বিশ্বভারতীর সঙ্গে রাজ্য সরকারের সংঘাত চরমে উঠল। দিন তিনেক আগেই বোলপুরে প্রশাসনিক বৈঠকে পূর্ত সড়ক দপ্তরের রাস্তা ফেরত নেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই নির্দেশকে কার্যকর করতে নতুন বছরের প্রথম দিনেই রাস্তা হস্তান্তর করতে বিশ্বভারতীর ক্যাম্পাসে পৌঁছে যান জেলাশাসক ও পুলিস সুপার।
প্রসঙ্গত, বিশ্বভারতীর শান্তিনিকেন থেকে শ্রীনিকেতন রাস্তায়র দু’ধারে রয়েছে সঙ্গীতভবন থেকে কাঁচমন্দির, ছাতিমতলা, রবীন্দ্রভবন মিউজিয়াম ও অন্য ঐতিহাসিক নির্মাণ, রামকিঙ্কর বেইজের বেশ কিছু অমূল্য ভাষ্কর্য। ওই সমস্ত অমূল্য সম্পদ সংরক্ষণের স্বার্থে সংযোগকারী প্রায় তিন কিলোমিটার ওই রাস্তায় নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে এবং অবাঞ্চিতদের প্রবেশ রুখতে ২০১২ ওই রাস্তা নিজেদের দায়িত্বে নিতে রাজ্য সরকারের পূর্ত সড়ক দপ্তরের কাছে আবেদন করে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। ২০১৭ সালে বিশ্বভারতীর তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য স্বপন দত্তের সময়ে ওই রাস্তা বিশ্বভারতীর হাতে তুলে দেয় সরকার। রাস্তা হাতে পাওয়ার পর ওই রাস্তা দিয়ে যান চলাচল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। দিন কয়েক আগে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ আচমকা পোস্টার সেঁটে জানিয়ে দেয় শিক্ষাভবন মোড় থেকেই মালবাহী যান চালাচল নিষিদ্ধ। এতেই ঘৃতাহুতি পড়ে। বিশ্বভারতীর এই সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হন এলাকার মানুষ থেকে আশ্রমিকরা। বিষয়টি নজরে আসতেই পদক্ষেপ গ্রহণ করে সরকার।
২৮ ডিসেম্বর বোলপুরের গীতাঞ্জলীতে প্রশাসনিক সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী পরিষ্কার জানিয়ে দেন ওই রাস্তা পূর্ত সড়ক দপ্তরকে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। জেলাশাসক বিজয় ভারতী বলেন, “উপাসনাগৃহ থেকে কালীসায়র মোড় পর্যন্ত রাস্তা বিশ্বভারতীর কাছ থেকে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এখন থেকে বোলপুরবাসী এবং আশ্রমিকদের চলাফেরার ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা থাকবে না।”
এদিকে বৃহস্পতিবার থেকে শান্তিনিকেতন দূরদর্শন কেন্দ্রের সামনে দিয়ে যাওয়া রাস্তাও পাঁচিল দিয়ে ঘেরার কাজ শুরু করে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। তাতে অসুবিধার মধ্যে পড়ে যান সাধারণ মানুষ। এলাকার মানুষ অভিযোগ করেন জেলা প্রশাসনকে। শুক্রবার সকালে জেলা শাসক বিজয় ভারতী, জেলা পুলিশ সুপার শ্যাম সিং সহ অন্যান্য আধিকারিকরা ঘটনাস্থলে ছুটে যান। এলাকায় গিয়ে নির্মীয়মান কাজ বন্ধের নির্দেশ দেন। ঘটনাস্থল থেকে নির্মীয়মান সামগ্রী বাজেয়াপ্ত করে পুলিশ।
পাশাপাশি, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তারক্ষীদের কাজ বন্ধের নির্দেশ দিয়ে যায় পুলিশ। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, চিত্রা মোড়, লালপুলের যানজট এড়িয়ে এই রাস্তা ছিল শান্তিনিকেতন যাওয়ার সহজ পথ। কিন্তু বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের পাঁচিল দিয়ে দিলে অসুবিধায় পড়তে হবে তাদের।