পশুপাখিদের আরও বেশি করে দত্তক নেওয়ার আহ্বান অলিপুর চিড়িয়াখানার অধিকর্তার
Share it

নিউজ ওয়েভ ইন্ডিয়া: কলকাতায় আগত পর্যটকদের কাছে অন্যতম দর্শনীয় স্থান হল আলিপুর চিড়িয়াখানা। বিশেষ করে প্রতি বছর শীতকালে গোটা রাজ্যবাসীর কাছেই এটি একটি বিশেষ আকর্ষণীয় ট্যুরিস্ট স্পট। কারণ, আরও কোথাও না হোক বাড়ির বাচ্চাদের নিয়ে শীতকালে একবার অন্তত কলকাতা চিড়িয়াখানায় ঘুরতে আসে বহু পরিবার। তাদের জন্য এবারের শীতে কী বার্তা আছে, তা জানতে আমরা পৌঁছে গিয়েছিলাম আলিপুর চিড়িয়াখানার অধিকর্তা শুভঙ্কর সেনগুপ্তর কাছে। কী কী ব্যবস্থা রাখা রাখা হচ্ছে সেকথা যেমন তিনি জানালেন তেমনই পশুপাখিদের দত্তক নেওয়ার পরামর্শও দিয়েছেন তিনি। বিস্তারিত জানতে পড়ুুন সেই সাক্ষাৎকার –

প্রশ্ন: এবারের শীতে কলকাতা চিড়িয়াখানার পরিকল্পনা কী ?

আমরা আগে যেটা নজর দিচ্ছি সেটা হল পর্যটকরা চিড়িয়াখানায় এসে যাতে একটা আনন্দদায়ক অভিজ্ঞতা নিয়ে যেতে পারেন, মূলত সেটার জন্য ব্যবস্থা করছি। এখানে যত পশুপাখি দেখানোর আছে, সেই জায়গাগুলো পরিষ্কার করে পশু-পাখিরা যাতে ফ্রেশ এয়ার পায় আর দর্শকরাও যাতে ভালোভাবে দেখতে পান সেই ব্যবস্থা করা হয়েছে। যেমন – গ্লাস ফ্রন্ট এনক্লোজার আগের থেকে আরও বাড়ানো হয়েছে। লেপার্ড, জাগুয়ার, হায়না, জ্যাকল, ওয়াইল্ড ডগ প্রত্যেকের এরকম ব্যবস্থা করা হয়েছে। যাতে পশুদেরও অসুবিধে হবে না, আবার দর্শকরাও ভালোভাবে তাদের দেখতে পাবেন।

অনেকরকম পাখি এখানে রয়েছে। আমাদের পাখির সম্ভারটা অত্যন্ত সমৃদ্ধ। পাখির জন্য চারটে নতুন এনক্লোজার করা হচ্ছে। এগুলো একটু অন্যরকম। মানে এনাফ স্পেস রাখা হচ্ছে পাখিদের জন্য। ফলে তাদের ঘুরে বেড়ানোর কোনও অসুবিধে হবে না, আর দর্শকরাও ভালেভাবো দেখতে পাবেন। এছাড়া চিড়িয়াখানা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, দর্শকদের জন্য টয়লেট ও খাবার জলের ব্যবস্থা যতটা সম্ভব ভালো রাখার চেষ্টা করছি।

প্রশ্ন: নতুন কিছু কি আসছে এই শীতে ?
পরিকল্পনা তো আছেই। কিন্তু সেটা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। কথা চলছে, আগামীদিনে বলতে পারব। এই মুহূর্তে যা আছে সেগুলোকেই ভালোভাবে দেখানোর ব্যবস্থা করছি।

প্রশ্ন: ক্রিসমাসের সময় দর্শক আগমন প্রচুর হয়, সিকিউরিটি কেমন ?

