মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে অব্যাহতি না দেওয়ার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। পাঁচ পাতার এই চিঠিতে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের আর্জি জানিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার মুখ্যসচিবকে সকাল সাড়ে ১০টার মধ্যে রাজধানীতে নর্থব্লকে হাজিরা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল কেন্দ্র।
চিঠিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ‘রাজ্যের সঙ্গে কোনওরকম আলোচনা না করেই একতরফা এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নির্দেশ জারি করার আগে রাজ্যের সঙ্গে কোনও আলোচনাই হয়নি। কেন্দ্রের এই একতরফা নির্দেশে আমি বিস্মিত, হতবাক।’ এই নির্দেশকে মুখ্যমন্ত্রী বেআইনি, নজিরবিহীন এবং অসাংবিধানিক বলেও উল্লেখ করেছেন। তিনি আবেদন জানিয়েছেন, ‘রাজ্যের জনস্বার্থে এই নির্দেশ প্রত্যাহার করা হোক।’
পাঁচ পাতার চিঠিতে কলাইকুন্ডা বৈঠকের কথাও উল্লেখ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি চিঠিতে লিখেছেন,’দুরকমের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে চারদিনের মধ্যে। কেন এই নির্দেশ বদল করা হয়েছে বুঝতে পারিনি। আশা করি, কলাইকুন্ডা বৈঠকের সঙ্গে এর নির্দেশিকার কোনও সম্পর্ক নেই। যদি তাই হয়ে থাকে, তাহলে বলতে হবে এতে বাংলার মানুষের স্বার্থ বিঘ্নিত হচ্ছে।’
কোভিড মোকাবিলার পাশাপাশি ‘যশ’ পরবর্তী ত্রাণ ও পুনর্বাসনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন মুখ্যসচিবই। এই পরিস্থিতিতে তিনি চলে গেলে সেই কাজে প্রভাব পড়তে পারে। প্রধানমন্ত্রীকে বদলির নির্দেশ প্রত্যাহারের আর্জি জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী চিঠিতে উল্লেখ করেন, ‘কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে রাজ্য।’
মমতা চিঠিতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রশ্নও ছুঁড়ে দেন। তিনি লেখেন, ‘আমাদের অনুরোধে মেয়াদ বাড়ানোর পরও রাজ্যের সঙ্গে কোনও আলোচনা ছাড়াই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হল কেন?’ ১৯৫৪ সালের ইন্ডিয়ান অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস’ (ক্যাডার) অনুযায়ী এই নির্দেশিকা নিয়মবিরুদ্ধ ও অসাংবিধানিক। আমি আশা করছি, কেন্দ্রীয় সরকার যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর কোনও ক্ষতিসাধন করতে চাইবেন না। এমনটা হলে দেশজুড়ে সমস্ত IAS অফিসারদের মনোবল ভেঙে যাবে। দয়া করে এমন সিদ্ধান্ত আপনি নেবেন না।’
গত শুক্রবার আচমকা কেন্দ্রের তরফে চিঠি পাঠিয়ে মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে দিল্লিতে রিপোর্ট করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। ৩১ মে অর্থাৎ সোমবার সকালেই রাজ্যের মুখ্যসচিবের দিল্লিতে গিয়ে নর্থ ব্লকে কর্মীবর্গ বিভাগের কাজে যোগ দেওয়ার কথা। কেন্দ্রের এই নির্দেশের পরই অসন্তুষ্ট হয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপর থেকেই তাঁর এই বদলি নিয়ে টানাপোড়েন শুরু হয়। নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করে প্রধানমন্ত্রী ও কেন্দ্রকে তুলোধনা করেন মুখ্যমন্ত্রী।