Share it

সিউড়ি শহরের জনবহুল রাস্তায় সাতসকালে বন্দুক উঁচিয়ে দৌড় দিল ডাকাত দল। পেছনে তাড়া করল স্থানীয়রা। ধরা পড়া থেকে বাঁচতে পরপর গুলি চালাল ডাকাতদল। গুলিতে জখম হলেন এক টোটো চালক। ঘড়িতে তখন বড়জোর সকাল ৯টা। পাঁচ-ছয়জনের ডাকাতদল সদর শহরে লোকজনে সমাগম প্রায় ৩০০ মিটার রাস্তা দাপালো এভাবেই। সোমবার দিনের আলো ফুটতেই শহরের রাস্তায় এভাবেই চলল দুষ্কৃতি তাণ্ডব। তাতে স্তম্ভিত শহরবাসী।

সিউড়ির টিকাপাড়ায় থাকা একটি বহুজাতিক ঋনদানকারী (মুথুট ফাইনান্স) সংস্থা লুটই ছিল দুষ্কৃতি দলের উদ্দেশ্য। প্রথমে সংস্থার নিরাপত্তারক্ষীদের কানে বন্দুক ঠেকায় তারা। শাটার খুলে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করে। কিন্তু নিরাপত্তারক্ষীরা নির্দিষ্ট কৌশলে সাটার খোলায় তৎক্ষনাৎ বেজে ওঠে সংস্থার বিপদ সংকেত (সাইরেন)। বেগতিক বুঝে চম্পট দেয় দুষ্কৃতিদল। চিৎকার শুরু করে নিরাপত্তারক্ষীরা। চিৎকার শুনে এলাকায় থাকা মানুষজন ধাওয়া করতে শুরু করেন। দুষ্কৃতিদলটি মোটর বাইকে এসেছিল বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।

ঋনদানকারী সংস্থার নিরাপত্তারক্ষী মিঠুন মণ্ডল জানিয়েছেন, “পাঁচ-ছয়জনের দলটি ঢুকেছিল অফিসে। সকলের হাতেই ছিল বন্দুক। আমাদের কানে ঠেকিয়েছিল। সেই মুহূর্তে অফিসের ব্যবস্থা মতো সাইরেন বেজে উঠলে সবাই পালিয়ে যায়। ওরা হিন্দিতে কথা বলছিল।”

তাড়া খেয়ে দুষ্কৃতি দলের মধ্যে দুজন বাইক নিয়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। বাকি তিনজন ছুটে মসজিদ মোড়ের দিকে পালাতে থাকে। সেই সময় তারা একদফা গুলি ছোঁড়ে। মানুষও তাড়া করতে থাকে। এরপর আরও ১০০ মিটার দূরে সিউড়ি বোবা স্কুলের কাছে তিন দুষ্কৃতিকে প্রায় ধরে ফেলে মানুষজন। তখন তারা ফের গুলি ছোঁড়ে। গুলিতে মোবারক খান নামে এক টোটো চালক গুলিবিদ্ধ হন। তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। থমকে যান ধাওয়াকারীরা।

এরপর দুষ্কৃতিরা পথ চলতি মানুষের বাইক ছিনতাইয়ের চেষ্টা করে একের পর এক। কিন্তু ব্যর্থ হয়। অবশেষে সিউড়ির আর টি স্কুল মোড়ে তারা একটি বাইক ছিনতাই করতে সক্ষম হয়। কিন্তু জনবহুল এলাকা হওয়ায় পালাতে গিয়ে তাদের বেগ পেতে হয়। তখন দুষ্কৃতিরা আরও একদফা গুলি ছোঁড়ে। গুলি ছুড়তে ছুড়তে তারা পালিয়ে যায়।

প্রত্যক্ষদর্শী অমল দাস, মুস্তাক আহমেদরা বলেন, “চোখের সামনে এভাবে বন্দুক উঁচিয়ে গুলি ছোঁড়া জীবনে কোনওদিন দেখিনি। রীতিমতো আতঙ্কিত আমরা। তিনজন বাইকে চেপেই গুলি চালিয়েছে। প্রত্যেকের মুখেই মাস্ক ছিল।” রাস্তায় মিলেছে রক্তের দাগ, পাওয়া গেছে বুলেট। ঘটনা বড়সড় প্রশ্নের মুখে ফেলেছে নাগরিক নিরাপত্তা। সাত সকালে শহরের বুকে এমন শ্যুটআউটের সাক্ষী সদর শহর আগে কোনওদিন হয়েছিল কি না বলতে পারছেন না কেউই। শহরজুড়ে ঘটনা ঘিরে ছড়িয়েছে ব্যাপক আতঙ্ক। দুষ্কৃতিদের এখনও কোনও হদিশ মেলেনি। শহরের নিরাপত্তা নিয়ে বড়সড় প্রশ্ন তুলে দেওয়া এই ঘটনার পর পুলিশ মরিয়া হয়ে চেষ্টা চালাচ্ছে দুষ্কৃতিদলের হদিশ পেতে।

Share it