কলকাতা চিড়িয়াখানার মেন সিজন ১৫ ডিসেম্বর থেকে ৩১ ডিসেম্বর। এই সিজনের বিশেষ দিনগুলিতে এক লক্ষের বেশি লোক আসার রেকর্ড আছে। এখনও পর্যন্ত রাইজিং ট্রেন্ড দেখছি। প্রতিদিন এখন ৭-৮ হাজার দর্শক আগমন হয়েছে। পুজোর সময় দিনে ২০ হাজার দর্শক আগমনও হয়েছে। সেটা ক্রমশ বাড়ছে। আরও বাড়বে বলে আশা করছি। এজন্য এডিশনাল সিকিউরিটি পার্সোনেল মোতায়েন করা হবে। যাঁরা এখানে দেখাশোনা করবেন। টিকিট কাউন্টার আরও বেশি খোলা হবে। অনলাইনেও টিকিট কাটার ব্যবস্থা চালু হয়ে গেছে।

প্রশ্ন: টিকিটের দাম কি বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে পরিকাঠামোর উন্নয়নে ?
এই মুহূর্তে প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য ৫০ টাকা, ২ থেকে ৫ বছরের বাচ্চাদের জন্য টিকিটের দাম ২০ টাকা। অ্যাকায়ারিয়ামে ২০ টাকা প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য, বাচ্চাদের জন্য ১০ টাকা। এছাড়া স্টুডেন্ট কনসেশন ৫০ শতাংশ সারা বছরই দেওয়া হয় যখন গ্রুপে আসে।

প্রশ্ন: পশুপাখি অ্যাডপশন বা দত্তক নেওয়ার ক্ষেত্রে রেসপন্স কেমন ?
ভালোই সাড়া পাওয়া যাচ্ছা। আমাদের প্রায় সবকটি মেজর অ্যানিমালই অ্যাডপ্ট হয়ে আছে। তাতে ইন্ডিভিজুয়ালি অনেকে অ্যাডপ্ট করেছেন আবার কিছু কম্পানিও আছে। আমরা চাই যে সকলে এগিয়ে আসুক এই অ্যাডপশনের জন্য, তার মাধ্যমে পশুপাখি নিয়ে যেমন সচেতনতা বাড়বে তেমনই এই পশুপাখিগুলিও ভালোভাবে থাকতে পারবেন।

পশুপাখি দত্তক নেওয়ার জন্য নেই তেমন কিছু ঝক্কি। দত্তক নেওয়া মানেই এই নয় তার সব খরচই একজনকে দিতে হবে। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে শেয়ার করে এবং অল্প কিছুদিনের জন্যও দত্তক নেওয়া যায়। যাঁরা ব্যক্তিগত উদ্যোগে দত্তক নেন তাঁদের নাম ও ছবি এনক্লোজারের সামনে দিয়ে দেওয়া হয়। ফলে কে কোন পশুপাখি দত্তক নিয়েছেন তা দর্শকরাও জানতে পারেন এবং এথেকে অন্যদের মধ্যেও দত্তক নিয়ে আগ্রহ তৈরি হতে পারে।

প্রশ্ন: পরিকাঠামোগত উন্নয়নে আর্থিক সমস্যা কী থেকে গেছে ?
এটা তো থাকেই। মূল যেটা রোজগারের জায়গা সেটা হল টিকিট এন্ট্রি ফি। সেট তো খুব বাড়ানো সম্ভব না। কারণ এখানে আমাদের রাজ্যের যাঁরা গ্রামগঞ্জ থেকে আসেন বা আশপাশের রাজ্য থেকেও যাঁরা কলকাতায় আসেন তাঁদের কাছে কলকাতা চিড়িয়াখানা অন্যতম আকর্ষণীয় জায়গা। আমরা চাইনা তাঁদের কাছে টিকিট নিয়ে কোনও চাপ তৈরি হোক। বিভিন্ন কম্পানিগুলির কাছেও আবেদন রাখছি তাদের কর্পোরেট সোশ্যাল রেসপন্সিবিলিটির (CSR) মাধ্যমে আমাদের যদি সহযোগিতা করা যায়। এরকম কিছু কিছু সাহায্য পাচ্ছি। ভবিষ্যতে আমরা আরও বেশি এধরনের সহযোগিতা পেলে আমরা আরও ভালো কাজ করতে পারব।

Share it