নিউজ ওয়েভ ইন্ডিয়া: আচমকা বা আঘাতজনিত ব্যথা। তা যে ধরনেরই হোক না কেন যন্ত্রণাময়। তবে কিছু ডাক্তারি পরামর্শ মেনে চললে এর দ্রুত নিরাময়ও সম্ভব। ব্যথার রকমফের ও তার সমাধান নিয়ে সবিস্তারে News Wave India -কে জানিয়েছেন বেঙ্গালুরুর মনিপাল হাসপাতালের Spine (মেরুদণ্ড) বিভাগের প্রধান ও কনসালটেন্ট স্পাইন সার্জন ডাঃ বিদ্যাধর এস।
নিত্যদিনের ব্যস্ততার মাঝে অনেকেরই ঘাড় এবং কোমরের নিচের অংশে ব্যথা হয়। কাজের চাপে অনেকেই হয়তো ওই ব্যথাকে গুরুত্ব দিতে পারেন না। পরে দেখা যায় সেই ব্যথা সইতে সইতে তা হয়তো আরও বড় কোনও সমস্যায় দাঁড়িয়েছে। তাই শরীরের অন্যান্য সমস্যার মতো সময়মতো গুরুত্ব দিতে হবে ব্যথাকেও। তা সে যত কমই হোক না কেন। অন্যথায় এটি আপনার জন্য বড় বিপদ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই প্রথমে জেনে নেওয়া দরকার ব্যথা আসলে কি ?
চিকিৎসক বিদ্যাধর বলেন, শরীরের অন্তর্নিহিত আঘাত বা ক্ষতির কারণে ব্যথা অনুভূত হয়। এটা একটা লক্ষণ মাত্র। কোনও রোগ নয়। কাজেই ব্যথাকে শত্রু মনে না করে যাতে সেখানে আর কোনওরকম আঘাত না লাগে সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে।
ব্যথা সম্পর্কে আরও অনেক তথ্য দিয়েছেন বিশিষ্ট এই চিকিৎসক। জানান, ব্যথা হচ্ছে শারীরিক আঘাত বা সম্ভাব্য আঘাতের মানসিক বহিঃপ্রকাশ বা অভিব্যক্তি। ব্যথা দুই ধরনের হয়ে থাকে। যেমন – ১) শারীরিক আঘাত বা চোট, ২) মানসিক অবসাদ যেমন- দুশ্চিন্তা, উদ্বেগ, ভয় এবং চরম আবেগ ইত্যাদি থেকেও ব্যথা হয়। তাই মানসিক চাপ থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
তাহলে এই ব্যথা কীভাবে সারানো যায় ? ডক্টর বিদ্যাধর বলেন, মানুষের দেহ যে কোন ক্ষয় বা আঘাতকে প্রাকৃতিক উপায়েও সারিয়ে তুলতে পারে। কিন্তু এতে তিন মাস সময় লাগে। এবং দেখা গেছে 90 শতাংশ মানুষের ব্যথা প্রাকৃতিক উপায়ে সেরেও গেছে। কিন্তু সমস্যা হল আমাদের অনেকেরই ধৈর্য কম। তাড়াতাড়ি ব্যথা সারাতে অন্যান্য বিকল্প পথ আর কী কী খোলা আছে তা অনুসরণ করে থাকি অনেকে। ফলে আমরা শরীরের আঘাতকে প্রাকৃতিকভাবে সারার সুযোগই দিই না।
তাই সতর্কতা হিসেবে তাঁর পরামর্শ, সক্রিয় বিশ্রামই তাড়াতাড়ি সুস্থ হবার বিশেষ উপায়। তাই দুই দিন বিশ্রাম নিন। তবে তার বেশি সময় বিছানায় বিশ্রাম করবেন না। আর লাম্বার বেল্ট বা নেক কলার সাত দিনের বেশি ব্যবহার করবেন না। এতে ট্রাঙ্ক বা ঘাড়ের পেশির ক্ষয় হয়। আরও বলেন, ফিজিওথেরাপি বা ব্যথার ওষুধ প্রকৃতিগতভাবে সুস্থ হতে দেবে না। তাই বিশেষ প্রয়োজনে চাহিদা অনুযায়ী বেদনানাশক ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে।
চিকিৎসকের কথায়, দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে ঘাড় ও পিঠের ব্যথায় ভুগছেন এমন বহু রোগীকে পরীক্ষা করা হয়েছে। দেখা গেছে যে তাঁদের মধ্যে 80 শতাংশ রোগীই মানসিক অবসাদ থেকে বেরিয়ে আসতে পারলে অনেকটাই সুস্থ হয়ে যাবেন অর্থাৎ ব্যথা উপশম হবে।
