“৭০ শতাংশ নিয়ে উনারা গদিতে বসবেন ভাবছেন। আমরা যদি ৩০ শতাংশ সংখ্যালঘু মুসলিমকে একদিক করে দিই তাহলে ভারতবর্ষে চার চারটে পাকিস্তান তৈরি হবে। কোথায় যাবে ভারতবর্ষের ৭০ শতাংশ? যারা হিন্দু মুসলিম ভেদাভেদ করে। যারা মন্দির রেখে মসজিদ ভাঙে, তারা গড়বে সোনার বাংলা।” বীরভূমের নানুরে এক তৃণমূল কর্মীর এই মন্তব্যে বিতর্কের ঝড় উঠেছে। যদিও দলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল জানিয়ে দিয়েছেন বিতর্কিত ব্যক্তি আমাদের দলের কেউ নয়।
বুধবার বীরভূমের নানুরের বাসাপাড়ায় তৃণমূলের পক্ষ থেকে একটি পথসভার আয়োজন করা হয়। জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ করিম খানের নেতৃত্বে ওই পথসভার আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে করিম খান কে পাশে দাঁড় করিয়ে তৃণমূলের প্রাক্তন পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য শেখ আলম জাতি ধর্ম নিয়ে ওই বিতর্কিত মন্তব্য করেন। তিনি পাকিস্তান তৈরির হুমকি দেন। এমনকি ২১ বছর আগে ঘটে যাওয়া নানুর গণহত্যার স্মৃতি উস্কে দিয়ে BJP কে প্রচ্ছন্ন হুমকি দেন। শেখ আলম বলেন, “BJP যেভাবে পথ সভায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে কথা বলছে, তাতে আমাদের ছেলেরা মনে করলে লাঠি সোঁটা দিয়ে তাদের ফেলে দিতে পারত। দ্বিতীয় সুচপুর তৈরি হত।”
প্রসঙ্গত, ২০০০ সালের ২৭ জুলাই সাত সকালে নানুরের সুচপুরে নারকীয় হত্যালীলার ঘটনা ঘটে। ওই দিন সকালে একটি বাড়ি থেকে ১১ জনকে বের করে পিটিয়ে, কুপিয়ে খুন করা হয়। খুনের দায়ে আজ ৪৭ জন তৃণমূল নেতা কর্মী যাবজ্জীবন সাজা ভোগ করছেন। ফলে শেখ আলম সেই হত্যালীলার স্মৃতি উস্কে দিয়ে BJP কে হুমকি দিতে ছাড়েননি। যদিও শেখ আলম বলেন, “দিন দুয়েক আগে BJP আমাদের পার্টি অফিসের সামনে একটি পথসভা করে। সেখানে আমাদের সম্পর্কে কুৎসিত মন্তব্য করে। কিন্তু সেদিন আমাদের ছেলেরা ধৈর্য্য ধরে ছিল। ওরা মনে করলে ওই দিন আরেকটা সুচপুর তৈরি করে দিতে পারত।”
পাকিস্তান তৈরি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “কয়েকদিন আগে BJP-র শুভেন্দু অধিকারী বলেছিলেন দেশে ৩০ শতাংশ লুঙ্গি পড়া লোক রয়েছে। সেই প্রসঙ্গে আমি বলেছি ওই ৩০ শতাংশ একদিক হয়ে গেলে চারটে পাকিস্তান তৈরি হবে।” করিম খান বলেন, “উনি আমাদের দলের কোনও পদে নেই। কোনওদিন বক্তব্য রাখেন না। আবেগপ্রবণ হয়ে ওসব কথা বলে ফেলেছেন।”
অনুব্রত মণ্ডল বলেন, “উনি আমাদের দলের কেউ নন। ওই মন্তব্য দল সমর্থন করে না।”
BJP-এর নানুরের মণ্ডল সভাপতি প্রতাপ ঘোষ বলেন, “সেখ আলম তো তৃণমূলের সাধারণ কর্মী। ওনাদের যিনি কলকাতার মেয়র ছিলেন তিনিই তো মিনি পাকিস্তানের স্বপ্ন দেখিয়েছেন। তাছাড়া মুখ্যমন্ত্রী ‘জয় বাংলা’, ‘খেলা হবে’-এর মতো বাংলাদেশের শ্লোগান ধার করে এখানে চালাচ্ছেন। তিনি পশ্চিমবঙ্গকে বৃহৎ বাংলাদেশ গড়ে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। ফলে এখন নিচুস্তরের নেতা কর্মীরা নিজেদের মনের ইচ্ছে প্রকাশ করছেন। এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই।”