Share it

নিউজ ওয়েভ ইন্ডিয়া: রাজ্যের বহু পরিযায়ী শ্রমিক লকডাউনে কাজ হারিয়ে করোনাকে সঙ্গী করে বহু কষ্টে বাড়ি ফিরেছিলেন ভিন রাজ্য থেকে। তারপর  হয়েছিলেন ‘কোভিড যোদ্ধা’। সামান্য রোজগারের তাগিদে মাসের পর মাস দিনরাত এক করে নিজেদের সঁপে দিয়েছিলেন করোনা আক্রান্তদের সেবায়। কিন্তু সেই কাজও এবার ইতি পড়েছে। তাই একূল ওকূল দুই হারিয়ে আজ দিশেহারা পরিযায়ী শ্রমিক থেকে কোভিড যোদ্ধা হওয়া সেইসব যুবকরা। এই অবস্থায় কাজের জন্য দল বেঁধে বীরভূম জেলা প্রশাসনের দ্বারস্থ হলেন তাঁরা।

তাঁদেরই একজন বীরভূমের নলহাটির মিলন শেখ সেলাইয়ের কাজ করতেন মুম্বাইয়ে। প্রথম লকডাউনে কাজ খুইয়ে বাড়ি ফিরলেও শরীরে ছিল করোনার থাবা। তাই গাঁয়ে থাকতে পারেননি। শেষমেশ নাম লিখিয়েছিলেন করোনা যোদ্ধা হিসেবে। প্রশাসনের ডাকে ছুটেছিলেন রামপুরহাটের কোভিড হাসপাতালে। দিনরাত এক করে কোভিড রোগীদের সেবা করাই ছিল তাঁর দায়িত্ব।

কিন্তু কী অভিজ্ঞতা হল এই মিলন শেখের? আক্ষেপের সুরে জানিয়েছেন, “শরীরে করোনা সংক্রমণ ছিল তাই বাড়িতে থাকতে পারিনি। তারপর CMOH দপ্তর থেকে ডাক পেলাম। কাজ জুটল কোভিড হাসপাতালে। কাজ শুরু করলাম। সেকথা গাঁয়ে জানার পর আর বাড়ি ঢোকার সুযোগ ছিল না। প্রধান, পঞ্চায়েত সদস্যরা পর্যন্ত বাড়ি গিয়ে বলে এসেছিল, ছেলে করোনা রোগীদের সঙ্গে আছে। গ্রামে যেন না আসে। টানা পাঁচমাস বাড়ি যাইনি। মাসে ১৫ হাজার টাকার বিনিময়ে হাসপাতালেই কাটিয়েছি। এখন আর সেই কাজও নেই।”

মিলনের মত এমন বহু পরিযায়ী শ্রমিক গোটা রাজ্যে নানা প্রান্তে ‘কোভিড যোদ্ধা’র তালিকায় নাম লিখিয়েছিলেন। কিন্তু বিপত্তি দেখা দিয়েছে ৩১ অগস্টের পর থেকে। কারণ এরপর আর তাঁদের কাজের মেয়াদ বাড়াইনি সরকার বা প্রশাসন। ‘ছুটি’  দিয়ে দিয়েছে। ফলস্বরূপ, কোভিড যোদ্ধা হয়ে ওঠা পরিযায়ী শ্রমিকরা এখন পুরোপুরি বেকার। তাই শুক্রবার বীরভূমের কাজ হারানো এমন কোভিড যোদ্ধারা এসেছিলেন জেলা শাসকের দপ্তরে। কাজ চেয়েছেন, রোজগারের ব্যবস্থার আর্জি জানিয়েছেন তাঁরা।

যেমন ভেলিয়ানের রেজাজুল শেখ রাজমিস্ত্রির কাজ করছিলেন মুম্বইয়ে। তিনিও লকডাউনে একই দুর্ভোগের শিকার হয়ে করোনা নিয়েই ফিরেছিলেন জেলায়। নাম লিখিয়ে ছিলেন করোনা যোদ্ধা হিসেবে। তাঁকে পাঠানো হয়েছিল সুদূর কলকাতার বাঙ্গুর হাসপাতালে। সেখানেই মাসের পর মাস তিনি পড়েছিলেন করোনা রোগীদের সেবা করে দুটো রোজগারের তাগিদে। আজ কাজ হারিয়ে ভেবে পাচ্ছেন না কি করবেন।

এদের মতোই আরও একজন সাহেব ঘোষ। রাজগ্রামের এই যুবকের কথায়, “ভিন রাজ্যে থাকতে করোনা নিয়ে ফিরেছিলাম। কাজ গেছে তখনই। ফিরে ডিউটি নিয়েছিলাম করোনা হাসপাতালে। তিন তিনবার করোনা আক্রান্ত হয়েছি। তবুও কাজ করে গেছি। কিন্তু এখন তো সরকার কাজ থেকেই ছাঁটাই করে দিয়েছে।”

দু-কূল হারানো এইসব যুবকদের এখন সঙ্গী একরাশ হতাশা।  তাই এদিন জেলা প্রশাসনের সামনে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন তাঁরা। দাবি একটাই, বাড়ানো হোক কাজের মেয়াদ।

জেলা প্রশাসনের এক কর্তা জানিয়েছেন, “করোনা সংক্রমণ যখন চরমে ছিল তখন সেফ হোম, কোভিড হাসপাতালগুলিতে এদের নিয়োগ করা হয়েছিল নির্দিষ্ট পারিশ্রমিকের ভিত্তিতে। অগস্ট মাস পর্যন্ত এরা কাজ করেছেন। তারপর এদের কাজে রাখার ব্যাপারে সরকারের অনুমোদন মেলেনি। জেলার স্বাস্থ্যদপ্তরের এক্তিয়ার নেই এদের কাজের মেয়াদ বাড়ানোর। কারণ অনুমোদন না পেলে পারিশ্রমিক দেওয়া হবে কোথা থেকে ?”

Share it