যীশু চৌধুরী(বিশিষ্ট সাংবাদিক): খবরের কাগজে দেখলাম, সিপিএম-এর নেতা বিমান বসুকে সম্ভবত সেন্ট্রাল কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হতে পারে। কারণ ওই পার্টি এখন থেকে নাকি বয়স ভিত্তিতে নেতাদের বিভিন্ন জায়গায় দায়িত্ব দেবে কিংবা বাদ দেবে। সেই বয়সের সীমার মধ্যে বিমান বসু নাকি আর নেই। কিন্তু যতটা লক্ষ্য করা গেছে তার মধ্যে মনে হয়েছে, বিমান বসুর বয়স হলেও তিনি এখনও বিভিন্ন কর্মসূচিতে প্রত্যক্ষভাবে অংশ নেন। অনেক তরুণ নেতাও তা করেন না। তা ছাড়া সিপিএম-এর যে তরুণ নেতারা এক সময় দলের পতাকা ওপরে তুলে ধরতে পেরেছিলেন তাঁদের মধ্যে দীনেশ মজুমতার এবং সুভাষ চক্রবর্তী প্রয়াত, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য রীতিমতো অসুস্থ। একমাত্র বিমান বসুই এখনও সেদিনের গৌরবের সাক্ষী হয়ে আছেন। ফলে তাঁকে এখন দলের আইকন হিসেবে গণ্য করা যেতে পারে। এদের সততাও প্রমাণিত। দলকে এরা দিয়েছেন কিন্তু দলের কাছ থেকে অন্যায়ভাবে কিছু আদায় করেননি, এমনটাই মনে হয়। সুভাষ চক্রবর্তী সম্পর্কে বিতর্ক থাকতে পারে। কিন্তু তিনি এক সময় দলের জন্য যে বিপুল সহায়তা দিয়েছেন তা কোনও মতেই ভোলা যাবে না। বাইরের লোক হিসেবে আমাদের এটাই মনে হতে পারে। বাইরে থেকে দেখে দীনেশ মজুমদার, সুভাষ চক্রবর্তী, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এবং বিমান বসুকে মান্য করেছেন এবং অনেকেই দলের সদস্য হয়েছেন সে প্রমাণ আছে। তাই এত সহজে কেবল বয়সের অজুহাত দিয়ে বিমান বসুকে বাদ দিলে তা আমাদের মতো বাইরের লোকজনেরও খারাপ লাগবে। মনে হবে, তবে দল কি সত্যিই নিজের ভালো চায় না ?
কোনও বামপন্থী পার্টিতে বয়সের হিসেব করা হয় না। বরং আদর্শ, দক্ষতার কথাই ভাবা হয়। যেমন – ফরওয়ার্ড ব্লকের ছিলেন অশোক ঘোষ। অনেক বয়স হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও অশোক ঘোষকেই ফরওয়ার্ড ব্লকের সমার্থক ভাবা হয়। আরএসপি-র ক্ষিতি গোস্বামীও ছিলেন সত্যিকার আদর্শবাহী মানুষ। তিনিও আমৃত্যু তাঁর দলের জন্যেই কাজ করে গেছেন, কোনও পুরস্কারের কথা না ভেবেই। তাছাড়া এক সময় বামপন্থী দলগুলিতে বহু অভিজাত পরিবার থেকে উচ্চশিক্ষিত ছেলেমেয়েরা আসতেন। সে কারণে দলগুলির ঔজ্জ্বল্য অনেক বেড়ে যেত। তাতে আকৃষ্ট হত অনেক ছাত্রছাত্রী ও যুবক যুবতি। বিমান বসুর মধ্যেও এখনও সেই ঔজ্জ্বল্য আছে। ফলে তাঁকে বাদ দিলে দল যে অনেকটাই নিপ্রভ হয়ে যাবে এবিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। সুভাষ চক্রবর্তীকেও এক সময় নানা বিতর্কের জন্যে দল ডেকে পাঠাত। কিন্তু কখনও তাঁকে বাদ দেয়নি। এই বাস্তব বুদ্ধিটুকু তখনও দলের ছিল। এখন সম্ভবত সেই শুবুদ্ধির দিকে আর নজর রাখা হচ্ছে না। অবশ্য এই মত একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে পুরোপুরি ব্যক্তিগত। রাজনীতি নিজের পথেই চলবে, সেটাও যেমন ঠিক তেমনই রাজনীতিকে মানুষের কল্যাণের পথে চালানোও যে কোনও দলের মিশন হওয়া উচিত।
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সম্পর্কেও একই কথা বলা যায়। তিনি বর্তমানে খুবই অসুস্থ। কামনা করব পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠুন এই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। কারণ, তিনি শুধু রাজনীতিরই লোক ছিলেন না। সংস্কৃতি এবং সাহিত্য ক্ষেত্রেও তাঁর উদ্যোগ এবং ঐকান্তিকতা লক্ষ্য করার মতো ব্যাপার ছিল। তিনি সুস্থ থাকলে বিমান বসুর সঙ্গে সঙ্গে তাঁর ঔজ্জ্বল্যও দলকে অনেকটাই সমৃদ্ধ করতে পারত।