একটা সময় কংগ্রেসের ‘মিঃ ডিপেন্ডেবল’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। তবে তাঁর উত্তরণ খুব একটা মসৃণ ছিল না পার্টিতে। এরজন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার এবং পার্টিতে নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন ‘ক্রাইসিস ম্যান’। যেটা জন্মসূত্রে পেয়েছিলেন তাঁর বাবার কাছ থেকে।
১৯৭৮ সালে কংগ্রেস পার্টি দুভাগে বিভক্ত হয়ে গেল। একটি ‘ইন্দিরা কংগ্রেস’ অপরটি ততকালীন কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী ডি দেবরাজ ইউআরসি-এর কংগ্রেস (ইউ)। তবে প্রণববাবু ছিলেন কতিপয় রাজনীতিবিদদের একজন যিনি ইন্দিরাজির হাতই ধরেছিলেন। ইন্দিরা গান্ধী প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ১৯৬৬-৭৭ এবং ১৯৮০-৮৪ সাল পর্যন্ত। মূলত বাবা কামদাকিঙ্কর মুখোপাধ্যায়ের পরামর্শেই শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গ কখনও ত্যাগ করেনি প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি। কংগ্রেসের একনিষ্ঠ সেবকদের মধ্যে একজন হিসেবে ধরা হয় তাঁর বাবাকে।
প্রণববাবু বলেছিলেন, “বাবা বলেছিলেন, ‘আমি আশা করি তুমি এমন কিছু করবে না, যা আমাকে লজ্জিত করবে। তুমি যদি কারও সমস্যার সময় পাশে থাকো, তাহলে তোমার মানবিক দিকটিই ফুটে উঠবে।” তাঁর লেখা ‘দ্যা ড্রামাটিক ডিকেড-দ্যা ইন্দিরা গান্ধী ইয়ার্স’ বইয়ে একথা বলেছেন ভারতরত্ন প্রণব মুখোপাধ্যায়।
তিনি আরও বলেছিলেন, বাবার ওই কথার পর একটা বিষয় আমার কাছে খুব পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল। তারপর থেকে আমি ইন্দিরাজির প্রতি আমার আনুগত্যকে কখনও হারিয়ে ফেলিনি। প্রতিটি মুহূর্তে ইন্দিরাজির পাশে থেকেছিলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। ১৯৭৫ সালে জরুরি অবস্থা ঘোষণার সময়ও যখন বিরোধীদের অস্ত্রে বিদ্ধ হচ্ছিলেন ইন্দিরা গান্ধী, সেই সময়ও তাঁর আনুগত্য প্রকাশ করে পরামর্শ দিয়ে চলেছিলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে।
১৯৬৯ সালে তাঁর রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। মাত্র ৩৪ বছর বয়সে প্রথম রাজ্যসভার সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন ভারতীয় রাজনীতির ‘চাণক্য’। বাংলা কংগ্রেসের হয়ে সংসদে পা রেখেছিলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। পরে তা জাতীয় কংগ্রেসের সঙ্গে মিশে যায়। এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি মনমোহন সরকারের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রীকে। পরবর্তীকালে বিভিন্ন মন্ত্রকের ডেপুটি হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও, ১৯৮২ সালে প্রথম বড় মন্ত্রিত্ব পান প্রণব মুখোপাধ্যায়। প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর ক্যাবিনেটে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পান তিনি। ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত কংগ্রেসের অভ্যন্তরেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন প্রণববাবু। তবে ইন্দিরাজির হত্যার পর অনেকেই যখন ভেবেছিলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়ই দেশের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে চলেছেন, তখনই রাজীব গান্ধীর নাম সামনে আসে। যদিও শোনা যায় সেখানেও প্রণব মুখোপাধ্যায়েরই ধুরন্ধর মস্তিষ্ক কাজ করেছিল।