নীরজের কাঁধে হাত দিয়ে দাঁড়ানো উপরের ছবির এই ভদ্রলোককে চিনতে পারছেন? একটু ভালো করে দেখুন তো! শনিবার সোনার ছেলে নীরজ চোপড়া যখন টোকিও স্টেডিয়াম কাঁপাচ্ছেন, তখন মুখে মাস্ক পরে এই ভদ্রলোক ভেসেছিলেন স্মৃতি রোমন্থনে। ছবির এই ভদ্রলোকের নাম ইউই হন। নীরজ চোপড়ার বর্তমান কোচ।
গুরু এমন বলেই তো শিষ্য এমন…গত ২৪ ঘণ্টায় নীরজ সম্পর্কে দেশের ১৩৫ কোটি মানুষই জেনে ফেলেছেন। কিন্তু, নেপথ্য নায়ককে এবার একটু ভালো করে চেনার সময় এসেছে।
মানব ইতিহাসের একমাত্র ব্যক্তি ইউই হন, যিনি জ্যাভলিনে ১০০ মিটারের গণ্ডি টপকেছিলেন। ১০৪.৮ মিটারের সেই থ্রোয়ের পর অলিম্পিক এবং বিশ্ব অ্যাথলেটিক্সের কর্তাব্যক্তিদের মাথায় হাত পড়ে গিয়েছিল। বিস্ময়ে ভ্রুযুগল কুঁচকে গিয়েছিল। এমন চলতে থাকলে ভবিষ্যতে কেউ এর থেকেও বেশি দূরত্বে জ্যাভলিন ছুঁড়তে পারেন। তবে তো তা স্টেডিয়ামে গ্যালারিতে গিয়ে পড়লে যে কেউ আহত হতেও পারেন।
তাই এর পরেই ভাবনাচিন্তু শুরু করেন ক্রীড়া বিজ্ঞানীরা। জ্যাভলিনে কিছু প্রযুক্তিগত পরিবর্তন করা হয়। জ্যাভলিনের সেন্টার অফ গ্র্যাভিটি সামনের দিকে সরিয়ে আনা হয়। এরফলে আগামীদিনে জ্যাভলিন যতই জোরে ছোড়া হোক, তা আর কোনোদিনই অতদূর যেতে পারবে না।
সেই থেকে ইউই হন হলেন জ্যাভলিনে Eternal Record Holder। যাঁর রেকর্ড আর ভাঙা সম্ভব হবে না কারও পক্ষেই। জার্মানির খেলোয়াড় ইউই নিজের সেরা সময়ে অলিম্পিকে নামতে পারেননি। কারণ, পূর্ব জার্মানির বাসিন্দা ইউই ১৯৮৪-র সামার অলিম্পিকস খেলতে পারেননি। সেই বার পূর্ব জার্মানি অলিম্পিক গেমস বয়কট করেছিল। ফলে ইউই-এর মনে দারুন বেদনা লুকিয়ে ছিল। সেই না পাওয়ার দুঃখ বোঝ ভুলিয়ে দিলেন শনিবার টোকিও স্টেডিয়ামে। তাঁর ছাত্র নীরজ চোপড়াকে এমনভাবে তৈরি করেছেন, যাতে চমকে যায় বিশ্ব। নীরজ যখন ৮৭.৫৮ মিটার জ্যাভলিন ছুঁড়ে সোনার মেডেল আনছেন, তখন গ্যালারিতে বসে তিনিও আবেগমথিত চোখে উপভোগ করলেন সেই মুহূর্তকে।