Laxmi Puja
Share it

সিদ্ধার্থ ভট্টাচার্য (পুরোহিতরত্ন): দুর্গাপুজোর পর এবার ধনদেবীর আরাধনায় মাততে চলেছে আম বাঙালি। ঘরে ঘরে লক্ষ্মী আসুক, বৃদ্ধি হোক ধন সম্পদ। এই কামনা করে বাঙালির ঘরে ঘরে দুর্গাপুজোর পর পূর্ণিমায় দেবী ‘কোজাগরী’ লক্ষ্মীর আরাধনা করা হয়।

এই কোজাগরীর অর্থ কে জেগে আছ। মূল শব্দটি হল কো-জাগরটি। অর্থাৎ আপনাকে দিন রাত এক করে পরিশ্রম করতে হবে। পরিশ্রম করলে তবেই ধন আগমন হয় সেকথাই বোঝানো হয়েছে দেবীর নামের মাধ্যমে। লক্ষ্মী কথাটির অর্থ হল এটি সৌন্দর্যের প্রতীক। এই কোজাগরী লক্ষ্মীর পুরো কথার অর্থ হল মানবিক সম্পদ, পার্থিব সম্পদ, অপার্থিব সম্পদ এবং সৌন্দর্য।

Laxmi Idol
Laxmi Idol

দেবীকে প্রতীমা রূপে পুজোর পাশাপাশি মা লক্ষ্মীকে সরাতে ফুটিয়ে তুলেও অনেক বাড়িতে পুজো করা হয়। এই সরার লক্ষ্মী হল সৌন্দর্যের প্রতীক। লক্ষ্মীকে আমরা বাণিজ্যের মধ্যেও পাই আবার কৃষিকর্মেও লক্ষ্মীকে পাই। বলা হয়ে থাকে, ‘বাণিজ্যে বসতে লক্ষ্মী, তদরধং কৃষি কর্মনী’। আর চণ্ডীতে বলা হয়েছে – ‘ইয়া দেবী সর্বভূতেষু লক্ষ্মী রূপেণ সংস্থিতা’। এছাড়া দুর্গাপুজোর নবপত্রিকাতেও তাঁকে পাই। সেখানে বলা হয়েছে, ‘ধান্য অধিষ্ঠাত্রী লক্ষ্মী দেব্যই নমঃ’।

পুজোর সময় আমরা কোথাও দেখি লক্ষ্মীর চারটি হাত, কোনও ক্ষেত্রে আবার তাঁর দুটি হাত। এই চার হাত হচ্ছে চতুর্বেদ, যম, চতুর্দিক ইত্যাদি। যম অর্থে ধর্মরাজ অর্থাৎ সঠিক পথে ধর্মকে নিয়ে এগিয়ে যাওয়া। আমরা যে লক্ষ্মীকে দেখি দুই হাত তাঁর একহাতে ধানের শীষ, অন্যহাতে গাছ কৌটা। অর্থাৎ এটা হল বাণিজ্য ও কৃষির প্রতীক। যাতে বোঝাতে চাওয়া হয়েছে, “আমার মধ্যে সততা থাকবে এবং আমি অলস হব না।”

Laxmi Sora Idol
Laxmi Sora Idol

লক্ষ্মীর বাহন হল পেঁচা। কোজাগরীর সঙ্গে এর সম্পর্ক রয়েছে। পেঁচা রাতেই জেগে থাকে। মানে মা লক্ষ্মী রাতেও জাগ্রত অর্থে তিনি সদা জাগ্রত। শুধু কোজাগরী পূর্ণিমাতেই নয়, প্রতি বৃহস্পতিবারেও বাড়িতে লক্ষ্মীপুজো করা হয়। এক্ষেত্রে হয় যজন আর যাজন। যজনে নারীরা অংশগ্রহণ করেন বৃহস্পতিবার। আর যাজনে কোজাগরীতে অংশগ্রহণ করতে পারেন পুরুষরাও।

আরও জানা যায়, মা লক্ষ্মীর আবির্ভাব হয় সমুদ্র মন্থনকালে। তাই তাঁকে বলা হয়ে থাকে ক্ষীরাবিদ তনয়া। লক্ষ্মীপুজোর একটি বিশেষ দিক হল এই দিনের খাবার। শাস্ত্রমতে বিশেষ দিনটিতে নারিকেল ও চিপিটক অর্থাৎ ওইদিন প্রসাদ স্বরূপ নারিকেল ও চিঁড়ে অবশ্যই খাওয়া হয়ে থাকে। আরও বলা হয়ে থাকে, অক্ষক্রীড়য়া রাত্রী জাগরণে ধন বৃদ্ধি। অর্থাৎ ঢুলু ঢুলু ভাবে থাকলে হবে না। সক্রিয়ভাবে রাত্রি জেগে পাশা খেলতে হবে। এসবেরই অর্থ হল সততার সঙ্গে থেকে দিন রাত পরিশ্রম করলে ধনাগম হবেই। তাই কোনও রকম আলস্য না করে পরিশ্রম করে গেলে তার ফল স্বরূপ ঘরে লক্ষ্মীর আগমন হতেই হবে।

এবার জেনে নেওয়া যাক লক্ষ্মীপুজোর সবচেয়ে ভালো পুষ্পাঞ্জলি মন্ত্র। পুজোর দিন বাড়িতে এই মন্ত্র উচ্চারণ করে আপনিও করতে পারেন ধন দেবীর আরাধনা। মন্ত্রটি হল –

“ন ক্রোধ নচমাৎসজ্যম ন লোভ ন অশুভামতি ভবনত্তু কৃতপুণ্যানম ভক্তানাং সুপ্ত জাতি নাং।”

এই মন্ত্রের অর্থ হল, “আমার জীবনচর্যায় আমি অতিরিক্ত লোভ করব না। মোহগ্রস্ত হব না। ক্রোধের বশবর্তী হয়ে কোনও কাজ করব না। আমি হতে পারি তোমার পুণ্য জীবনদর্শন। আমরা যারা ভক্ত, তোমার সুন্দর সুন্দর উক্তিগুলি জীবন পথে নিয়ে যাই।”
(লেখক গুপ্ত প্রেস পঞ্জিকার পণ্ডিত মণ্ডলীর একজন।)

Share it