থিম প্রকাশ অনুষ্ঠানে মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় ও অন্যান্য
Share it

নিউজ ওয়েভ ইন্ডিয়া: দক্ষিণ কলকাতার বড় পুজোগুলির মধ্যে অন্যতম হাজরা পার্ক দুর্গোৎসব কমিটির পুজো। এই পুজো এবার ৮১-তে পা দিচ্ছে। পুজোর থিম “তিন চাকার গল্প”। একটি অটোরিকশার চালক সম্পর্কিত থিম নিয়ে উদযাপন করা হচ্ছে এ বছরের পুজো। ব্যতিক্রমী এই থিমের উদ্বোধন করা হয় ২৯ সেপ্টেম্বর। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, পুজো কমিটির যুগ্ম সম্পাদক সায়ন দেব চট্টোপাধ্যায় সহ আরও অনেকে। থিম উদ্বোধনের পর কলকাতার ১০ জন অটোরিকশা চালককে সংবর্ধণা দেওয়া হয়।

সংবাদমাধ্যমকে সায়ন দেব চট্টোপাধ্যায় বলেন, “কলকাতা আনন্দের শহর, যা অতীতে কিছুটা সহজ-সরল ছিল, কিন্তু যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য বর্তমানে পরিবর্তনশীল এবং ক্রমাগত বিকশিত হচ্ছে। এইভাবে আমরা এখন আমাদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে দ্রুত গতির শহরে বাস করছি এবং আমরা পিছিয়ে যেতে শিখিনি। অটোরিকশা চালকরা বাবা, স্বামী বা ছেলে হিসাবে বিভিন্ন ভূমিকা পালন করার পাশাপাশি নিজেদের পেশাগত আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাও পালন করছে এই তিন চাকার একটি অটোরিকশা চালক হিসেবে। তারা দিনরাত পরিশ্রম করে অল্প পরিমাণ উপার্জন করে, কিন্তু তারা জানে কিভাবে তাদের পরিবারকে নিজের যা কিছু আছে তা দিয়ে খুশি রাখতে হয়। প্রতি রাতে, ছেঁড়া কম্বলে ঘুমোনোর সময় তারা কোনও দিন লাখ টাকা উপার্জনের স্বপ্ন থেকে নিজেদের বিরত রাখতে পারে না। কাজেই তারাও চায় নিজেদের উপার্জনকে ক্রমান্বয়ে বাড়িয়ে তুলতে।” এর পাশাপাশি পরিবার ও বন্ধুদের নিয়ে পুজোয় আসার জন্য সবাইকে আমন্ত্রণ জানান তিনি।

হাজরা ক্রসিংয়ে যতীন দাস পার্কের ভিতরে হাজরা পার্ক দুর্গোৎসব কমিটির এবারের পুজোয় থিম ভাবনায় তিন চাকার গল্পে তুলে ধরা হয়েছে অটোরিকশা চালকদের কথা। তাঁদের কথায়, “গাড়িতে যাতায়াতকারী যাত্রীরা আমাদের বিভিন্ন নামে ডাকেন – চাচা, অটো, দাদা ইত্যাদি…। আমরা শহরের রাস্তায় ও গলির মধ্যে দিয়ে গাড়ি চালাই এবং আবহাওয়া পরিস্থিতিকে উপেক্ষা করে যাত্রীদের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে অবিরাম পৌঁছে দিই। আপনারা সবাই আমাদের কাজের প্রতি আমাদের প্রতিশ্রুতি স্বীকার করুন বা নাই করুন। এই উৎসবের মরসুমে হাজরা পার্ক দুর্গোৎসব কমিটির পক্ষ থেকে অটোরিকশা চালকদের প্রতি অগাধ ভালোবাসা ও সহযোগিতা তাদের পথ চলার পাথেয় হয়ে থাকবে।“

এই হাজরা পার্কের পুজোর নিজস্ব তাৎপর্য ও গৌরব রয়েছে। একটা সময় ছিল যখন দুর্গাপুজো প্রধানত উচ্চবিত্ত ও উচ্চবর্ণের পরিবারের প্রাসাদ বা বাড়িতে হত। নিম্নবর্ণের লোকদেরও এই পুজোগুলিতে প্রবেশ করতে এবং দেবীকে নৈবেদ্য দিতে দেওয়া হত না। এই সুবিধে থেকে বঞ্চিতদের জন্য পুজো কল্পনারও বাইরে ছিল। পারিবারিক পুজোগুলি ধীরে ধীরে “বারোয়ারি” বা সম্প্রদায়ের জন্য পথ দিয়েছিল কিন্তু “সর্বজনীন” বা ধর্মনিরপেক্ষ হয়ে উঠতে পারেনি। সেই দিনের জাতিগত স্বভাব হরিজন/মাহতারদের অপবিত্র বলে মনে করা হত কারণ তারা কলকাতা মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন দ্বারা শহরের পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা পরিস্কার করার জন্য নিযুক্ত ছিল এবং তাই পুজো প্যান্ডেলগুলিতে প্রবেশ নিষেধ ছিল তাদের।

১৯৪২ সালে তৎকালীন কলকাতা কর্পোরেশনের মেয়র সি আর দাস এবং সিইও সুভাষ চন্দ্র বসুর নির্দেশনায় কলকাতা মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের সহায়তায় এই পুজো শুরু হয়েছিল। এই পুজো সাধারণ জনগণ, সুবিধাবঞ্চিত, অনগ্রসর শ্রেণী এবং হরিজনদের জন্য উন্মুক্ত ছিল। এর আগে, এই পুজো ভবানীপুরে অনুষ্ঠিত হত যা ১৯৪৫ সালে হাজরা পার্কে স্থানান্তরিত হয়। অনগ্রসর শ্রেণীর লোকেরা পুজোয় অবাধে অংশগ্রহণ করতে পারত, যা আজও অব্যাহত রয়েছে। আজও, ঐতিহ্য হিসেবে, প্রায় ১০০০ হরিজন উপবিষ্ট এবং ব্যক্তিগতভাবে

Share it