, তার মধ্যে সাদা সাদা ছোপ। মেয়ে পাখিরা লম্বায় ছোট এবং তত উজ্জ্বল নয়, রঙ খয়েরি। ট্র্যাগোপ্যানদের সাধারণত বলা হয় ‘হর্নড ফেজ্যান্ট’- কারণ মিলনের সময় এদের পালকগুলি অনেকটা খড়্গের মতো দেখায়। বাসস্থানের সমস্যা ও শিকারির দৌরাত্ম্য অন্য ট্র্যাগোপ্যানদের মতোই স্যাটিরদের বিলুপ্ত প্রায় গোত্রের করে তুলেছে।

সাধারণত আর্দ্র ওক এবং রডোডেনড্রনের জঙ্গলে এই পাখিরা থাকে। যার নীচে ঘন আগাছা এবং বাঁশ বন থাকে। গরমকালে ২৪০০-৪২০০ মিটার এবং শীতকালে ১৮০০ মিটার উচ্চতা পর্যন্ত এদের বসবাসের পরিধি। স্থানীয় বাসিন্দারা এই পাখিকে ‘মুনাল’ আখ্যা দিয়েছেন।
শ্রীমতী বন্দ্যোপাধ্যায় আরও জানিয়েছেন, ‘সুরক্ষিত অঞ্চল-এ বেশকিছু সংখ্যক মেলানিস্টিক (কৃষ্ণ) বার্কিং ডিয়ার এবং সাধারণ চিতাবাঘ-ও রয়েছে। ZSI-এর বিজ্ঞানীরা সান্দাকফুর কাছে থাকা সিংগালিলা জাতীয় উদ্যানের তুলনায় এই সংরক্ষিত এলাকায় কৃষ্ণবর্ণের বার্কিং ডিয়ার এবং সাধারণ চিতাবাঘের অধিক সংখ্যায় উপস্থিতি লক্ষ্য করেছেন। তাঁর অভিমত, পশ্চিমবঙ্গের উত্তরবঙ্গ অঞ্চল প্রাণী বৈচিত্রে ভরপুর। কারণ, এখানে বণ্যপ্রাণীদের আবাস গড়ে ওঠার মতো পরিবেশ রয়েছে এবং বন দফতরের সুরক্ষা-ও অপ্রতুল নয়। সিংগালিলা জাতীয় উদ্যান ছাড়াও এই ছোট সুরক্ষিত সেনচাল অভয়ারণ্য অঞ্চলে সংরক্ষণে অগ্রাধিকার প্রাপ্ত বেশকিছু প্রাণী বসবাস করে।
তিনি জানিয়েছেন, ZSI বিজ্ঞানীদের দীর্ঘ মেয়াদী সমীক্ষায় অর্থ জুগিয়েছে, ন্যাশনাল মিশন অন হিমালয়ান স্টাডিজ। এরফলে, এই অভয়ারণ্য থেকে ১৭টি বড় এবং মাঝারি আকারের স্তন্যপায়ী প্রাণীর তথ্য-ও জোগাড় করা সম্ভব হয়েছে। ২০১৮-২০২০-র মধ্যে এই অভয়ারণ্যে ক্যামেরাট্র্যাপ সমীক্ষা থেকে জানা গেছে এই ধরনের ১৭ শ্রেণীর বড় ও মাঝারি স্তন্যপায়ী প্রাণীর উপস্থিতি রয়েছে। এই প্রাণীদের মধ্যে তিনটি শ্রেণীকে বিপদাপন্ন বলে চিহ্নিত করা হয়েছে- এশিয়াটিক কালো ভাল্লুক, সাধারণ চিতাবাঘ এবং মেনল্যান্ড সেরো। এছাড়া, আরও তিনটিকে প্রায় বিপদাপন্ন বলে শ্রেণিভুক্ত করা হয়েছে। সেগুলি হল – সোনালী বেড়াল, মার্বলড ক্যাট এবং কালো রঙের বৃহদাকার কাঠবেড়ালি। এই শ্রেণীকরণ করেছে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অফ নেচার(আইইউসিএন)। ক্যামেরায় সবচেয়ে বেশি ধরা পড়েছে বার্কিং ডিয়ারের ছবি। এরপরেই রয়েছে বন্য শুয়োর, বৃহদাকার ভারতীয় গন্ধমূষিক, মূল ভূখণ্ডের সারং, লেপার্ড ক্যাট, সাধারণ চিতাবাঘ, মালয়দেশীয় শজারু ইত্যাদি। এছাড়া, দুটি প্রজাতির কৃষ্ণবর্ণের প্রাণী অধিক সংখ্যায় ধরা পড়েছে এই অভয়ারণ্যে- সেগুলি হল, কৃষ্ণবর্ণের বার্কিং ডিয়ার (ক্যামেরায় ১২টি ছবি ধরা পড়েছে) এবং কৃষ্ণবর্ণের চিতাবাঘ (ক্যামেরায় ১৪টি ছবি ধরা পড়েছে)।
উল্লেখ্য, ১৮৪২ সালে প্রথম স্যাটির ট্র্যাগোপ্যান দেখার কথা জানিয়েছিলেন ফিকেল। দার্জিলিং জেলার বর্তমান কার্শিয়াং এবং সোনাদা অঞ্চলের মধ্যে এই পাখির দেখা পাওয়া গিয়েছিল। ১৮৬৩-তে জের্ডন এবং ১৯৩৩-এ ইঙ্গলস এই পাখির উপস্থিতির কথা জানিয়েছিলেন।