ধূমপানের সঙ্গে ব্যথার কি কোনও যোগ আছে ? উত্তরে তিনি বলেন, ঘাড় ও পিঠের ব্যথার সঙ্গে ধূমপানের সরাসরি সংযোগ রয়েছে। এমনকী ডেস্ক ডিজেনারেশনেও ধূমপানের ভূমিকা রয়েছে। তাই ধূমপায়ীদের ধূমপান ত্যাগ করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
এছাড়া অত্যাধিক ওজন পিঠের ওপর চাপ সৃষ্টি করে এবং পিঠ ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে বলেও জানান চিকিৎসক।
তিনি এও জানান, অনেকের পিঠে ব্যথা না থাকলেও কোনও না কোনও কারণে MRI করে অনেককেই স্লিপ ডিস্ক ও ডিস্ক ডিজেনারেশনের মতো নানা সমস্যায় ভুগতে দেখা গেছে। এই MRI হল একটি অতি জরুরী পরীক্ষা। একবার এই পরীক্ষা করলে ডাক্তারের পক্ষে ক্ষতিগ্রস্ত জায়গায় ক্ষতি কতটা, কী ধরনের ক্ষয় সেটা বুঝতে সুবিধা হয়। তবে MRI করা হল মানেই অপারেশন করতে হবে এটা কিন্তু ঠিক নয়। যদি কারও অপারেশন করার প্রয়োজন হয় তখন সেক্ষেত্রে এই পরীক্ষা পদ্ধতিতে সম্পূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়।
কী করা উচিত এবং কী করা উচিত নয়:
এক্ষেত্রে বিশিষ্ট চিকিৎসক Dr. Vidyadhara S-এর পরামর্শ, ব্যথা হলে নিজের সীমার মধ্যে থাকুন। আপনার শরীরকে বুঝুন। কারও কথা শুনবেন না। এমন কোনও কাজ করবেন না যাতে ব্যথা বেড়ে যায় এবং প্রকৃতিগতভাবে সেরে উঠতে বাধার সৃষ্টি করে। তাই কতদিন থেকে অসুখের লক্ষণগুলো দেখা যাচ্ছে তা নির্ধারণ করতে হবে। মনে রাখতে হবে তা। খুব বেশিদিনের ব্যথা হলে ক্ষতির পরিমাণ বাড়বে এবং আস্তে আস্তে স্নায়ুর মৃত্যু ঘটবে। এক্ষেত্রে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের দুর্বলতা বিশেষ করে পায়ের দুর্বলতা বাড়বে বা প্রকাশ পাবে। আর তিনমাস ধরে কোনও কাজ করতে গেলে অসহ্য যন্ত্রণা বা ব্যথা অনুভব করা, কাজ করার ক্ষমতা হারানো, এককথায় কাজ করার ক্ষমতা ও ব্যক্তির প্রত্যাশিত ক্ষমতার মধ্যে ফাঁক তৈরি হলেই চিকিৎসকের পরামর্শ মতো চলতে হবে।
অবহেলিত পিঠ বা ঘাড়ের ব্যথার প্রাকৃতিক ইতিহাস অনুযায়ী, পিঠ বা ঘাড়ের ব্যথা অনিয়মিতভাবে ঘটে থাকে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রাকৃতিক নিয়মে নিরাময় ক্ষমতা কমে যায়। কাজেই ব্যথা বেড়েই চলে ঝুঁকির পরিমাণও বাড়তে থাকে। এটা বুঝতে হবে যে, মেরুদন্ড 33টি হাড় নিয়ে গঠিত এবং প্রতি দুটো হাড় তিনটি জয়েন্টের দ্বারা একে অপরের সঙ্গে যুক্ত। এই জন্য আমরা চলাফেরা করতে পারি। যদি কোনও কারণে এরা জ্যাম হয়ে যায় বা সক্রিয় না থাকে তাহলে আমরা কোনও মতেই চলাফেরা করতে পারব না এবং এক্ষেত্রে অল্প আঘাতে বা ঝাঁকুনিতে হাড় ভেঙে যেতে পারে।
ব্যথা উপশমে যোগব্যায়াম কতটা কার্যকর ? চিকিৎসক বিদ্যাধরের কথায়, যোগব্যায়াম (Yoga) পিঠ বা ঘাড়ের ব্যথা নিরাময় করার সবচেয়ে ভালো প্রাকৃতিক উপায়ে বলে বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। কিছু কিছু যোগব্যায়াম মেরুদণ্ডকে নমনীয় করে তোলার পাশাপাশি চাপ কমায়। তাই কিছু যোগব্যায়াম (শারীরিক ও মানসিক) ঘাড় ও পিঠের ব্যথা সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে। তাই মেরুদন্ডের সব জয়েন্টগুলোকে সচল রাখতে প্রতিদিন নিয়মিত যোগ ব্যায়াম করা যাতে পারে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মেনে।