“ডোম পদে চাকরি পাওয়ার জন্য ইঞ্জিনিয়ার, এম এ পাশ করা প্রার্থীদের আবেদন রাজ্যের কর্মসংস্থানের নগ্ন চেহারারই বহি:প্রকাশ। তৃণমূল সরকারের আমলে সারা দেশের নিরিখে কর্মসংস্থানের প্রশ্নে ক্রমশই পিছিয়ে পড়ছে রাজ্য। রাজ্যের বেকার ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ন্যূনতম চিন্তা এরাজ্যের শাসকদলের নেতানেত্রীদের আছে বলে আজ আর বিশ্বাস করেন না কেউই। অথচ সেই নেতানেত্রীরা এখন অনেক বেশি চিন্তাগ্রস্থ নিজেদের ‘পেগাসাস হানা’ থেকে বাঁচাতে। তাই মোবাইল ক্যামেরায় সেলোটেপ লাগিয়ে ঘুরছেন তাঁরা। ঘটনার সাক্ষী রাজ্যবাসী।” রাজ্যের কর্মসংস্থানের হাল ও পেগাসাস হানার আশঙ্কায় শাসকদলের মাথাব্যাথা নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে এভাবেই সরকারের তীব্র সমালোচনা করলেন সিপিএমের রাজ্য কমিটির সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র।
শনিবার সিপিএমের বীরভূম জেলা কমিটির ডাকে এক সাধারণ সভায় যোগ দিতে সিউড়িতে উপস্থিত হয়েছিলেন সূর্যকান্ত মিশ্র। বৈঠকে যোগ দেওয়ার আগে সংবাদমাধ্যমের তরফে তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, এনআরএস-এ ৬ টি ডোমের পদে দু’হাজারেরও বেশি আবেদন জমা পড়েছে। তাতে ইঞ্জিনিয়ার, এম এ পাশরাও রয়েছেন। চাকরির জন্য এমন হাহাকার কেন?
উত্তরে সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, “রাজ্যের কর্মসংস্থানের বেহাল পরিস্থিতির প্রতিফলন এটা। অনেক পদ শূন্য হয়ে আছে। বছরের পর বছর তা পূরণ হয়নি। পরীক্ষা হয়নি। অনেক জায়গায় অস্থায়ী কর্মীদের স্থায়ীকরণ হচ্ছে না। এই অবস্থা গত দশ বছরে তীব্র থেকে তীব্রতর হয়েছে। কর্মসংস্থান নিয়ে সারা দুনিয়াতেই এখন সঙ্কট, কিন্তু দেশের নিরিখে আমাদের রাজ্য যে অবস্থানে ছিল তা থেকে অনেক পিছিয়ে পড়েছে।”
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক স্মরণ করিয়ে দিয়ে জানান, কয়েক মাস আগেই দেখা গিয়েছিল অস্থায়ী বন সহায়ক পদে যোগ দেওয়ার জন্য পিএইচডি করা ছেলেমেয়েদের লাইনে দাঁড়াতে। প্রাথমিক, উচ্চ প্রাথমিক, মাদ্রাসা প্রভৃতি নানা শূন্যপদে নিয়োগের ক্ষেত্রে টালবাহানার এক চূড়ান্ত নজির রেখেছে রাজ্য সরকার। আবার যাও বা নিয়োগ হচ্ছে তাতে লক্ষ লক্ষ টাকার লেনদেনের ভুরি ভুরি অভিযোগ সামনে আসছে। দশ-পনেরো লাখ টাকার বিনিময়ে চাকরি বিক্রি আজ রাজ্যে ওপেন সিক্রেট।
পেগসাস নিয়ে শাসক দলের আন্দোলন নিয়ে প্রশ্ন করা হলে সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, “পেগাসাসের মাধ্যমে ফোনে আড়িপাতার চক্রান্ত খবরের কাগজ, অন্যান্য সংবাদমাধ্যমে যা দেখতে পাচ্ছি তাতে তৃণমূল নেতাদের কারও নাম শুনিনি। আমরা পেগাসাসের বিরোধী। কিন্তু আমাদের রাজ্যের সরকারের নেতামন্ত্রী যারা ক্যামেরায় সেলোটেপ লাগাচ্ছেন তাঁরাই তো এই দোষে দুষ্ট। তাঁরাই তো আগেই নজরদারি করার নজির রেখেছেন। এ রাজ্যের শাসকদল পেগাসাস দিয়ে হয়তো নয় কিন্তু পুলিস প্রশাসন দিয়ে বহু নজরদারি চালিয়েছে।”
উদাহরণ দিয়ে তিনি আরও বলেন, “২০১২ সালে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অম্বিকেশ মহাপাত্র মুকুল রায়কে নিয়ে ফেসবুকে একটা পোস্ট করেছিলেন। তাতে রাজ্যের সরকারের চূড়ান্ত আক্রমনের শিকার হতে হয়েছিল অধ্যাপককে। এবং শুধু তাইই নয় সেই মামলার এখনও নিষ্পত্তি হল না। মানবাধিকার কমিশন রায় দিয়ে দিয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট কবেই সেই ধারাই বাতিল করে দিয়েছে। কিন্তু মামলা এখনও প্রত্যাহার হয়নি। ফলে এঁরা (তৃণমূল) পেগাসাসের কী জবাব দেবে? তৃণমূল সরকারের সংবিধানের প্রতি, আদালতের প্রতি, মানবাধিকার কমিশনের প্রতি যদি ন্যূনতম আনুগত্য থাকত তাহলে করত না। তাই পেগাসাস দিয়ে ফোনে আড়িপাতা কিংবা সোশ্যাল মিডিয়ার পোস্টে নজরদারি করে মানুষকে হেনস্থা করা – যাই হোক না কেন যারা এটা করে তারা গণতন্ত্র বিরোধী। মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধাচারনের দৃষ্টান্ত।”